মাঙ্কিপক্স নিয়ে বাংলাদেশের বন্দরগুলোয় সতর্কতা জারি

মাঙ্কিপক্স আতঙ্ক

মাঙ্কিপক্স আতঙ্ক

বিশ্ব মহামারি করোনার পর এবার নতুন ভাইরাসবাহিত রোগ মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। ইতোমধ্যে অন্তত ১২টি দেশে ৮০ জনেরও বেশি লোকের শরীরে এ রোগের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। 

এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর প্রবেশ ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব আন্তর্জাতিক বিমান,নৌ ও স্থল বন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে এটা নিয়ে আপাতত আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এরই মধ্যে দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরকে এ ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অসুস্থ কোনো ব্যক্তি কিংবা সন্দেহভাজন কেউ নজরে এলে তাকে শনাক্ত করে আইসোশেলনে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত তাকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে।

মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে ভারতের বিমাবন্দরগুলোতে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক হোসেন গনমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে এটি যেভাবে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সে ক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা ব্যথা, ফুলে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা ও সাধারণ ক্লান্তি। জ্বর সারা শুরু হলে গোটা উঠতে পারে। সাধারণত তা মুখমণ্ডল থেকে শুরু হয়। এরপর শরীরের অন্যান্য অংশে, সাধারণত হাতের তালু এবং পায়ের তলায় ছড়িয়ে পড়ে। গোটায় খুব চুলকানি হতে পারে। সংক্রমণটি সাধারণত নিজে থেকেই চলে যায়। এটি ১৪ থেকে ২১ দিন স্থায়ী হয়। কেউ সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাংকিপক্সে আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসটি ত্বকের ক্ষত, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়েও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মাঙ্কিপক্সের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট টিকা নেই। তবে স্মলপক্সের টিকা এ ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও সাহায্য করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও (জানিয়েছে) এখন পর্যন্ত ইউরোপের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেনে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে। নিশ্চিত ৮০টি সংক্রমণ ছাড়াও আরো ৫০টি সন্দেহজনক সংক্রমণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবগুলো অস্বাভাবিক। কারণ, এগুলো অস্থানীয় দেশগুলোতে দেখা দিচ্ছে। ’মাঙ্কিপক্সের জন্য কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ওপর দায় আরোপের ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার ইউরোপের আঞ্চলিক পরিচালক হ্যানস ক্লাগ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রবেশ করছি...বড় জমায়েত, উৎসব ও পার্টি হবে এ সময়, আমি উদ্বিগ্ন যে সংক্রমণ বাড়তে পারে। ’

যুক্তরাজ্যে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছে  ৭মে। ওই রোগী এর আগে পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়া ঘুরে এসেছিলেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থার ধারণা, সেখান থেকেই ভাইরাসটি তাঁর দেহে এসেছে। পশ্চিম আফ্রিকায় এ রোগে  মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

পাঠকের মন্তব্য