গোপনীয় ব্যবসায়িক তথ্য বেআইনিভাবে ফাঁস ও প্রথম আলোর খবর

সজল রোশন

সজল রোশন

সজল রোশন : সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর এক খবরে বলা হয় নভেম্বর ২০২২ এ ইসলামী ব্যাংক থেকে ২৪৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কয়েকটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান| ঋণ নেওয়া এসব কোম্পানি ভোগ্যপণ্য আমদানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ফলে এসব অর্থায়নের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছে প্রথম আলো| 

প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয় ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বাস্তবে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন।

ব্যাংকের যে নথিপত্রের সূত্রে প্রথম আলো এ চাঞ্চল্যকর সংবাদ শিরোনাম করেছে তা (Highly confidential business documents) অতি গোপনীয় ব্যবসায়িক নথি| বৈধ কর্তৃপক্ষ (যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, আদালত) ছাড়া এধরণের নথিতে কারো আইনসম্মত প্রবেশাধিকার নাই| প্রথম আলোর উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে একজন পাঠকের এসব গোপনীয় নথিতে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে অথবা প্রথম আলোর খবরকে ধর্ম গ্রন্থের বাণীর মত নিঃশর্ত বিশ্বাস করতে হবে|

বাংলাদেশ সংবিধান (৪৩ নম্বর ধারা) অনুযায়ী ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনুমোদনহীন গোপনীয় ফোনালাপ অবলীলায় ফাঁস/সম্প্রচার করে| সভ্য দেশে গোপনীয় ব্যবসায়িক তথ্য বেআইনিভাবে ফাঁস করলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারে সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান| ইসলামী ব্যাংকের ফেসবুক পেজে দেয়া এক প্রতিবাদলিপিতে দাবি করা হয় দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিতের লক্ষ্যে ব্যাংকের নিয়মাচার মেনেই এ ঋণ দেয়া হয়েছে| এই ফেসবুক প্রতিবাদ করা ছাড়া বেশি কিছু ইসলামী ব্যাংকের করার নাই| প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন অনুযায়ীই শেষ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন, মামলার এজহার এবং বিচারের রায় তৈরী হবে|

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় দেশের সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় এবং দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি নির্দেশে ভোগ্য পণ্য আমদানিকারকদের প্রণোদনামূলক ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো| চাহিদা ব্যবস্থাপনা, দাম নিয়ন্ত্রণ এবং একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধে সরকার আমদানিকারকদের মধ্য প্রতিযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী| কিন্তু প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারকরা নতুনদের বা রাজনৈতিক প্রভাবহীন আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, অর্থ পাচারের ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে হয়রানি করায় অনেক ভোগ্য পণ্য আমদানি কারক প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে আসে| এতে ট্রান্সকম (প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মালিক) মেঘনা গ্রূপের মত বড় আমদানি কারকরা প্রতিযোগিতাহীন অগ্নিমূল্যের বাজারে একচেটিয়া মুনাফা করতে পারে|

"সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খাদ্যশস্য আমদানি" শিরোনামে প্রথম আলোর আরেক খবরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানকে উদৃত করা হয় যে "আমদানি কমে যাওয়া খাদ্য নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের। বেসরকারি খাতে খাদ্যশস্য আমদানিতে যাতে অপ্রণোদনা তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। ঋণপত্র খোলায় কোনো সমস্যা না হয়, সে দিকটা দেখা উচিত"| সরকার বেসরকারি আমদানিকারকদের প্রণোদনা দিলেও তা প্রতাপশালী ব্যবসায়ীদের বাইরে সাধারণ ব্যবসায়ীরা পায় না, তাই অবাধ প্রতিযোগিতা তৈরী হয় না| রাজনৈতিক প্রভাবহীন বা রাজনীতি নিরপেক্ষ ব্যবসায়ীরা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হয়|

গণমাধ্যমে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন দেয়া এবং ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের নামে মিথ্যা খবর প্রচার করা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার| তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মিথ্যা খবর এবং প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের চেয়েও বিপদজনক হচ্ছে প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং বড় ব্যবসায়ীদের দুর্বৃত্তায়ন| একটা দুর্নীতি পরায়ণ অর্থনীতিতে প্রশাসন এবং গণমাধ্যম কার্যত প্রতাপশালী ব্যবসায়ীদের দুর্বৃত্তায়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার| 

২০২২ সালে 'ভোক্তা অধিকার সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রায় একাত্তর টিভির বেশ কিছু সাংবাদিক।ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানে মেঘনা গ্রূপের (MGI) মালিকানাধীন একাত্তর টেলিভিশনের তৎপরতা চোখে পড়ার মত| মেঘনা গ্রূপ নিত্য প্রয়োজনীয় ভোক্তা পণ্য—ভোজ্যতেল, ডেইরি ফুড, বিস্কুট, মিনারেল ওয়াটার ইত্যাদি উৎপাদন এবং আমদানি করে| বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য আমদানি করে মেঘনা গ্রূপ দেশের শীর্ষ আমদানি কারক।

ভোগ্য পণ্যের বাজারের উপর প্রভূত্ব থাকায় বড় আমদানিকারক এবং উৎপাদনকারীরা খুব সহজেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে| বাজারে কৃত্তিম সঙ্কট তৈরী করে বাড়তি মুনাফা অর্জন করতে পারে, দাম বাড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে| অন্যন্য আমদানিকারক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের সমতা তৈরী হবে এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষিত হবে|

নিন্ম আয়ের মানুষদের কথা মাথায় রেখে অনেক উদ্যোক্তা কম খরচে উৎপাদন-আমদানির চেষ্টা করে এবং ব্যায় বহুল বিজ্ঞাপন-বিপণন প্রক্রিয়া বাইপাস করে কম দামে বিক্রির চেষ্টা করে কিন্তু ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং বড় ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা মিলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নাজেহাল করে| এতে অসম প্রতিযোগিতা তৈরী হয়| অকারণ জেল-জরিমানার ভয়ে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা আমদানি বা উৎপাদনে আগ্রহ হারায়| ছোট বা মাঝারী আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে মিথ্যা মামলা করে দুদক এবং কাস্টমস| তাদের গুদামে, কারখানায় বা তাদের পণ্য যেসব দোকানদাররা বিক্রি করে সেসব দোকানে অহেতুক অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা| মজুতদারি ও মূল্যবৃদ্ধির হাস্যকর অভিযোগে তাদের মোটা অংকের জরিমানা করে| পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের পক্ষে মজুতদারি বা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব| দেশের অসংখ্য পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ| তারা একজোট হয়ে বিক্রি বন্ধ রাখবে এমন আষাঢ়ে গল্প তারাই বিশ্বাস করে যাদের ব্যবসা অর্থনীতি সম্পর্কে সামান্যতম ধারণাও নাই|

রেডবুল বিক্রি, খুচরা মূল্য পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্যাকেটের গায়ে অর্গানিক না ন্যাচারাল লেখা ইত্যাদি হাস্যকর অভিযোগে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মোটা অংকের জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর| ইয়োরোপ আমেরিকায় সর্বত্র রেডবুল বিক্রি হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিরাট দুর্ভাবনার বিষয় রেডবুল| এই রেডবুল যে কারণে নিষিদ্ধ সে একই কারণে পেপসি-কোকাকোলাও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত| আবার রেড বুল যদি ট্রান্সকম বা মেঘনা গ্রূপ আমদানি করতো তাহলে তা নিষিদ্ধ হতো না| বিদেশী ব্র্যান্ডের আমদানি নিয়ে বড় বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে চর দখলের মত প্রতিযোগিতা| এ প্রতিযোগিতায় সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তারা ধনকুবেরদের লাঠিয়ালের ভূমিকা পালন করে|

আমদানি ও উৎপাদন ব্যায় বাড়ার কারণে পাইকার বা খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হয় এবং সর্বোচ্ছ খুচরা মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়| বাজারে কোথাও কম টাকায় পাওয়া গেলে একজন ক্রেতা বেশি দামে কিনবে কেন ? আর ক্রেতা না কিনলে লোকসান দিয়ে অর্থাৎ কেনা দামের চেয়েও কম দামে বেচতে হবে| একটা খাবারের দোকানের পরিবেশ এবং খাবার স্বাস্থ্যকর কি না এটা বোঝার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া লাগে না| একজন ক্রেতা নিন্ম মানের, অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনে কারণ বিশুদ্ধ এবং ভালো খাবার কেনার মত টাকা তার কাছে নাই| ভোক্তা অধিদপ্তরের মাননীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন তখন নিশ্চই হলের ক্যান্টিন বা মেসে খেতেন| ইউনিভার্সিটির হলগুলোর ক্যান্টিন বা মেসের পরিবেশ কি খুব স্বাস্থ্য সম্মত ? কিন্তু হল ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের খেতে হয় কারণ তাদের কাছে সোনার গাঁ হোটেলে খাওয়ার মত টাকা নাই| অভিজাত হোটেলের চাহিদা অনুযায়ী গরিবের হোটেল বন্ধ করে দিলে দরিদ্র দিন মুজুরদের না খেয়ে থাকতে হবে|

ইয়োরোপ আমেরিকায় যাদের স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ নাই তাদেরকে বিনামূল্যে ভালো খাবার দেয়া হয়| সরকারি, বেসরকারি, দাতব্য এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত পরিমান খাবার বিতরণ করে| বাংলাদেশে গরিবদের জন্য অত্যন্ত নিন্মমানের খাবার ত্রাণ হিসেবে দেয়া হয় কারণ ভালো খাবার ত্রাণ হিসেবে দিলে তা শেষ পর্যন্ত গরিবদের কাছে পৌঁছায় না| কিন্তু আমেরিকায় স্বল্প আয়ের মানুষদের খাবারের জন্য সরকার বিশেষ কার্ড (benefit card) দেয় যাতে তারা তাদের পছন্দের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় খাবার বিনামূল্যে সংগ্রহ করে নিতে পারে| পরে দোকানদার সরকারের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে নিবে| বাংলাদেশেও ভেজাল, নিন্মমানের অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি বন্ধ করতে হলে গরিবদের খাবারের বিল সরকারকে দিতে হবে|

যে সব বিষয় ক্রেতার পক্ষে যাচাই বাছাই করা সম্ভব এবং জনস্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি নয় এমন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সরকারী কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রত্যাশিত| বাজার অর্থনীতিতে ক্রেতার ক্ষমতা রাজার ক্ষমতার সমতুল্য (Customer is the king)| ক্রেতার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কোন সুযোগ নাই| ম্যাজিস্ট্রেট একজন দোকানদারকে জরিমানা করতে পারবে কিন্তু ক্রেতারা সে দোকান বন্ধ করে দিতে পারবে| ক্রেতারা না কিনলে সে দোকান বন্ধ হতে বাধ্য| আর Cost and Benefits হিসাব না করে কোন ক্রেতা কিছু কিনে না(—অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শাল)| ক্রেতারা বেশি দামে খারাপ পণ্য কিনতে বাধ্য হয় প্রতিযোগিতাহীন বাজারে| আর প্রতিযোগীদের জোর করে বাজার থেকে সরিয়ে দিতে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করে অসাধু সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তারা|

মেঘনা গ্রূপের অন্যতম প্রতিপক্ষ ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক মোস্তফা গ্রূপ বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত| "মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হয়ে জেলে পরিবারের অন্যদের নামেও ৩৭ পরোয়ানা" শিরোনামে দৈনিক কালের কণ্ঠের এক খবরে বলা হয় খেলাপি ঋণের মামলায় চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান হেফাজতুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সাবেক পরিচালক এবং চিনি, ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক।

একটা দুর্নীতি পরায়ণ অর্থনীতিতে ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায়ীদের রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম, পুলিশ, প্রশাসন, দুদক, এনবিআর, ভোক্তা অধিকার, ৱ্যাব, সিআইডি, ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কর্মকর্তাদের সাথে বোঝাপড়া রাখতে হয়| প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সরকার, প্রশাসন এবং গণমাধ্যম কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না কারণ তাঁরাই কার্যত সরকার, প্রশাসন এবং গণমাধ্যম| প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মুলা ও মুগুরনীতির কারণে সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তারা কার্যত তাদের নিজস্ব বাহিনীতে পরিণত হয়েছে|

ব্যবসা বান্ধব অর্থনীতিতে উদ্যোক্তাদের জাতীয় রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না| ডেমোক্র্যাট না রিপাবলিকান কারা ক্ষমতায় এতে ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য কিছু যায় আসে না| সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কোন কর্মকর্তার সাথে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক রাখা না রাখার কোন বিশেষ সুবিধা বা অসুবিধা নাই| সুনির্দিষ্ট অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট জরিমানা গুনতে হবে আবার সরকারি কর্মকর্তাদেরও জবাবদিহিতা আছে| আইন এবং আইনের প্রয়োগ মোটামুটি সবার জন্য সমান| সরকার এবং সরকারী কর্মকর্তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অসম প্রতিযোগিতা ও দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধ করা| 

এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কারণে সারা পৃথিবীর উদ্যোক্তারা আমেরিকায় এসে তাদের স্বপ্ন (American Dream) বুনছে | শূন্য থেকে বিলিয়ন ডলার কোম্পানি জন্ম নিচ্ছে |

মগের মুল্লুকের অর্থনীতিতে বিরোধী দলীয় বা রাজনীতি নিরপেক্ষ উদ্যোক্তারা সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যৌথ লুটতরাজের মুখোমুখি হওয়ায় তাতে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়| প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ক্ষমতা হারানোর পর তাদের পরিণতির কথা ভেবে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করে| বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এমন অনিশ্চিত এবং অরাজক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করে না| 

এখনকার পৃথিবীতে প্রতিটা রাস্ট্র বিদেশী বিনিয়োগ সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত| দুবাই, মালয়েশিয়া, তুরুস্ক বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিচ্ছে| বিনিয়োগ ও ব্যবসা বান্ধব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে মুক্ত বাজার তথা সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত বাজার|

লেখক- সজল রোশন
লিঙ্ক- Sajal Roshan Inc.

   


পাঠকের মন্তব্য