ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সিলেটে অপরাধে জড়িত একটি চক্র 

ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সিলেটে অপরাধে জড়িত একটি চক্র 

ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সিলেটে অপরাধে জড়িত একটি চক্র 

ওরা ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চলে। রাতের বেলায় নিরীহ মানুষকে ধরে ছিনতাই, বেআইনী আটক, মুক্তিপণ আদায় করে। আর রাতের বেলায় বিএনপির নেতার সাথে বৈঠকে গ্রুপ নিয়ে পরামর্শ করে।

একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন আম্বরখানা বাজার এলাকার হোটেল আল মারজান ও হোটেল হিমেল গলির ভেতরে রাতের বেলা আস্তানা গাঁড়ে ২০/২৫ জনের অপরাধী চক্র নিয়ে। বিভিন্ন ফাঁদ পেতে রেখে তাদের বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে কলেকৌশলে আস্তানায় নিয়ে নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে। অপরাধী চক্রের মূল নেতৃত্ব দেন তারেক উদ্দিন রাজু, রনি, বহিরাগত দুর্ধষ দাগী অপরাধী সাকিল, ভুয়া পুলিশ সোর্স পরিচয়ধারী আল আমীন, সাদেক, ডেকা রুবেল, হোসেন গং।

এই গ্রুপ বিভিন্ন সময় সিলেট ছাত্রলীগের রাহেল সিরাজ, রাহাত তরফদার ও নাদেল গ্রুপের সদস্য পরিচয় দিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড চালায়। 

তাদের আস্তানায় বিগত এক বছর আগে সিলেট খাদিম নগরের সাদমান নামক এক যুবককে কৌশলে এনে আস্তানায় নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বেআইনী আটক রেখে মারপিট করতে করতে শেষ পর্যন্ত সাদমানের মোবাইল দিয়ে তার বাসায় ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবী করা হয়। মুক্তিপণ দিয়ে সাদমান মুক্তি পায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া আম্বরখানাস্থ গ্রামীণ ফোনের সাবেক অফিসের কর্মকর্তা মোটর সাইকেল চালিয়ে ঐ গলির ভিতরে যাচ্ছিলেন। তিনি সেখানে টঙ্গ ঘরে চা-খাওয়া শেষ হলে তার মোটরসাইকেল সহ তাকে উক্ত অপরাধী চক্র ঘেরাও করে ফেলে মুক্তিপণ চায়। মুক্তিপণ না দিলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখায়। আত্মরক্ষার্থে ঐ কর্মকর্তা তার ভাইকে মোবাইলে মেসেজ পাঠায়। মেসেজ পেয়ে তিনি সিলেটের ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোনে ঘটনাটি জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ঐ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কিন্তু অপরাধী চক্রের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বর্তমানে ঐ কর্মকর্তা কানাডায় বসবাস করছেন। ঘটনাটি ৪/৫ বছর আগে ঘটেছিল। প্রায় ৭ বছর ধরে এই আস্তানায় ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড চলছে। 

আম্বরখানা বাজারের মানুষ তাদের এমন ভয়ংকর অবস্থা দেখে আতংকিত হয়ে সরকারকে ভুল বুঝতে শুরু করেছে।

বিগত ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল মধ্য রমজান মাসের রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু লেখক সাংবাদিক ফোরাম সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি ও মহানগরীর ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য সচিবকে হঠাৎ ঘেরাও করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছিল। পরে তাকে অপরাধীরা বাঁচতে গিয়ে অপরাধী চক্রের নাম্বার থেকে কোতোয়ালী থানাধিন শাহজালাল তদন্ত কেন্দ্র ফাঁড়ির পুলিশকে খবর দিয়ে উল্টো মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। 

অপরাধী চক্রের সদস্যদের মধ্যে রাজু, ডেকা রুবেল, সাদেক, আল আমিন গংরা আম্বরখানা বাজারের বিভিন্ন মোবাইলের দোকানে মোবাইল ক্রয় করার নামে মোবাইল সেট নিয়ে কৌশলে চলে যায়। নিরীহ ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন নালিশ করতে যায় না। শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিল। তাদের অপরাধ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করা হয়। 

বিগত ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিন তালতলা থেকে বন্দরবাজার অভিমুখে ছাত্রলীগের ব্যানারে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। ঐ মিছিলের সম্মুখ সারিতে অপরাধী চক্রের তারেক উদ্দিন রাজুকে দেখা যায়।

আম্বরখানার ছাত্রলীগের আশরাফ সিদ্দিকীর হাত ধরে এই চক্র গড়ে উঠে। আম্বরখানার হোটেল টিল্যান্ডের কক্ষের ভেতর এই অপরাধীরা জোয়ার বোর্ড পরিচালনা, অস্ত্র বেচা- কেনা, মাদক ব্যবসা, দেহ ব্যবসার মাধ্যমে নিকৃষ্ট অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে চলতো। কোতোয়ালী থানার কিছু সংখ্যক পুলিশ এই অপরাধী চক্রের কথাবার্তায় উঠবস করতো। নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় শেষে তাদের ছেড়ে দেয়ার সময় অপরাধীরা মেনেজ করা পুলিশকে খবর দিয়ে এনে মাদক দিয়ে ফাসিয়ে উল্টো পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতো। এসএমপির এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্য ঐ অপরাধী চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে। 

অপরাধী চক্রের তারেক উদ্দিন রাজু, সম্রাট, শাকিল ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর সিলেট নগরীর শিবগঞ্জে সাবেক বিএনপি নেতা  মিটিং করে। এই মিটিং এর একটি চিত্র পাওয়া গেছে। গত ৬ নভেম্বর সিলেট নগরীর বড়বাজার এলাকায় সন্ধ্যা রাতে সিলেট জেলা বিএনপি সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আফম কামালকে খুন করা হয়। ঐ ঘটনার সাথে অপরাধী চক্রের শাকিল, রাজু, সম্রাট গংকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। এই অপরাধী চক্রের কারণে আওয়ামীলীগ সরকারের ভাবমূতি অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

   


পাঠকের মন্তব্য