মুফতি আব্দুল হাই যেভাবে জঙ্গিনেতা; নেপথ্যের কাহিনী 

মুফতি আব্দুল হাই

মুফতি আব্দুল হাই

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা এবং আরও একাধিক মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজি-বি’র প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি আব্দুল হাইকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ বৃহস্পতিবার তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, মুফতি আব্দুল হাই নারায়গঞ্জ জেলার দেওভোগ মাদরাসায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদরাসায় ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সালে মাস্টার্স সমতুল্য দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন।

ওই বছরই ভারতের নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ১৯৮৬ সালে পুনরায় ভারতে প্রত্যাবর্তন করে। পরবর্তীতে ভারত থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান এবং সেখানকার একটি মাদরাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।

১৯৮৯ সালে একাধিক বাংলাদেশি ও বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিরানশাহ বর্ডার দিয়ে আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসেবে গমন করে। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি ও ৩০-৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশি এক জঙ্গির নেতৃত্বে একে ৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে আফগানিস্তানে গমন করে তাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করে দলটি। অতঃপর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন মুফতি আব্দুল হাই। আফগানিস্তানে থাকাকালে হুজি-বি অর্থাৎ হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ- নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যার আমির নির্বাচিত হন মুফতি আব্দুল হাই।

১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করেন মুফতি আব্দুল হাই। এরপর ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার একটি মাদ্রাসায় ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করেন। পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করত এবং মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান করত।

সে স্থানে তারা ৪ বছর অবস্থান করে এবং কৌশলে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। অতঃপর ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে ওই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুফতি আব্দুল হাই ‘জাগো মুজাহিদ’ নামক মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয় এবং তার অফিস খিলগাঁও থানাধীন তালতলা নামক স্থানে। পরবর্তীতে ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। মুফতি আব্দুল হাইকে ২০০০ সালে সেই পত্রিকার অফিস থেকে গ্রেপ্তার হয় এবং দুই মাস কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পান।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মুফতি আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ৭টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, যার মধ্যে ২টি মৃত্যুদণ্ড ও ২টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মোট ১৩টি মামলা রয়েছে তার নামে।

পাঠকের মন্তব্য