'জীবন এক নিগূঢ় বিস্ময়কর চলচ্চিত্র'

এম গোলাম ছারওয়ার, গবেষক ও কলামিস্ট

এম গোলাম ছারওয়ার, গবেষক ও কলামিস্ট

এম গোলাম ছারওয়ার : মানুষের জীবনে কোনটি শ্রেষ্ঠ সময় তা মানুষ নিজেও জানেনা, যখন সে সেই সময়ের ভিতর দিয়ে যায়। ম্যাক্সিম গোর্কির শ্রেষ্ঠ সময় গিয়েছিলো 'শিশুকালে যখন তিনি তাঁর দাদীর সাথে পথে পথে ভিক্ষা করতো' সে সময়টা।

আজ অনেক কষ্টে রসুলবাগ জামে মসজিদটা খুঁজে বের করলাম। সেই আগের সেইপে আছে। এসএসসি পাশ করে আমি ঢাকায় আসি কোচিং করতে, কলেজে ভর্তি হবো বলে। সে সময় এই মসজিদের পাশে থাকতো আমাদের গ্রামের কামাল মামা। তিনি তখন কসাইটুলি স্কুলে পড়াতেন। 

আমি নিজে তখন থাকতাম ফার্মগেইটের কাছে তেজতুরী বাজার। সেখান থেকে আমি মাঝে মাঝে তাঁর কাছে আসতাম। 

উনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমি তখন গ্রামের দু'জন মানুষের কাছে স্বপ্নের কথা শুনতে যেতাম। একজন রসুলবাগের কামাল মামা। আরেকজন মিরপুর পীরের বাগের আলম ভাই। এ দুজন মানু্ষ আমাকে আগামির ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা বলতেন। রসুলবাগ আসলে কামাল মামা নিজে রান্না করে আমাকে খাওয়াতেন। 

এখানে আসলে রসুলবাগ মসজিদে আমি নামাজ পড়তাম। ইমাম সাহেব ছিলেন অত্যন্ত ভালো মানুষ। তাঁর কথা শুনলে হৃদয়টা ঠান্ডা হয়ে যেতো। আমি ছিলাম ঘর কাতুরে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যেতাম আমার হৃদয় পড়ে থাকতো বামনীতে আমাদের নিজের ঘরে।

আমার নামাজের প্রধান আকর্ষণ ছিলো মুনাজাত। মুনাজাতে আমি চোখ বন্ধ করে আমার মায়ের মুখ দেখতাম। আমার ছোট বোন নীলু, নিপু ছিলো তখন একেবারে শিশু। তাদের মুখ ভেসে উঠতো মনে।

ঢাকা শহরে আমি তখন নতুন। কি সুন্দর সুন্দর খাবার। প্রতিটি খাবার খাওয়ার সময় মায়ের কথা মনে পড়তো। দোকানে যখন সিঙারা ভাজতো আমার ইচ্ছে হতো এই সুন্দর সিঙারাগুলো যদি আমি বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম!

রসুলবাগ মসজিদ আগের মতোই আছে। আমার মা নেই। আমার সংগ্রামের প্রতিটি পথে ছিলো আমার মায়ের স্পৃহা অন্তরে অন্তরে। 

কোন পথে আমি কি ভেবেছিলাম আমার এখনো মনে পড়ে। সেসব পথ আমি এখন খুঁজে খুঁজে বের করি; মাইজদি থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা থেকে ঢাকা। প্রতিটি পথে আমি নিজের মুখোমুখি হই। নিজের সাথে নিজে কথা বলি। জীবন এক নিগূঢ় বিস্ময়কর চলচ্চিত্র। এখানে অবিরাম দীর্ঘশ্বাস।

আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। আমরা এখনো মাঝপথে। কিন্তু আমাদের সফলতা দেখানোর মতো আমাদের আর কেউ নেই।

ফেসবুক স্ট্যাটাস লিঙ্ক : Md Golam Sarwar
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট 

পাঠকের মন্তব্য