পাইকগাছায় বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা ও কয়লার চুল্লি

পাইকগাছায় বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা ও কয়লার চুল্লি

পাইকগাছায় বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা ও কয়লার চুল্লি

পাইকগাছায় বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট মুচলেকা দিয়ে এক মাসের মধ্যে কয়লা চুল্লি অপসারণের সময় নেয় মালিক গণ। সে সময়-সীমা সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হলেও অপসারণ তো দূরের কথা বরং প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে সমান তালে পুড়িয়ে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসকল অবৈধ ইটভাটা ও কয়লার চুল্লি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পর যেন একটু নড়েচড়ে বসেছে ইটভাটা ও কয়লা চুল্লি মালিকরা। অতঃপর হযবরলা। 

অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটা ও কয়লা তৈরীর চুল্লি গড়ে ওঠায় পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বিগত দিনে দৈনিক জন্মভূমি সহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পরিবেশ সুরক্ষায় উপজেলার চাঁদখালী অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর কারখানা বন্ধ করতে বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সে সময়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রট মোঃ আসিফুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম, জেলা সহকারী পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ, জেলা পরিদর্শক মোঃ মারুফ বিল্লাহ। 

এসময়ে ৬৯টি চুল্লীর মধ্যে ৫ টি ধ্বংস করা হয়। বাকী কয়লা চুল্লী গুলো মানবিক কারণে ১মাসের মধ্যে বন্ধ করার শর্তে স্থানীয়  ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াস মুচলিকা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেন। সে সময়-সীমা সাড়ে তিন মাস  অতিবাহিত হওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি কয়লার চুল্লি, আবারও নড়েচড়ে বসেছেন মালিকপক্ষ।

সরজমিনে দেখা যায়, একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২শ থেকে ৩শ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতি সহ সামাজিক বন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। কয়লা তৈরির সময় অবৈধ চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় মানুষের শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য কারণে এতদিন কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, অধিক লাভজনক হওয়ায় সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এই ব্যবসা করছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকাবাসী আরও বলেন, এ সকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। চুল্লি মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। চাঁদখালী চুল্লি কারখানার পাশে কয়েকটি ইট ভাটায় সমানতালে বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়।

ইটভাটা, কাঠের চুল্লিতে ব্যবহার, অধিক জনসংখ্যার চাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। বনজ সম্পদ রক্ষা করা না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। এবিষয়ে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে কয়লা চুল্লির মালিক লাচ্ছু গাজীর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাঁহার ম্যানেজার আঃ কাদের সরদার নম্বর দিতে নারাজ। চুল্লির আর এক মালিক মিঠু'র কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন কোন ব্যবসা বৈধ নয় সব ব্যবসায় অবৈধ, আমরা গরীব মানুষ সামান্য ছোট পরিসরে ব্যবসা করি। আমরা কোনো শিল্পপতি না।

খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রট মোঃ আসিফুর রহমান এব্যাপারে দৈনিক  জন্মভূমি'র এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি ঐখানে নতুন করে আরো কিছু চুল্লি তৈরি হয়েছে। আমরা গতবার যখন অভিযান চালাই আমরা অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিছু মহিলারা আমাদেরকে বাঁধা সৃষ্টি করেছিলো। আমরা শীঘ্রই অভিযান চালাবো এবং এমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যাবো, যে সবগুলো ভেঙ্গে দিতে পারবো। 

উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, এসব চুল্লির জন্য প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন নেই। উপজেলার ৬৯ টি কাঠের চুল্লির ভিতরে স্কাভেটর দিয়ে ৫টি ধ্বংস করা হয়েছিলো বাকিগুলো মানবিক দৃষ্টিতে তাদেরকে এক মাস সময় দিয়েছিলাম।সমস্ত কাঠের চুল্লি অপসারণ করার কথা কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা অপসারণ করেনি। আমরা ইতিমধ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি খুব দ্রুতই পুনঃরায় অভিযান চালাবো এবং সবগুলো চুল্লি অপসারণ করাবো। পরিবেশ অধিদপ্তর কে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

   


পাঠকের মন্তব্য