শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়

শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লি

শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লি

দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া। ভোর থেকেই মানুষের স্রোত শোলাকিয়া অভিমুখে। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য জায়নামাজ হাতে দলে দলে মুসল্লির ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহে। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬তম ঈদুল ফিতরের জামাত। সকাল ১০টায় জামাত শুরু হয়। ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরু হওয়ার আগে শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও দলে দলে মুসল্লি আসতে থাকেন। মাঠের ভিতরে জায়গা না পেয়ে অসংখ্য মুসল্লি পাশের সড়ক, সেতুসহ অলি গলিতে নামাজ আদায় করেন। 

প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় এসেছেন। দূরের মুসল্লিরা ঈদের দু-একদিন আগেই এসে অবস্থান নেন বিভিন্ন মসজিদ, হোটেল এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।

নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। 

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। নির্বিঘ্নে ঈদ জামাত সম্পন্ন করতে শোলাকিয়া ঈদগাহে চারস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও মাঠে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। 

অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন ছিল। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত রাখা হয়। দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম. এ আফজল, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। 

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কিশোরগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার মাসরুকুর রহমান খালেদ এবার শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম, স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হন।

জঙ্গি হামলার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

পাঠকের মন্তব্য