ইউটিউব চ্যানেল বেচাকেনা নামে প্রতারণা; খোয়ালেন অর্থ

প্রতারক এইচ আর রাজিউল
প্রতি নিয়ত আমরা আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য অনলাইনে কিনতে অভ্যস্ত। সে হোক না যেন কোন পণ্য। এর এই ই-কমার্স বা অনলাইন মার্কেটিংকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তিরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
তাইন নামের এক যুবক একজন ভিডিও এডিটর এর কাজ করেন। তিনি ফেসবুকে (https://m.facebook.com/hr.rajiul.58) দেখলেন একটি ইউটিউব চ্যানেল বিক্রয় করা হবে এমন একটি বিজ্ঞাপন। যার মূল্য ১০ হাজার টাকা। শর্ত প্রথমেই দিতে হবে ৩ হাজার টাকা।
সেই প্রলোভনে ইউটিউব চ্যানেলটি ক্রয়ের জন্য তাইন নামের যুবক 01879-085576 মোবাইলে নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পাওয়ার পরপরই তাইনকে ব্লক করে দেয় HR Rajiul নামের সেই প্রতারক। প্রতারক এইচ আর রাজিউল ফেসবুকের topbd buy & sell group এসে একটা পোষ্ট দিয়েছিল তার একটা ইউটিউব চ্যানেল সেল করার জন্য।
প্রজন্মকণ্ঠকে তাইন জানান- আমি তাকে ইনেবক্সে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম এবং চ্যানেলের লিঙ্ক চাই। সে আমাকে লিঙ্ক দেয়। চ্যানের টা ছিল- https://www.youtube.com/c/EasyLifeBanglaa/featured আমার কাছে ভালোলাগে এবং তার সাথে কথাও হয়। তিনি ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করবে বলে। আমি ১০ হাজার টাকা রাজি হই। আমি তাকে ফোনে বলেছিলাম আপনার payoneer account আছে কি না। যদি থাকে তবে আমি তাকে ডলার দিতে চাই। সে বলে এসব তিনি বোঝেন না। আমি বললাম তাহলে fiverr market place এ আমি আপনাকে অর্ডার দেই। সেটা সব থেকে নিরাপদ। কারন, আমি ফাইবার মার্কেটপ্রেসে কাজ করি। তাকে এটাও বলা হল ফাইবার মার্কেটপ্লেসে আরো একজন same একই চ্যানেলটা আমার কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল। এই কথাও উনাকে বলি। উনি নানান কথা বলে পাশ কাটিয়ে দিল। যাইহোক- আমি বললাম টাকা কিভাবে দেব। সে বললো ৫ হাজার টাকা আগে পাঠাতে, যদি আমি ৫ হাজার টাকা পাঠাই তবে সে আমাকে gmail+password দিবে। আমি বললাম এর আগেও অনেক ধোকা খেয়েছি। ৫হাজার অনেক টাকা। এটা কিভাবে সম্ভব; আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করবো- যদি আপনিও টাকা মেরে দেন ? সে আমায় নানান কথা বললো।
তারপর চ্যানেল সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলাম, সে বললো সেটা উনার নিজের চ্যানেল। আমি তাতে ৩দিন টাইম দেই, টাকা হাতে পাওয়ার জন্য। ২/১১/২১ তারিখ সকালে আবারো সেই গ্রুপে একই পোষ্ট দেখি। তার নাকি টাকার খুব দরকার তাই চ্যানেলটা সেল করবে। মনে একরকম বিশ্বাস জন্মালো। তাকে ফেসবুকে ম্যাসেজ দিলাম টাকা রেডি হইছে আপনি দিবেন চ্যানেলটা ? সে বললো এতদিন দেরি করবেন টাকার জন্য। পরে বলে ৫ হাজার টাকা পাঠাতে। আমি এত টাকা পাঠাতে রাজি হই না। আমি বললাম আপনি আমায় বিশ্বাস করে দিতে পারেন। আমি সাথে সাথে ফুল টাকা পাঠিয়ে দিব। না দিলে মামলা করবেন আমার নামে। সে রাজি হয় না। অবশেষে বলে ৩০০০ টাকা দিতে এবং বিশ্বাসের জন্য তার পাসপোর্ট আর আইডি কার্ড আমায় দিবে। তবুও আমার কেমন জানি লাগছিল। তার ফেসবুকে গিয়ে দেখলাম আমার friend request accept করেনি। তাকে accept করতে বললাম। কারন কিছু দেখা যাচ্ছিল না profile lock করার কারনে। পরে দেখলাম ভালই। নির্বাচন নিয়ে অনেক পোষ্ট করেছে। এক পর্যায়ে আমি তার ঠিকানা জিজ্ঞেস করলাম। সে আমায় বললো রাজশাহী বাঘমারা। তখন আমি রাজশাহী হেল্প গ্রুপে একটা হেল্প পোষ্ট দেই। যে রাজশাহী বাঘমারা কেউ থাকলে আমায় একটু সাহায্য করার জন্য। অনেকেই কমেন্ট করে। দুই একজনের সাথে কথা বলি। তারা বাগমারা গ্রুপে পোষ্ট দেওয়ার কথা বলে। তারপর থেকে ছেলেটা অনেকবার ফোন দেয়া শুরু করে। ৩০০০ টাকা আমি পাঠাবো কি না ? আমি বলি ভাই, এখনো আমার সন্দেহ হচ্ছে। সে বলে বিশ্বাস করতে এবং এটাও বলে পবিত্র কোরআনের কসম আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবো না। এটা শুনে ভাবলাম হয়তো সত্যিই বলছে। নয়তো একজন মুসলিম হয়ে এতবড় কসম কাটবে ? আমি বললাম বিশ্বাস কললাম, পাঠাচ্ছি । পাঠাতে দোকানে গিয়ে এক লেট হয়েছিল, এটার জন্য বার বার ফোন দিচ্ছিল আমি কেটে দিচ্ছিলাম। আমার বিকাশ নাম্বারে টাকা ভরি এবং তার কল ধরি। সে বলে এত দেরি করেন কেন, আমি বললাম এখন টাকা দিলে কত্ষনের মধ্যে gmail+pass দিবেন। সে বলে আমার ফোনে চার্জ প্রায় শেষ। তবুও ২ মিনিটের মধ্যেই gmail+pass দিব। বিশ্বাস করে ৩০০০ টাকা পাঠালাম। সে আমাকে একটা রবি বিকাশ নাম্বার দিল এবং সেই নাম্বারে কল দিতে বারন করলো। আমি পাঠিয়ে দিলাম। ৫ মিনিট পর বললো -পাঠাইছে। আমি Bkash এর screenshot দিলাম। তারপর থেকে কোন রিপ্লাই আসে না। অনেকক্ষন পর বললো বাসায় গিয়ে দিচ্ছি।
আমি বললাম, আমি ২মিনিটের কথা বলছিলেন এখন লেট করেন কেন ? কখন দিবে আবার বলি। সে বলে ৩০ মিনিট পর। এই বলে ফোন অফ ! ভাবলাম চার্জ নাই বলেছিল, সেজন্য হয়তো বন্ধ দেখাচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যাই। তারপর রাত ১২টার সময় হঠাত ঘুম ভেঙে যায়, তখন দেখি সে ফেসবুকে অনলাইনে আছে । আবার ম্যাসেজ দেই। সে বলে আরো ২০০০ পাঠাতে, তারমানে ৫০% দিতে হবে। আমি বলি এটা তো চুক্তি ছিল না। সে বলে ২০০০ না দিলে দিবে না। আমি বললাম ৩০০০ দিছি ওটা ফেরত দিতে। সে রাজি হয় না। আমি নাকি তাকে অনেক অপেক্ষা করিয়েছি। পরে দেখি সে আমায় ফেসবুক থেকে Unfriend করছে। আমি বলি এটা করছেন কেন ? কোন উত্তর দেয় না। শুধু বলে ৫০% দিতে হবে তারপর gmail+pass দিব। আজ দেখি সে আমাকে block দিয়েছে। এখন আমি প্রশাসনে সাইবার ক্রাইম ইউনিট সহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পাঠকের মন্তব্য