আ'লীগে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু 

আ'লীগের বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু 

আ'লীগের বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু 

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটির বড় অংশের নেতাদের নাম ঘোষণা করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রমবিষয়ক পদটি ছাড়া বাকি ১৮টি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের নামও ঘোষণা করেন তিনি। সেই বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।

সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, উপকমিটির কাজ চলছে। যে ছাত্রনেতারা পদ ছাড়া রয়েছেন কিন্তু যোগ্য, এমন নেতাদের উপকমিটিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। খসড়া কমিটি গঠনের বিষয়টি চলমান রয়েছে। যাছাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত কমিটিগুলো দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হবে। আসন্ন রমজানের আগে কিছু কমিটি প্রকাশ পেতে পারে।

উপকমিটি করার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক নেতার সঙ্গে একজন চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব থাকেন। এর মধ্যে উপকমিটির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আছে উপকমিটির সদস্য বাছাই। যারা সদস্যপদে প্রার্থী রয়েছেন, তাদের জীবন-বৃত্তান্ত যাচাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে বেশ কয়েকবার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তাগিদ দিয়েছেন। আগামী রমজান মাসের আগেই তিনি উপকমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগরের এক যৌথ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘উপকমিটির চেয়ারম্যান-সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। সে প্রক্রিয়ায় যার যার সীমানা থেকে উদ্যোগ নেবেন। এ বিষয়ে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’ তার ওই নির্দেশনার পর পদপ্রত্যাশীরা তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপকমিটিতে স্থান পেতে প্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিনই সকাল থেকে ভিড় করছেন। নেতাকর্মীরা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বাসায়, কেউ অফিসে, কেউ দলীয় কর্মসূচিতে সাক্ষাৎ করে পদ প্রত্যাশার কথা বলছেন। এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর কোন সদস্য কখন আসবেন, সেই খোঁজখবর নিয়ে উপকমিটির পদপ্রত্যাশীরা কার্যালয়ে ভিড় করছেন। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও অনেকে সম্পাদকমণ্ডলীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভিড় করছেন। সেখানে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। কেউ আবার দলের হেভিওয়েট নেতাদের দিয়ে তদবির করাচ্ছেন। তবে যোগ্য ও নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে এমন নেতাদের উপকমিটিতে স্থান দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের ১৯টি সম্পাদক পদ রয়েছে। তার মধ্যে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদটি এখনো শূন্য রয়েছে। ১৮টি সম্পাদকীয় পদের উপকমিটি গঠন করতে হবে। সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। ক্ষমতাসীন দলের উপকমিটিগুলো কত সদস্যবিশিষ্ট হবে তা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক বিগত সময়ে এগুলো ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই সেই পরামর্শ মানেননি। কেউ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করলেও অনেকে ১০১ থেকে ১৫০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করে উপকমিটি গঠন করা হবে। ওই উপকমিটি একজন চেয়ারম্যান, একজন সম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্য, যারা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, তারা পদাধিকার বলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত উপকমিটির সদস্য হবেন। সংগঠনের সভাপতির মাধ্যমে উপকমিটির সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হবে এবং তিনি উপকমিটিগুলো গঠন করে দেবেন। সভাপতি সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলী, উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্য থেকে উপকমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদক সংশ্লিষ্ট উপকমিটির সদস্য সচিব হবেন। উপকমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম জোরদারে সহায়তা করবে।

সম্পাদকমন্ডলীর পদের অন্তত তিনজন নেতা জানিয়েছেন, আগের উপকমিটির কিছু সদস্য অবশ্যই থাকবে। নতুন কিছু যুক্ত হবে। দলের হেভিওয়েট সিনিয়র অনেক নেতার তদবির থাকে, যা ফেলার মতো নয়। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে উপকমিটি নিয়ে। আমরা দেখেছি- সাহেদ, হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ অনেকের কারণে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। এবার উপকমিটি করার ক্ষেত্রে বিতর্কিতদের বিষয়টির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, উপকমিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক উপকমিটিতে আগে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের নেব। যারা নিষ্ক্রিয় তারা এমনিতেও থাকবেন না। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী, যারা চেহারা দেখানোর জন্য থাকেন তারা নয়, যারা কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের মধ্য থেকে সদস্য নিয়ে কমিটি করা হবে।

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর বলেন, আমাদের কমিটি নিয়ে বিতর্ক নেই। তারপরেও আমরা সতর্ক রয়েছি যাতে বিতর্কিতরা কমিটিতে আসতে না পারেন। তাই ছাত্রলীগের ক্লিন ইমেজের নেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিভাগীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেন সংগঠনটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে। এ কমিটির কো-চেয়ারম্যান করা হয় ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে। আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয় অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমিরকে। এছাড়া আইনবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. মির্জা জলিল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান এবং কো-চেয়ারম্যান করা হয় অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে, দপ্তর উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় প্রফেসর ড. অনুপম সেনকে।

ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন এ কে এম রহমত উল্লাহ ও কো-চেয়ারম্যান হন চৌধুরী খালেকুজ্জামান, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন আবদুল হাফিজ মল্লিক; কো-চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন আতাউর রহমান এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, ধর্মবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন; কো-চেয়ারম্যান হন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর, মহিলাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি; কো-চেয়ারম্যান হন মাজেদা রফিকুন্নেছা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলম, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন মোজাফফর হোসেন পল্টু; কো-চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক; কো-চেয়ারম্যান হন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

   


পাঠকের মন্তব্য