সিলেটজুড়ে অন্ধকার দেখছে মধ্যবিত্ত আয় বুঝে ব্যয় করা মানুষেরা

সিলেটজুড়ে অন্ধকার দেখছে মধ্যবিত্ত আয় বুঝে ব্যয় করা মানুষেরা

সিলেটজুড়ে অন্ধকার দেখছে মধ্যবিত্ত আয় বুঝে ব্যয় করা মানুষেরা

মুখে নেই হাসি, চোখে জল। প্রতিদিন জীবন জীবিকার সন্ধানে দিশেহারা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগণ। সিলেট জুড়ে অন্ধকার দেখছেন মধ্যবিত্ত আয় মুঝে ব্যয় করা মানুষেরা। করোনা মহামারীর পর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির ঢেউ দিন-দিন বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বাজারে প্রতিদিন কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে। 

করোনা মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে একদিকে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা,অন্য দিকে দেশের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট- দুইয়ে মিলে বেকায় দায় পড়ে গেছে 'আয় বুঝে ব্যয় করা মানুষ। আর এ প্রভাবটি পড়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা সিলেটে। যে পরিবারে প্রবাসী কোন উপার্জনকারী ব্যক্তি নেই, সে পরিবারের অবস্থা করুন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীরবে জীবিকা নির্বাহে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন অর্থের জন্য। অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষনে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারের প্রভাবে যতটা না দাম বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে স্থানীয় বাজারের। 

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। 

আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে গড়ে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৯ এরপর আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড বাংলাদেশ সম্পর্কে তার আর্টিকেল ফোর কনসালটিং পর্যবেক্ষণ শেষ করেছে। আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। মূলত রপ্তানি পুণরুদ্ধার, কোভিড মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও সময়োপযোগী মুদ্রানীতি নেওয়ার কারণে এমন প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করে আইএমএফ। 

অর্থনীতির অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের সামনে এই মুহূর্তে তিনটি ঝুঁকি আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। এ গুলো হলো করোনার অনিশ্চিত গতিপথ, টিকাদানের নিম্নহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, আধুনিক নীতি কাঠামো ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে বলেছে আইএমএফ। আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে পারে। বাংলাদেশের আর্থিক খাত সম্পর্কে আইএমএফের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের গতি বাড়ায় ব্যাংক খাতে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। তাই ব্যাংক খাতের তদারকি শক্তিশালী করার পাশাপাশি করপোরেট সুশাসন উন্নত করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। 

ব্যাংক খাতে বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে আইনি সংস্কারের পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া শেয়ার বাজারের উন্নয়নের সুপারিশও করা হযেছে। অন্য দিকে এমনিতেই মূলস্ফীতিতে ঊর্ধ্বগতি, নতুন করে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এটি আরও গতি পেয়েছে। কারণ জ্বালানির মূল্য বাড়ায় উৎপাদনশীল পণ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে তেল ও গম আমদানিতে খরচ বেড়েছে। এটি সরাসরি ভোক্তার ওপর চাপ ফেলে। সিলেট জুড়ে মানুষের আয় এখনো করোনার আগের পরিস্থিতিতে ফেরেনি। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতির চাপে কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ। এ জন্য মানুষের কষ্ট লাঘব দুর হচ্ছে না। 

একটি বেসরকারী গবেষনার হিসেবে দেখা গেছে, শহরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে সানেম বলছে, শহরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী গড়ে তাদের মোট খরচের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে। আর গ্রামীণ প্রান্তিক  গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তা ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিবিএস এ ক্ষেত্রে যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় এ হার অনেক বেশি। বিবিএসের হিসাবে শহর ও গ্রামের পরিবার তাদের মোট খরচের যথাক্রমে ৪৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ৫৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে। 

২০২২ সালের  ফেব্রুয়ারি মাসে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক গোষ্ঠীর গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার পাওয়া গেছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ১২ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে শহর ও গ্রামীণ এলাকার জন্য এ হার ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০২৩ সালে কি হবে দৈনন্দিন জীবনের আয়-ব্যয় কেমন হবে তা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে মধ্য আয়ের মানুষের মধ্যে।

   


পাঠকের মন্তব্য