শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হবে 'মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়িত হবে জার্মান নাট্যকার ও কবি বার্টল্ট ব্রেখট রচিত নাটক 'মাদার কারেজ এন্ড হার চিলড্রেন'।
আগামী শুক্র ও শনিবার (৩ ও ৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৭:০০ টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে এই নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। সপ্তদশ শতকের ইউরোপের ধর্মযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজা আরিফ।
নাটকটিতে ফুটে উঠেছে কিভাবে, ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট—এই দুই ধর্মাচারে বিভক্ত হয়ে ইউরোপের মানুষ পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে চলতে থাকা সে যুদ্ধে জার্মানির জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। আর বেঁচে যাওয়া মানুষেরা মুখোমুখি হয়েছিল মহামারি প্লেগ, দুর্ভিক্ষের মতো নানাবিধ বিভীষিকার।
এই যুদ্ধের ভেতরই 'এনা ফিয়ালিং' নামের এক নারী একটি ভ্রাম্যমাণ ক্যান্টিন নিয়ে রণক্ষেত্রে ঘুরে বেড়ায়। যুদ্ধের মাঝে ব্যবসা করতে গিয়ে সে একে একে তার সব সন্তানদের হারায় কিন্তু সাহসটা হারায় না। নাটকটিতে ফুটে ওঠে, এনা ফিয়ালিং ওরফে মাদার কারেজের বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা, মমতা এবং ধৈর্য। ইউরোপের সেই ধর্মযুদ্ধ কালে একটি ভ্রাম্যমাণ খাবারের গাড়ি নিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাড়ি জমানো, যুদ্ধের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে তিন সন্তান এলিফ, সুইস পনির এবং ক্যাট্রিনকে একে একে হারালেও জীবন যুদ্ধে মাদার কারেজ কখনোই হার মানেন নি। একজন নারীর জীবন যুদ্ধ এবং যুদ্ধ যুদ্ধচলাকালে শত ত্যাগের পরেও হার না মানা রূপ দর্শকদের বিমোহিত করে, প্রেরণা জোগায়।
আয়োজকরা জানান, ব্রেখট সম্ভবত বিংশ শতকের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী নাট্যকার ও তাত্ত্বিক। আড়াই হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা পাশ্চাত্য নাটকের গঠন কাঠামোকে তিনি দুমড়ে মুচড়ে ভেঙেছেন। এরিস্টটলের ক্যাথারসিস তত্ত্বকে বাতিল করেছেন। অথচ ব্রেখট পাঠ করলে অনুধাবন করা যায়, কী গভীরভাবে ক্যাথারসিসকে তিনি আলিঙ্গন করেছেন এবং তারপর ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।
ব্রেখটের অপরাপর নাটকের তুলনায় মাদার কারেজের প্রেক্ষাপট অধিকতর বিস্তৃত। নাটকের প্রায় কুড়ি বছরের ঘটনাক্রমে এরিস্টটলের 'ত্রি–ঐক্যের' স্থানালাভের সুযোগ নেই। 'মাদার কারেজ' শুধু ব্রেখটীয় 'এপিক থিয়েটার' –এর অন্যতম সেরা কীর্তি–ই নয়, আপন শৈলীতেও এপিক। তারা যুক্ত করেন।
নির্দেশক রেজা আরিফ জানান, একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা দেখছি রাশিয়ার-ইউক্রেন যুদ্ধ হচ্ছে, পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, আফগানিস্তান-তুরস্কে শিশুরা মরছে। যুদ্ধ যেন পৃথিবীর ধ্রুব সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পৃথিবীর ইতিহাস যুদ্ধের ইতিহাস। মানুষ মানুষে যুদ্ধ, ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ, সীমানা নিয়ে যুদ্ধ, জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ; যুদ্ধের পরিনামে এতো মৃতের নাম-পরিচয়-ঠিকানা কেউ হয়ত কোনোদিনই লিপিবদ্ধ করে রাখবে না। না রাখুক! শিল্পের কাঁধে ভর করে কিছু কথা বলার অভিপ্রায়ে মাধ্যম হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি মঞ্চ নাটক।
নাটকের অভিনেতা এরফানুল ইসলাম ইফতু বলেন,‘আমার শিক্ষক রেজা আরিফ স্যার যখন মাদার কারেজের নাটক আমাদের জন্যে সিলেক্ট করলো। তখন আমার মধ্যে দারুণ অনুভূতি কাজ করেছিল। এর কারণ ব্রেখট তার নাটকের মধ্য দিয়ে সমাজবাস্তবতা জীবনবোধের কথা বলতে চেয়েছিল। বর্তমানে ইউরোপে যে যুদ্ধ অবস্থা পুরো পৃথিবীর মানুষের যে হাহাকার তার বিরুদ্ধে বারবার বলে গিয়েছিল। এরকম একটা পরিস্থিতিতে রেজা আরিফ স্যারের নির্দেশনায় এই নাটকটা করা আমার শুধুমাত্র শিল্পের প্রয়োজন বলবো না বরং একটা দায়বদ্ধতা বলবো।’
পাঠকের মন্তব্য