ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ জানতে গিয়ে সাংবাদিক  লাঞ্ছিত

সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলাম

সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলাম

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরবাণী পাকুরিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে ধাক্কা দিয়ে ভূমি অফিস থেকে বের করে দেন।

বুধবার ( ২৫ জানুয়ারি) বেলা ১২ টা দিকে চরবাণী পাকুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে এ ঘটনায় ঘটে। ওই দিন রাত ৭ টা দিকে মেলান্দহ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক।

ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক ভোরের কাগজের ও আজকের পত্রিকার মেলান্দহ উপজেলা প্রতিনিধি। 

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান,বুধবার বেলা ১২ টা দিকে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, কে অভিযোগ করেছে তাঁর নামে মানহানি মামলা করব। আমার অফিসে সাংবাদিক আসলে ইউএনও অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।‌ অনুমতি নিয়ে এখানে আইছোস কি তোরা। পরে ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রশ্ন করলে চেয়ার থেকে উঠে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রকিব হাসান নয়ন বলেন,' বুধবার দুপুরে ভূমি অফিস কার্যালয়ে সামনে দিয়ে মেলান্দহ পৌর শহরে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় দেখি ভূমি কার্যালয়ে জমি সংক্রান্ত ও ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলছে। পরে ওই ভূমি অফিস কার্যালয়ে যাই আমারা। পরে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অসদাচরণ ও‌ তাঁর দরজা বন্ধ করে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দেন।'

ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাকিব আল হাসান বলেন,' ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলামের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগেই ঘুষ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে করেন মুক্তা বেগম নামে এক স্বামী পরিত্যক্ত নারী। গত বুধবার দুপুরে ভূমি অফিসে সামনে দিয়ে যাবার পথে দেখি বাকবিতণ্ডা  চলছে। পরে আমারা ওই ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই আমাদের সাথে অসদাচরণ ও লাঞ্ছিত করে বের করে দেন। ওই কর্মকর্তা বিরুদ্ধে ইউনিয়নের শত শত মানুষের অভিযোগ রয়েছে।'

আছমত আলী নামে আরেকজন জানান, কাজের জন্য ৫দিন ধরে ঘুরতেছি উনি শুধু ঘুরাচ্ছে একটি দাখিলি কাটতে ১৪০ টাকার জায়গায় ১৪০০ টাকা

মুক্তা বেগম নামে একজন অভিযোগ করে বলেন,' ৫ শতাংশ জমি খারিজ (নামজারি) করতে আমার কাছে থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে ছানাউল। পরে খারিজের কাগজ ইউএনও অফিস কাগজ নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ছানাউল আমার কাছে থেকে টাকা নিয়ে আমার সাথে অসদাচরণ করে।'

স্থানীয়রাও ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ করেন জানান,'চরবাণী পাকুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রুমে দরজা বন্ধ করে ঘুষ নেন। তাঁর কাছে কোন ধরনের কাজ নিয়ে গেলে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। ভূমি কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাঁর ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে মানববন্ধন করবেন বলেও জানান‌।'

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে চরবাণী পাকুরিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলাম বলেন, আমার সাথে কোন ঘটনা ঘটেনি এ বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

মেলান্দহ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহ জামাল বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সাংবাদিকদের জন্য দুঃখজন। ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে। ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা দিবো।

মেলান্দহ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা বলেন, 'এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ওই ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

   


পাঠকের মন্তব্য