বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন  

বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪)

বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪)

বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) মাদকের কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ৫ জনকে খুঁজছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ইতোমধ্যে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তির মাদকের হাট থেকে এক নারীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ। র‌্যাব ফারদিন হত্যাকান্ডের রহস্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
  
র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই হত্যাকান্ডের কিলিং মিশনে অন্ততপক্ষে ১২ জন অংশগ্রহণ করেন। 

সেখানকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ রায়হান ওরফে ফেন্সি রায়হান ওরফে ফিটিং রায়হানের নেতৃত্বে ফারহানকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এমনকি রাত ৩টার পর ফারদিনের লাশ রায়হানের সহযোগী আরেক মাদক কারবারি শাওনের সাদা প্রাইভেটকারে করে শীতলক্ষ্য নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল। পরে সেই প্রাইভেটকারটি জব্দ করেছে পুলিশ। এদিকে বুধবার গ্রেপ্তারকৃত বুশরাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদালত।

সূত্র জানায়, ৪ নভেম্বর রাতে গোয়েন্দা সংস্থা ফারদিনের মোবাইলে দু’জনের মোবাইলে কললিস্ট পেয়েছে। ইতোমধ্যে র‌্যাব তাদের চিহ্নিত করেছে। একজন বাস চালক। অপরজন বাস হেলপার।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, চনপাড়া এলাকার মাদক কারবারি মনু ওরফে ময়নার আস্তানায় ফারদিনকে আনা হয়। পরে তাকে রায়হানের তিনতলা বাড়ির টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরই ফারদিনের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ফারদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে তার লাশ সাদা প্রাইভেটকারে করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি কেউ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ছিনতাইকারীরা দাবিকৃত টাকা না পেয়ে ফারদিনকে হত্যা করে। নাকি পুলিশের সোর্স ভেবে তাকে হত্যা করা হয়। এসব নানা বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব, ডিবিসহ পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তবে ফারদিন হত্যাকারীদের চিহ্নিত করেছে র‌্যাব। তাদের মধ্যে তিনজন তাদের কব্জায় রয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করার জন্য র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। তবে র‌্যাব দাবি করেছেন, ফারদিন হত্যাকা-ের মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। পরে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৪ নভেম্বর মধ্যরাতে রূপগঞ্জের চনপাড়া চিহ্নিত মাদক কারবারি রায়হানের তিনতলা বাসার সামনে ফারদিনকে মারধর করে রায়হানসহ ৫ জন। এ সময় তাদের আওয়াজ শুনে পাশে থাকা রায়হানের আরও ছয় সহযোগী এসে ফারদিনকে আঘাত করে। 

এক পর্যায়ে ফারদিন মারা যায়। এ সময় রায়হান তার বন্ধু শাওনকে বিষয়টি জানায়। পরে শাওন মধ্যরাতে নিজের সাদা প্রাইভেট কার চালিয়ে রায়হানের বাসার সামনে আসে। পরে ফারদিনের মরদেহ নিয়ে শীতলক্ষ্যায় নদীতে গিয়ে ফেলে দেয়।

রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকায় আলোর জ্যোতি ফার্নিচারের দোকান ও একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার গ্যারেজের মাঝামাঝি জায়গায় ফারদিনের মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ফারদিন সিএনজি করে ওই এলাকায় যেতে পারে বা কেউ তাকে জোরপূর্বক নিয়ে গেছে। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ সময় তার পকেট থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগে পাওয়া যায়। তাতে  ৩৫ টাকা ছিল।

বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বুশরাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার বুশরাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আতাউল্লাহর আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

পাঠকের মন্তব্য