বেরোবিতে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত  

বেরোবিতে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত  

বেরোবিতে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত  

মোজাম্মেল হক হৃদয়, বেরোবি প্রতিনিধি : প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে পদার্পণ করলেও বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও তীব্র আবাসন সংকটে ভুগছে বেগম রোকেয়া বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের আবাসন অপ্রতুলতার কারণে থাকতে হচ্ছে মেস,বাসা ভাড়া নিয়ে যার ফলে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

জানা যায়,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবহারযোগ্য হল মাত্র তিনটি।যার মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শহীদ মুখতার ইলাহী হল ছেলেদের জন্য বরাদ্দ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র হল শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। এসব হল মিলিয়ে সর্বোচ্চ সিট সংখ্যা ৯৩৭ টি। যার বিপরীতে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদের ২২ টি বিভাগের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।এর ফলে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে বলে জানা যায়। যা শিক্ষার্থী ও আবাসন অনুপাতে খুবই  কম।
  
অন্যদিকে, ২০১৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন নিরসন লক্ষ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল নির্মানের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৭ সালে কাজ শুরু করে পরের বছর জুনে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৬ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। 

এ সব সংকট এবং পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান করার ফলে নতুন শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেনা আবাসন সুবিধা।জানা গেছে,স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করলেও অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে হলে অবস্থান করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার ফলে অন্যান্য প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে মেস ভাড়া ও বাসা ভাড়া করে। অনেকের এসব মেস ও খাওয়া  খরচ দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।তাছাড়া নবীন শিক্ষার্থীদের হলে উঠার ব্যবস্থা না থাকায় নতুন অবস্থাতেই পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ।

এ বিষয়ে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ জানায়,প্রথম বর্ষে ভর্তি পর কোথায় থাকব,কোথায় খাব এসব বিষয় নিয়ে খুবই ভোগান্তির মধ্যে থাকতে হয়েছে যার ফলে প্রথমদিকের বেশ কিছু ক্লাসও মিস করতে হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে বাসা মালিকেরাও হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। অতিরিক্ত ভাড়া, অপরিচ্ছন্ন আবাসন, অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মেসে, বাসা ভাড়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের। ফলে তাদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সুবিধা আমাদের অধিকার কিন্তু আমরা এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় সবসময় কেননা স্থানীয়দের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অনেকসময় সন্ধ্যার পর মেসে ফেরার পথে হুমকির সম্মুখীন ও ছিনতাইয়ের  শিকার হতে হয়।নারী শিক্ষার্থীরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে।

আবার হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদেরও থাকতে হয় গাদাগাদি করে, এক রুমেই থাকতে হচ্ছে অনেকজন মিলে। অনেকসময় এক বিছাতেই থাকতে হচ্ছে একাধিক শিক্ষার্থীদের।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সবুজ বলেন, হলে উঠে একই বিছানায় দুজন, একই টেবিলে দুজনের পড়াশোনা করা খুবই কষ্টসাধ্য।তাছাড়া খাবারের সমস্যা তো প্রতিদিন বেড়েই চলছে।

শহীদ মুখতার ইলাহী হলে অবস্থানরত তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, ৪ সিটের এক রুমে ৬ জন থাকতে হচ্ছে, যার ফলে গোসল থেকে শুরু করে সব কিছুই পালাক্রমভাবে করতে হচ্ছে। অনেকসময় এসব কারণে ক্লাসে লেট হচ্ছে, ক্লাস মিস যাচ্ছে।

আবাসন সুবিধা নিয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রী বলেন,পড়াশোনা  শেষ করা আপুরাও হলে থাকে তাই আমাদের সীট পেতে অনেক দেরি হয়েছে। আগে মেসে থাকতে ফেরার পথে বা ক্যাম্পাসে আসার পথে ইভটিজিং ও নানারুপ হয়রানির শিকার হতে হতো আর এখন হলে উঠার পর একবেডে দুইজন, একটেবিলে দুইজন ছাড়াও রান্না, গোসলসহ অন্যান্য কাজ পালাক্রমভাবে করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট মীর তামান্না ছিদ্দিকা বলেন, হলে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে, বেশ কিছু সমস্যা ছিল তবে আমরা খুব দ্রুতই এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠছি।

   


পাঠকের মন্তব্য