খুব ইমোশনাল আর সেন্টিমেন্টাল ছিলেন সালমান শাহ 

মিলি সুলতানা

মিলি সুলতানা

মিলি সুলতানা  : সালমান শাহ খুব ইমোশনাল আর সেন্টিমেন্টাল ছিলেন। একদিন শ্যুটিং থেকে ফিরে মুড খুব অফ ছিল তার। নরমাল দিনে বাসায় ফিরে আগে শাওয়ার নিতে ঢুকতেন। শাওয়ার শেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করতেন। চুলে জেল মাখতেন। চুলে সুন্দর ভঙিতে হেয়ার ব্রাশ ঘোরাতেন। শরীরে দামী পারফিউম মাখতেন। বাসায় যখন অবস্থান করতেন, নিজেকে নাইসলি প্রেজেন্ট করতেন। সেদিন সালমানের মুড অফ সামিরা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এড়িয়ে গেলেও কাজের মহিলা পারলনা এড়িয়ে যেতে। সালমানের জন্য মায়া মমতা ছিল গৃহকর্মীর মনে। সালমানকে খাবার দেবে কিনা 

জিজ্ঞেস করলে সালমান বললেন, "এখন খাবোনা। ক্ষিধে পেলে আমি নিজেই নিয়ে খাব।" সামিরাকে পাগলের মত ভালোবাসতেন সালমান। সামিরার বাবা জাতীয় দলের সাবেক উইকেটকিপার-অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা।সামিরার মা থাইল্যান্ডের নাগরিক। চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের সুপরিচিত বিউটি পার্লার লুসির কর্ণধার তিনি। সামিরাও ওয়েল ট্রেইন্ড বিউটি এক্সপার্ট ছিলেন। 

সালমানের মা নীলা চৌধুরী সামিরা ও তার  মাকে পছন্দ করতেন না। কারণ অনেকবার নাকি তিনি প্রমাণ পেয়েছেন, সামিরার মা তার মেয়েকে সালমানের মা বাবার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। মিসগাইড করেছেন। শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে সামিরা একসাথে থাকুক এটা কখনো চাননি সামিরার মা। সামিরার সাথে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠলে সালমান ক্ষেপে উঠেন। তাদের দাম্পত্য কলহ চরমে ওঠে। অনেকবার সালমানের সাথে প্রচন্ড বাদানুবাদ হয় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। সালমান স্ত্রীকে ফেরাতে পারেননি এ সম্পর্ক থেকে। সামিরাও সালমানকে কোনো কৈফিয়ত দিতে রাজি ছিলেন না। 

তবে সামিরার উগ্রমূর্তির অন্যতম কারণ ছিলেন শাবনূর। অনেকেই বলে,"সালমান সামিরার সংসারে শাবনূর যদি কালকেতু হয়ে না ঢুকতেন, তাদের সংসারে অশান্তি হতোনা"। শাবনূর খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সালমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান। শাবনূরকে নিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন সালমান। সামিরা একদিন সালমানের স্যুটকেসে শাবনূরের প্রাইভেট।ক্লোদস (Private clothes) দেখতে পান। সামিরার চাপের মুখে সালমান শাবনূরের সাথে তার সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। শাবনূরকে ভালোবাসার ভূত চেপে গিয়েছিল সালমানের মধ্যে। তাদের সম্পর্কের কারণে সামিরা অনেকবার রাগ করে চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিলেন। সালমান আবার সামিরাকেও ভালোবাসতেন। তাকে হারাতে চাইতেন না। সামিরার জন্য কান্নাকাটি করতেন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে। রাতে সামিরার জামাকাপড় বুকে চেপে ঘুমাতেন। তার পাগলামি দেখে ঢাকায় ফিরে আসতেন সামিরা। সালমানকে অবজ্ঞা করতে পারতেন না। কিন্তু শাবনূর ধারালো কাঁটা হয়ে সামিরার গলায় বিঁধে থাকলেন। তবে সালমানের মা নীলা চৌধুরী সম্পর্কে সাংঘাতিক অভিযোগ করেছেন সামিরা, "আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে নীলা চৌধুরীর আপত্তিকর সম্পর্ক নিয়ে ইমন (সালমান) ও তার বাবা নীলার উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন।" 

সামিরা দাবি করেছেন শাবনূরই তাদের সংসারে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। যার জন্য তিনি কখনোই শাবনূরকে ক্ষমা করতে পারবেন না। সামিরা কিছু হাস্যকর কথাও বলেছেন, তিনি এমন বহু ঘটনা জানেন। কিভাবে তার অনুপস্থিতিতে শাবনূর সালমানের বাসায় আসতেন। সামিরার কাপড় চোপড় ব্যবহার করতেন। সালমানের একটা ছবিতে শাবনূরের কস্টিউম ডিজাইনার ছিলেন সামিরা। সালমানের মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সালে সামিরা বিয়ে করেন সালমানের বন্ধু মোশতাক ওয়াইজকে। তিনি থাইল্যান্ডে ঘরসংসার পাতেন। মোশতাকের ঔরসে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সামিরা। কিন্তু ২০২১ সালে মোশতাককে ডিভোর্স দিয়ে তৃতীয় স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক ইশতিয়াক আহমেদকে। আজ  সালমান শাহ নেই। কিন্তু বাকিরা সবাই আছেন। শাবনূর তার জীবনের নোঙ্গর গেড়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। বর্ণহীন জীবন কাটাচ্ছেন। ছেলেকে নিয়ে একা জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

সামিরা জীবনের গতিময়তা তালাশ করতে গিয়ে আরও দুজন লাইফ পার্টনার নিয়েছেন। কিন্তু  বুকে হাত দিয়ে কি বলতে পারবেন তিনি সুখে আছেন?? বলতে গেলে সালমানকে তিনিই করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আজ শাবনূরের দিকে সকল দোষের আঙুল তুলে সামিরা তার নির্দয় অপরাধগুলো জায়েজ করতে চাচ্ছেন।

লেখক : মিলি সুলতানা
পরিচিতি : সুলেখক ও শব্দ চৈতন্যের কারিগর

   


পাঠকের মন্তব্য