কসবায় দেখে এলাম কৃষকের আনন্দোৎসব

মিয়া মনসফ, সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা
মিয়া মনসফ : কৃষকের হাসি আমরা তখনই দেখি যখন তাঁর হাতের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলে। যখন বাম্পার ফলন হয় কৃষক তখন বাড়তি ফসল পেয়ে আনন্দে মাতে পরিবার পরিজন নিয়ে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য হাতে পেলে আবার কর্মট দু’টি হাত নিয়ে উর্বর মাটিতে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে নতুন ফসল উৎপাদনে নিজেকে নিয়োজিত করবে।
আবার উল্টো চিত্রও আছে। সারের জন্য কৃষককে লাশ হতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদিত ফসল চোখের সামনে সলিল সমাধি হয়ে যায়। উৎপাদিত ফসলের যখন ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় তখন এই কষ্ট কোথায় রাখে কৃষক! আমাদের এই দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গী। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয় এদেশের মানুষকে। বিশেষ করে কৃষক এই দুর্যোগের সবচেয়ে বড় স্বীকার। কৃষকের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার সময় ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে যখন লন্ডভন্ড হয়ে যায়, তখন তার কত কষ্ট তা সহজে অনুমেয়। রাষ্ট্র যখন কৃষককে ঋণ দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তখন কৃষক কিছুটা তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। কিন্তু সেই ঋণ নিতে গিয়েও কৃষককে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ঋণের জন্য দালালচক্রকে দিতে হয় উৎকোচ।
কৃষকের এতো দুঃসংবাদের মধ্যে সুখবরের বার্তা বয়ে দিচ্ছে এ বছরের শুরুতে এবি ব্যাংক লিঃ। এবি ব্যাংকের স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণ কর্মসূচি সর্বমহলে প্রশংশিত হচ্ছে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এই ঋণ কৃষকের জন্য কত বড় উপকার হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
ক’দিন আগে এবি ব্যাংকের এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচি সচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় গিয়েছিলাম। সীমান্তবর্তী এই উপজেলা কৃষি অধ্যুষিত এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আগের দিন একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে পরদিন রওনা হলাম কসবা উপজেলায়। পথ চলতে চলতে রাস্তার দু ধারে সোনালী ধানের আভা প্রত্যক্ষ করছি দুচোখ ভরে। আহ্ কী আনন্দ ! আমাদের এই উর্বর মাটিতে আমাদের কৃষক ফলায় সোনালী ফসল। সেই ফসল আমাদের জীবন বাঁচায়। আমাদের কৃষকের উৎপাদিত ফসলে আমাদের প্রবৃদ্ধিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে আমাদের কৃষকদের ভূমিকা অপরিসীম।
রাস্তার দু’ধারে সোনালী ধানের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে করতে চলে এলাম কসবার ঐতিহ্যবাহী তফাজ্জল আলী স্কুলের গেইটে। অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে সজ্জিত পুরো অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন। অনুষ্ঠান শুরু হতে আরো ঘন্টা খানেক বাকি। এরই মধ্যে প্যান্ডেলে রক্ষিত আসন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে কসবা এলাকার কৃষকদের উপস্থিতিতে। প্রায় সহস্র কৃষক এসেছেন এবি ব্যাংক আয়োজিত স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে। ঠিক এগারোটায় বিশাল স্টেজে প্রধান অতিথি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি ও বিশেষ অতিথিদের সাথে নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহণ করলেন এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনার পরিচালক তারিক আফজাল।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ঋণপ্রাপ্ত ভাগ্যবান কৃষকদের নিয়ে ফটোশেসন হলো। তখন প্যান্ডেলের নিচে বসে থাকা ঋণ প্রত্যাশী অন্যান্য কৃষকরা হাততালিতে মুখর করে তুললো পুরো অনুষ্ঠানকে। তাঁদের এই উচ্ছ্বাস আনন্দ দেখে বোঝা যায় এবি ব্যাংকের এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচিতে তারা খুবই সন্তুষ্ট। খুশি তো হবারই কথা। এই ঋণ প্রাপ্তিতে কোন ঝক্কিঝামেলা নেই। কোন ঘুষ দিতে হয়নি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা ঋণ পাবে একজন কৃষক। ঋণের অর্থ কৃষি কাজে লাগিয়ে উপকৃত হলে এবং সময় মতো ঋণের অর্থ ব্যাংকে ফেরত দিলে আবারো ঋণ পাবে ঋণপ্রাপ্ত কৃষকরা। সে ঋণের পরিমানও বাড়বে। এই সুযোগ ৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এবি ব্যাংকই করে দিয়েছে কসবার কৃষকদের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৮০০ কৃষক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ঋণ পাবে। এবি ব্যাংক সারাদেশে ক্রমান্বয়ে তাদের ঋণ বিতরণ কর্মসূচির পরিধি বাড়াবে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে হলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আমাদের দেশের শতভাগ কৃষক অনাবাদি জমিতে আবাদ করার সুযোগ পায়।
লেখক- সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা
পাঠকের মন্তব্য