তারেক রহমানের রাজনীতি কেমন ছিলো ?

তারেক রহমান

তারেক রহমান

পাঠক মতামত : জনাব তারেক রহমানকে সামনা সামনি দেখা, হাত মেলানো এবং তার বেশ কিছু বক্তব্য সরাসরি শোনার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। তার বিষয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষন তুলে ধরছি। সবটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
 
স্বল্পবুদ্ধি : তার বিচার-বুদ্ধি গড়পড়তা সাধারণ মানের বলে আমার মনে হয়। এমন কোন কৌতুহলোদ্দীপক কথা বা কাজ তিনি করেননি যা থেকে মনে হয় তিনি বুদ্ধিমান। তার বক্তব্য মানুষ খুব মন দিয়ে শোনে তাও না। এমনকি লন্ডনের এক সভায় তাকে নিজেই বলতে হয়েছে - সবাই চুপ করেন কারন প্রচুর হই হুল্লোড় হচ্ছিল। আসলে সুন্দর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য বুদ্ধিমান হতে হয়। যেমন ধরুন, আপনি যদি কখনো লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বক্তৃতা দেখে থাকেন তাহলে দেখবেন উনি কথা বলা শুরু করার সাথে সাথে সবাই চুপ করে মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনে। বঙ্গবন্ধুর কথা বাদই দিলাম, শেখ হাসিনার বক্তব্যও মানুষ মোটামুটি মন দিয়েই শোনে।

জ্ঞানের অগভীরতা : তার কথায় এমন কোন বিষয়ের উপস্থিতি আমি পাইনি যার থেকে মনে হবে তিনি কোন বিষয়ে গভীর জ্ঞান ধারন করেন। রাজনীতি, সমাজ, ইতিহাস, খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অথবা অন্য যেকোন বিষয়ে তার কোন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাভাবনা আমার কখনো চোখে পড়েনি। এই প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার একটা সংবাদ সম্মেলনের কথা মনে পড়ছে। কোন একদেশ ভ্রমন করে আসার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক তাকে একটি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেন, কোন একটা বিদেশী তেল গ্যাস কোম্পানির বিষয়ে। শেখ হাসিনা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন - ঐ কোম্পানি কত সালে বাংলাদেশে এসেছিল। সাংবাদিক বলতে পারেন নি। তারপর শেখ হাসিনা ঐ কোম্পানি কবে এসেছিল, কবে তাদের সাথে কি চুক্তি হয়েছিল, কেন হয়েছে ইত্যাদি বহু বিষয় সাথে সাথে বলে দিলেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দেশের ছোটখাট বিষয়েও কি পরিমাণ জ্ঞান রাখেন - দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। এরকম বহু উদাহরণ আছে। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে জনাব তারেক রহমানের মধ্যে এরকম কিছু আমার চোখে পড়েনি।

পোশাক-পরিচ্ছদ : তিনি প্রায় সবসময় ব্লেজার পরেন, মাঝে মাঝে টিশার্ট। সর্বদা ফিটফাট থাকেন। এই উপমহাদেশে বড় রাজনীতিবিদরা সাধারণত পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে থাকেন, উনি সেদিক দিয়ে ব্যতিক্রম। এই ফিটফাট পোশাক উনাকে সাধারণ মানুষের কাতারে আসার অন্তরায় বলে আমার মনে হয়। খেটে খাওয়া মানুষের কাছে তাই উনার জনপ্রিয়তা নেই, তারা তাকে নিজেদের লোক ভাবে না।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা : বাঙালির হাজার বছরের মধ্যে গর্ব করার মত একটা বিষয় হল মুক্তিযুদ্ধ। এটা বাঙালির অত্যন্ত আবেগের জায়গা। তারেকের বাবা সেক্টর কমান্ডার, বিএনপির জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে তাই বিএনপির সাথে মুক্তিযুদ্ধের কোন বিরোধ থাকার কথা না। কিন্তু কোন একটা অজ্ঞাত কারনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে জামায়াতের সুরে কথা বলেন। উনি একসময় বলেছিলেন ছাত্রদল আর শিবির একই মায়ের পেটের দুই ভাই। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা তার মতে ৩ লক্ষ। লন্ডনে তার উপস্থিতিতে দলের এক নেতা বক্তব্যের শুরুতে "৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই" বলতেই তারেক রহমান তাকে থামান এবং তাকে দিয়ে ৩ লক্ষ বলান। প্রশ্ন হল, শহীদের সংখ্যা কমলে কি বিএনপির কোন রাজনৈতিক লাভ হয় ? না, তাহলে কি কারনে উনি এটা করেন তা উনিই ভাল জানেন, খুব সম্ভবত জামায়াতকে খুশি করতে।

সাংস্কৃতিক বিমুখীতা : যেকোন দেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজন মানুষের চিন্তা চেতনা বিকাশে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একজন জনপ্রিয় নায়ক, সঙ্গীতশিল্পী, কবি বা লেখক - তারা মানুষের চিন্তার জগতকে আলোড়িত করতে পারেন, পরিবর্তন করতে পারেন কারন মানুষ তাদের অনুসরণ করে। বুদ্ধিজীবীদের সাথে এরাও প্রভাবশালী নাগরিক সমাজের সদস্য। জনাব তারেক রহমানের মধ্যে কোন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বা শিল্পবোধ আছে এমনটা দেখা যায় না। উনার আশে পাশে কোন প্রথিতযশা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে দেখা যায় না। কোন বিখ্যাত লেখক বা শিল্পী বাংলাদেশে এলে ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত আনিসুল হকের বাসায় তার দাওয়াত অবশ্যই থাকতো। আবার দেশের সব কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পীর সাথে শেখ হাসিনার খুব ভাল সম্পর্ক, তিনি নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এই প্রসঙ্গে রেজওয়ানা চৌধুরির জন্মদিনে টিভি অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ফোন করে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চমকে দেওয়ার উদাহরনও দেওয়া যেতে পারে।

সুবিধাবাদী মনোভাব : প্রথাবিরোধী কোন কাজ তারেক রহমান কখনো করেননি। যেমন তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের নিয়ে কথা বলা, ধর্মীয় কোন স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলা কিংবা সামাজিক সংস্কার নিয়ে নিজস্ব কোন চিন্তাভাবনা তার মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।

মাইক্রোম্যানেজমেন্ট : নিজ দলে তিনি সবপর্যায়ের কমিটিতেই নাক গলান। এতে করে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ কাজ করে, তারা কার্যত নিষ্ক্রিয়ই থেকে যান। দলের তৃণমূলের নেতারা বিভ্রান্ত হন - কাকে খুশি করবে ভেবে।

বিরুদ্ধমতের প্রতি অশ্রদ্ধা : বিরোধী পক্ষ হোক তা দেশী বা বিদেশী- তাদের সম্পর্কে শ্রদ্ধামূলক কোন কথা তিনি কখনো বলেননি। ২০০১ মেয়াদের শুরু দিকে তিনি বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন, এই ঘটনায় তাকে সবাই উদার নেতা হিসেবে ভাবতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার, অবৈধ রাষ্ট্রপতি বলেছেন ফলে মাজার জিয়ারত যে তার ভন্ডামি ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
 
-নয়ন
কম্পিউটার প্রোগ্রামার

পাঠকের মন্তব্য