শীতে কাপছে দেশ; পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি

শীতে কাপছে দেশ; পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি

শীতে কাপছে দেশ; পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি

কয়েকদিনের হিমেল হাওয়া ও জেঁকে বসা শীতে বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নআয়ের পেশাজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। যদিও রাজধানী ঢাকায় এই প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম। তবে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় বাইরের জেলাগুলোয় বিপর্যস্ত জনজীবন। গতকাল বুধবার পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিন ধরে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বেড়েছে কুয়াশার দাপট ও শীত তীব্রতা। দুপুরের আগে দেখা মেলে না সূর্যের। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়; যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলার খুব কাছে হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ হওয়ায় বরাবরই শীতের তীব্রতা বেশিই থাকে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত সাত দিন ধরে এ জেলায় তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। এদিকে শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালকসহ শ্রমজীবীরা। দৈনন্দিন আয় কমে গেছে দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষের।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, বৃহত্তর দিনাজপুরে শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত সেখানকার জনজীবন। গতকাল সকালে জেলাটিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে দিনাজপুরে হালকা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে আসতে পারে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী জানান, বুধবার সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৯টি পৌরসভায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তরে ইমেইলে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বুধবার সকাল ৯টায় রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অধিদপ্তর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরম কাপড়ের অভাবে শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে গ্রাম ও চরাঞ্চলগুলোতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয়রা। ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে। চাকিরপশার ইউনিয়নের অটোবাইকচালক রহিম বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডায় মোর হাত পা গুলা টাটপার নাগছে। মানুষ কাজকাম করতে পারছে না। তাই যাত্রীও কমে গেছে।’ মৎস্যজীবী রবি বলেন, ‘এল্যায় যে জাড় (শীত) বাহে, কাদোপানিতে নামা যায় না। শরীল শিংরি (শিউরে) উঠে।’

ঠান্ডায় স্থবির কুড়িগ্রামের জনজীবন। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কুয়াশায় পথঘাট ও প্রকৃতি ঢেকে থাকায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। 
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুর এলাকার রহিম মিয়া বলেন, শীত উপেক্ষা করে আলুক্ষেতের পরিচর্যা, বীজতলা তৈরিসহ নানা ধরনের কৃষিকাজ করতে হচ্ছে। ঠান্ডায় কাজ করতে গিয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। কুড়িগ্রাম দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৩৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

উত্তরের জেলা নীলফামারীতে মেঘলা আকাশ আর কুয়াশায় বুধবার সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। শীত বাড়ায় খেটে খাওয়া মানুষ বাইরে বের হতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর কোলঘেঁষা গ্রাম ও চরের মানুষজন বেশি বেকায়দায় রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় নীলফামারীতে ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়

   


পাঠকের মন্তব্য