"আবার নতুন কোনো মানিককে দেখতে চাই না"

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সহকারী প্রক্টর ও পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে ছাত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগের তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে বিভিন্ন প্লেকার্ড নিয়ে এই মানববন্ধনে অংশ নেয় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। 

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রিতমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন এবং সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মানিকের ধর্ষণের কালো অধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচি বলেন, এটা আমাদের জাহাঙ্গীরনগর এর জন্য ভয়ংকর লজ্জার ব্যপার। তার সমস্ত পরিচয় ভুলে গিয়ে যদি শিক্ষক হিসেবে দেখি তাইলে যেখানে তিনি আমাদের নৈতিক শিক্ষা দিবেন সেখানে তিনি ধাবিত করছেন অনৈতিকতার পথে। তিনি যে কর্মকাণ্ড গুলা করছেন এবং তার নৈতিক স্খলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা চাই, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন দ্রুত যেন তদন্ত কমিটি গঠন করে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কখনো কোনো নিপীড়নকে প্রশ্রয় দেয় নি, দিবেও না। আমরা কোনো অনৈতিক শিক্ষককে চাই না, কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বে চাই না, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকে ব্যাহত করে। আমরা আবার নতুন করে কোনো মানিককে চাই না যে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করবে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কলঙ্ক মোচনের জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমরা কখনো দুর্নীতিবাজ, অনৈতিক কর্মকাণ্ডকারী ব্যক্তিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠাঁই দিব না।

দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, আমরা একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে শিক্ষার পরিবেশ হওয়ার কথা ছিল সুন্দর স্বাভাবিক। একজন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন যার নৈতিক চরিত্রের চরম স্খলন হয়েছে। সে নিজে শিক্ষক হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষক বানানোর প্রলুব্ধ করে তাদের সাথে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক, যৌন সম্পর্ক করছে। 

পদ পদবীর লোভ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে, বিভিন্ন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা আজকে এই মানববন্ধন এর মাধ্যমে বলতে চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৈতিক কারণে মাহমুদুর রহমান জনিকে সমস্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হোক এবং অবিলম্বে তদন্ত করে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, আজকে আমরা একটি লজ্জাজনক অধ্যায়ের স্বাক্ষী হয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজকে আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। যার নৈতিক অধঃপতনের কারণে আজকে আমরা এই পরিস্থিতিতে এসেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোনো সরকারি দলের নয়, কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। 

কিন্তু আমরা দেখতে পাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি, তিনি তার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট করেছে। তার যে কর্মকাণ্ড তিনি স্পষ্টত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লংঘন করেছেন। তার এ ধরনের ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে থাকা আরও আতংকের সৃষ্টি করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের নিশ্চুপ থাকাতে আমরা লজ্জিত। 

উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি ছাত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে জাবির সহকারী প্রক্টর ও পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং শিক্ষার্থীর সাথে আপত্তিকর ছবি এবং কল রেকর্ড বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। 

   


পাঠকের মন্তব্য