চিত্র নায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমার আজ শুভ জন্মদিন

চিত্র নায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা
জন্ম: ১১ জুলাই, ১৯৮১। পুরো নাম দিলারা হানিফ পূর্নিমা। সু-অভিনয় আর চমৎকার সাবলীল অনুষ্ঠান উপস্থাপনা। জনপ্রিয় তিনি সবখানেই। পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আজ ১১ জুলাই তার জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা পূর্নিমাকে।দিলারা হানিফ রীতা হলেন একজন অভিনেত্রী। সবার কাছে তিনি পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও জনপ্রিয়। পূর্ণিমার চলচ্চিত্র জগতে পথচলা শুরু হয়েছিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এ জীবন তোমার আমার ছবির মাধ্যমে। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না (২০১০) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তিনি তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
পূর্ণিমা অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে এফ আই মানিক পরিচালিত অপরাধ, লাল দরিয়া (২০০২), মতিউর রহমান পানু পরিচালিত প্রণয়ধর্মী মনের মাঝে তুমি (২০০৩), চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত যুদ্ধভিত্তিক মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও নাট্যধর্মী সুভা, এবং এস এ হক অলিক পরিচালিত প্রণয়ধর্মী হৃদয়ের কথা (২০০৬) ও আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮)। চলচ্চিত্রে পূর্ণিমার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রিয়াজের বিপরীতে। রিয়াজের বিপরীতেই ২৫টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
পূর্ণিমা ১৯৮১ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে।[ তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার পারিবারিক নাম দিলারা হানিফ ও ডাক নাম রিতা।
রিয়াজ ও পূর্ণিমা আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা চলচ্চিত্রের সেটে মহড়ায় ২০০৭-এ পূর্ণিমার চলচ্চিত্রে আগমন জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এ জীবন তোমার আমার দিয়ে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে, তখন তিনি ক্লাস নাইনে পড়তেন। সুন্দর চেহারার অধিকারিণী এই অভিনেত্রী শুরুতেই অভিনয় এর সাথে সাথে অসাধারণ শারীরিক সৌন্দর্য এর জন্য সবার মন জয় করে নেন। মিস ডায়না ও কাল্লু মামা ছায়াছবিতে বেশ খোলামেলা পোশাকে হাজির হয়ে দর্শকদের নজর কেরে নেন। বিশেষ করে মিস ডায়না ছায়াছবিতে নায়ক সেজান এর সাথে কালো মিনি স্কার্ট পরে উপস্থিত হয়ে উষ্ণতা ছড়ান অনিন্দ্য সুন্দরী এই অভিনেত্রী।
২০০৩ সালে মুক্তি পায় তার সব থেকে সফল ছবি মতিউর রহমান পানু পরিচালিত মনের মাঝে তুমি। এটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বাংলাদেশের সবথেকে সফল ছবির মধ্যে অন্যতম।
২০০৪ সালে রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস মেঘের পরে মেঘ অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছায়াছবি মেঘের পরে মেঘ ছবিতে অভিনয় করেন। এছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের গল্প রাক্ষুসী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র রাক্ষুসীতে ও অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০০৫ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাস্তি গল্প অবলম্বনে নির্মিত শাস্তি চলচ্চিত্র চন্দরা চরিত্রে অভিনয় করেন।
২০০৬ সালে বিশ্বকবির শুভাসিনী গল্প অবলম্বনে নির্মিত সুভা চলচ্চিত্রে তিনি নাম ভূমিকায় একজন বাক প্রতিবন্ধী চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তার অন্যতম বাণিজ্যিক সফল ছায়াছবি হৃদয়ের কথা মুক্তি পায় এবং এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী (নারী) বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৮ সালে তার অভিনীত আরেকটি বাণিজ্যিক সফল ছায়াছবি আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এর তারকা জরিপ ও সমালোচক শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী (নারী) বিভাগে মনোনীত হন। একই বছর তিনি মান্নার প্রযোজিত শেষ চলচ্চিত্র পিতামাতার আমানত-এ মান্নার বিপরীতে অভিনয় করেন।
২০০৯ সালে ওয়াকিল আহমেদ পরিচালিত কে আমি, মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত মায়ের চোখ ও স্বামী নাম্বার ওয়ান এবং এফ আই মানিক পরিচালিত আমার স্বপ্ন আমার সংসার ছায়াছবিতে অভিনয় করেন।এছাড়া এ বছর তিনি শুভ বিবাহ চলচ্চিত্রে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১০ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ওরা আমকে ভাল হতে দিল না ছায়াছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর পরাণ যায় জ্বলিয়া রে ছায়াছবির জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এর তারকা জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী (নারী) বিভাগে মনোনীত হন।
২০১১ সালে চিত্রনায়ক আলমগীর প্রযোজিত শাহ আলম কিরণ পরিচালিত মাটির ঠিকানা মুক্তি পায়। ছায়াছবিটি বাণিজ্যিক সফলতা লাভ করে। পাশাপাশি মুক্তি পায় আরেক চিত্রনায়ক সোহেল রানা প্রযোজিত আহমেদ নাসির পরিচালিত মায়ের জন্য পাগল। এটিও বাণিজ্যিক সফলতা লাভ করে ও পূর্ণিমা মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এর তারকা জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী (নারী) বিভাগে মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার চলচ্চিত্রটি বাণিজ্যিক সফলতা লাভ করে। বড় বাজেটের এ ছায়াছবিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক, সোহেল রানা, আলমগীর, ও শাকিব খান।
২০১৪ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত লোভে পাপ পাপে মৃত্যু চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এতে পূর্ণিমার বিপরীতে ছিলেন রিয়াজ। কন্যা সন্তান জন্মানোর পর তিনি অভিনয় থেকে বিরতি নেন এবং ২০১৬ সালে ফিরে আসেন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র বন্ধ দরজা দিয়ে।
পূর্ণিমা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি টিভি নাটকেও কাজ করেছেন।
২০১১ সালে বিশ্বকবির প্রয়ান দিবস উপলক্ষে তার ছোটগল্প ল্যাবরেটরি অবলম্বনে মাহবুবা ইসলাম সুমির পরিচালনায় ল্যাবরেটরি নাটকে সেজুতি চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া একই বছর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য ঈদের পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেন। নাটকগুলো হল আরিফ খান পরিচালিত ওই খানে যেও নাকো তুমি, শামীমা আক্তার বেবী পরিচালিত উল্টোধনুক, মাহবুবা ইসলাম সুমি পরিচালিত এখনও ভালোবাসি, এসএ হক অলিকের পরিচালনায় নীলিমার প্রান্তে দাঁড়িয়ে ও অমানিশা। ২০১৫ সালে ঈদ উপলক্ষে নির্মিত প্রেম অথবা দুঃস্বপ্নের রাত দিন নাটকে অভিনয় করেন। তুহিন হোসেন পরিচালিত এ নাটকে তার বিপরীতে অভিনয় করেন মোশাররফ করিম ও ইরেশ যাকের।
২০১৬ সালে প্রায় সাত মাসের বিরতির পর সেজান মাহমুদের লাভ অ্যান্ড কোং নাটকে অভিনয় করেন। এতে তার সহশিল্পী ছিল মাহফুজ আহমেদ। একই বছর সঙ্গীতশিল্পী হৃদয় খানের বিপরীতে এস এ হক অলিক পরিচালিত ফিরে যাওয়া হলো না টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন।
২০১৮ সাল থেকে তিনি তারকাদের নিয়ে আলাপচারিতা অনুষ্ঠান "এবং পূর্ণিমা" উপস্থাপনা করছেন। এই বছর তিনি মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত হ্যালো ৯১১-লাভ ইমার্জেন্সি, রাজিবুল ইসলাম রাজিব পরিচালিত রোদ্দুরে পেয়েছি তোমার নাম টেলিছবি এবং আবির খান পরিচালিত ম্যানিকুইন টেলিভিশন নাটকের অনুবর্তী পর্বে কাজ করে-
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
বিজয়ী : শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না (২০১০)
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার
বিজয়ী : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - মনের মাঝে তুমি (২০০৩)
বিজয়ী : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - হৃদয়ের কথা (২০০৬)
বিজয়ী : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (সমালোচক পুরস্কার) - ধোকা (২০০৭)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - শিকারী (২০০১)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ (২০০২)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (সমালোচক পুরস্কার) - মেঘের পরে মেঘ (২০০৪)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - টাকা (২০০৫)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (সমালোচক পুরস্কার) - শাস্তি (২০০৫)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - মনের সাথে যুদ্ধ (২০০৭)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (সমালোচক পুরস্কার) - আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - পরাণ যায় জ্বলিয়া রে (২০১০)
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (তারকা জরিপ) - মায়ের জন্য পাগল (২০১১)
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড চ্যানেল আই পুরস্কার
মনোনীত : শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী - ২০১১
পাঠকের মন্তব্য