ডেডবডি যখন সাবজেক্ট !

মোঃ গোলাম সারোয়ার, গবেষক ও কলামিস্ট
ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর আমি আর সোহাগ থাকতাম ফার্মগেইট তেজতুরি বাজার একটি ফ্ল্যাটে। সোহাগের তখন টার্গেট মেডিকেলে চান্স পাওয়া, আর আমার টার্গেট ভার্সিটি। তখন আমাদের ভিতরে আগুন ছিলো, ছিলো স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখতাম একদিন আকাশ ছুঁইবো।
সময় দ্রুত চলে গেছে। কোন ফাঁকে পৃথিবীর বয়স বেড়ে গেছে। সোহাগ আজ আকাশ ছোঁয়া ডক্টর। আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বুকটা ভরে গেছে। বন্ধু আমার অনেক বড় হয়ে গেছে।
একটি ব্যাপার আমার মনে গেঁথে গেছে। ধীরে ধীরে মানুষের ভ্যালু এড হতে হতে মানুষ আকাশ স্পর্শ করে। ডাক্তাররা কেমন মানুষ ? একটু শেয়ার করি।
কিছু তরুণ ডাক্তার একটি মানবদেহ নিয়ে কাজ করছে। আমি ভাবলাম, তারা কোন অপারেশন করছে। সে একই রুমে বন্ধু আমার জন্য নাস্তা আনালো। অন্য ডাক্তারগণ সহ আমরা নাস্তা খেলাম।
বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। ডাক্তাররা হইহুল্লোড করছে। আনন্দ করে কাজ করছে, কেউ শিখছে, কেউ শিখাচ্ছে। আসার সময় সোহাগকে বললাম, রোগীর কি অপারেশন হচ্ছে ? সোহাগ বললো, রোগী না তো। ডেড বডি !
আমিতো তাজ্জব ! ও মাই গড ! লাশের পাশে বসে এতক্ষণ খেলাম ! লাশের কাছে কাজ করে ডাক্তাররা কেউ কেউ আবার খেয়ে গিয়ে আবারো লাশের কাছে !
ছোটবেলায় কবরের কাছে গিয়ে খেতেও আমার ভয় করতো। এসব ডাক্তারদেরও নিশ্চয় ভয় করতো ছোটবেলায়। অথচ কি আশ্চর্যভাবে আজ তাঁরা ডেডবডিকে বলছে, সাবজেক্ট ! কি অবলীলায় সাবজেক্ট নিয়ে গবেষণা !
সোহাগকে নিয়ে আমি গর্ব করি। তুমি তোমার সেক্টরে বাংলাদেশের সেরা ডাক্তার হয়ে উঠবে একদিন সে দোয়া করি দোস্ত। তোমার প্রতিটি অপারেশন হয়ে উঠুক মানব মুক্তির এক একটি আর্ট। মানুষ ফিরে পাক নতুন জীবন।
আর সবচেয়ে গর্ব হলো, এত বড় হয়েও সেই আগের সোহাগ থেকে যেতে পারাতে। সভ্যতা তোমাকে মূল্যায়ন করুক।
ফেসবুক স্ট্যাটাস লিঙ্ক : Md Golam Sarwar
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
পাঠকের মন্তব্য