শাসকেরা মেনসিয়াসের মনের মতো শাসক হয়ে উঠেন নি

এম গোলাম ছারওয়ার, গবেষক ও কলামিস্ট

এম গোলাম ছারওয়ার, গবেষক ও কলামিস্ট

এম গোলাম ছারওয়ার : ঝুনজি ছিলেন নিজে ভদ্রলোক। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষ সহজাতভাবেই মন্দ ! অন্যদিকে বিখ্যাত প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক ও ধর্মবিদ তাও মনে করতেন, মানুষের ভালো হওয়ার অনুশীলনের প্রয়োজন নেই। তাদের শুধু সহজাত, স্বাভাবিক এবং অনায়াস সদ্গুণকে গ্রহণ করতে হবে। 

চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক কনফুসিয়াস মূলত নীতিবাদী দার্শনিক ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে নীতিজ্ঞান। 

কিন্তু মানব প্রকৃতি নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী এবং পথ নির্দেশনামূলক মতবাদ দিয়ে গেছেন কনফুসিয়বাদের প্রচারক প্রাচীন আরেক চৈনিক দার্শনিক মেনসিয়াস। 
কনফুসিয়াস মানব চরিত্র নিয়ে বিশদভাবে এবং স্পষ্টভাবে বলে জাননি। সেটা বলে গেছেন মেনসিয়াস সহজভাবে এবং সোজাসুজিভাবে। 

মেনসিয়াস বিশ্বাস করতেন মানুষ জন্ম নেয় ভালোভাবে। মানুষের চরিত্র নষ্ট হয় সমাজের প্রভাবে। ইতিবাচক পরিবেশের অভাবে মানুষের খারাপ চরিত্রের জন্ম হয়। তিনি বলে গেছেন, যে ব্যক্তি তার মনকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারবে সে ইতিবাচক ফল পাবে। পথভ্রষ্ট মানব মনের সন্ধান লাভ করা ছাড়া শিক্ষা পদ্ধতি আর কিছুই নয়।

মেনসিয়াসের মতে, মানুষ সহজাতভাবেই উৎকর্ষিত। তিনি বলে গেলেন, মানুষের ভিতরে সৎগুণ আছে। কিন্তু মানুষকে এই গুণ আরো প্রখর করার জন্য অনুশীলন করে যেতে হবে। 

শাসকরা কি তাঁর কথা রেখেছিলেন ? না রাখেন নি। এখনো সে অর্থে পৃথিবীর শাসকেরা মেনসিয়াসের মনের মতো শাসক হয়ে উঠেন নি। মেনসিয়াস যা বিশ্বাস করতেন তাই কঠোরভাবে ধারণ করতেন। তিনি তাঁর সমকালীন পৃথিবীতে পরিবর্তন সৃষ্টির ব্যর্থতার হতাশায় প্রকাশ্য জীবন থেকে অপসৃত হন। তাঁর অন্তর্ধানে তাঁর কি সফলতা এসেছে ? এক অর্থে এসেছে। তাঁর সমকালীন পৃথিবীর শাসকদের কথা কেউ মনে রাখেনি। তাঁকে মনে রেখেছে পৃথিবী। তাঁর শিক্ষা চলবে অনন্তকাল। এটিই তাঁর অমরতা। এটিই একটি ভালো পৃথিবীর আশায় মানুষ লালন করবে। এটিই একজন শিক্ষাবিদের সফলতা। 

মেনসিয়াস মুখস্তবিদ্যার নিন্দা করতেন। তিনি বলতেন, যে একটি বইয়ের সবই বিশ্বাস করে সে আসলে কিছুই শিখেনি। তিনি প্রতিটি পাঠকে প্রশ্নের মুখোমুখি রাখতে বলেছেন। তাঁর মতে, শিক্ষাকে অবশ্যই মানব মনের সহজাত সুপ্ত গুণাবলিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। 

এটি জগতের সব শিক্ষককে মনে রাখতে হবে। শিক্ষক মানে শুধু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না, সব শিক্ষক; এমনকি ধর্মীয় শিক্ষকগণও। আধুনিক ইউরোপের প্রভাবশালী দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শুরু করেন ধর্মতত্ত্ব নিয়ে। আর কান্টের প্রথম জীবিকার উপায় কি ছিলো ? গৃহ শিক্ষকতা। জি, এক দুই বছর নয়। জীবনের প্রথম দীর্ঘ দশ বছর গৃহ শিক্ষকতা করেন 'Critique of Pure Reason(1781)' এর মতো বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক গ্রন্থের এই লেখক। 

বলছিলাম প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক মেনসিয়াসকে নিয়ে। মেনসিয়াস শাসকদের বলে গেলেন, একজন শাসককে প্রজাদের উদ্দেশ্যে শুধু ভালো ও জনহিতকর কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, শাসকগণ হবে জনগণের আজ্ঞাবহ।

আমরা আমাদের বর্তমান পৃথিবীর শাসকদের আহবান করবো, আপনারাও মেনসিয়াসের আহবানে সাড়া দিন। পৃথিবী আপনাদের মনে রাখবে।

ফেসবুক স্ট্যাটাস লিঙ্ক : Md Golam Sarwar
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট 

   


পাঠকের মন্তব্য