প্রকল্পের মাটি কাটার ন্যায্য মজুরি চেয়ে বিপাকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক

প্রতীকী ছবি
জীবনের কঠিন সময় পার করছে 'দৈ খাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ও স্কুলের প্রায় সব শিক্ষক। প্রায় এক দশক থেকে বিনা বেতনে দুর্গম চর-দ্বীপ চরের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। স্কুলের কেউই এমপিও ভুক্ত নয়। ছাত্র ছাত্রীদের আয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার। হাজারও কষ্টেও শিক্ষকতা পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্ত বৈশ্বিক করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশের স্কুলের সাথেও তাদের স্কুলও প্রায় দেড় বছর থেকে বন্ধ। এতে চরম বিপাকে পড়েন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সংসারের অভাব লেগেই আছে। সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে আত্মমর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে নুরুল ইসলামের মত আরো চার শিক্ষক কাজ নেন সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে। কিন্তু সেখানেও তারা প্রতারিত হয়েছে। পাননি ন্যায্য মজুরীও। এর প্রতিকার চেয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তাদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ঘটনাটি ঘটেছে জেলার উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নে।
জানা গেছে, গত ৯ বছর আগে দূর্গম চরাঞ্চল ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ১০ জন শিক্ষক নিয়ে 'দৈ খাওয়ার চর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী করে আসছে। শুরু থেকেই এসব শিক্ষকরা বিনা বেতনে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান করে আসছে। ছাত্রছাত্রীর আয়ে চলে তাদের বেতন। আর শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে জাবিকা নির্বাহ করে তারা। কিন্তু করোনা কালীন সময়ে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলে, জীবনের প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামসহ তার বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ নেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই ধাপে ৮০ দিন কাজ করে তারা। ২'শ টাকা মজুরি হারে তাদের ১৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। গত ৩০ জুলাই ওই ইউনিয়নে শ্রমিকদের মজুরির টাকা বিতরণ করা হয়। কিনতু তারা পুরো টাকা পায়নি।
নুরুল ইসলাম জানান ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মজুরির টাকা নিয়ে বের হতেই বারান্দায় বসে থাকা আলী হোসেন, ইউসুফ আলী ও আয়নাল হক মৃধা ওই ৩ ব্যক্তি উপকারভোগিদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক ৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেয়। আমি সহ আমাদের শিক্ষকরা চার হাজার করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, ইউসুফ আলী গংরা নানান হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। সেই সাথে তারা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর নির্দেশে টাকা তুলছি। তারা জীবনের হুমকি দিতে থাকে। নিরুপায় হয়ে তিনিসহ তার স্কুলের শিক্ষক মনসুর আলী, শাহীন আলম, শহিদুল আলম ও, শহিদুল ইসলাম তাদের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিতে বাধ্য হন। পরে অসহায় এই শিক্ষকরা তাদের প্রদেয়ও ২০ হাজার টাকার ১০ হাজার টাকা ফেরত চেয়ে হাতে পায়ে ধরলেও মন গলেনি ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের। বরং তারা উল্টো তাদের হুমকি দেন।
নুরুল ইসলাম আরো জানানা গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে একটি মোবাইল নাম্বার থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিচয় দিয়ে অশ্লীল গালাগালি সহ আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে থাকেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে করেছি। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে, জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষক কতটুকু অসহায় হলে শ্রমিকের কাজ করতে পারেন। আর তাদের ন্যায্য মজুরি জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঘৃণিত। শুধু এসব শিক্ষকদের নয়, সেখানে বেশিরভাগ উপকারভোগির কাছ থেকে একইভাবে প্রতিজনের কাছ থেকে ৪ হাজার করে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাই। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করব।
পাঠকের মন্তব্য