গাজীপুর সিটির ৪৮০ কেন্দ্রের ভোটের ফল বিশ্লেষণের চিত্র   

জাহিদ আহসান রাসেল, আজমত উল্লা খান, মেহের আফরোজ চুমকি

জাহিদ আহসান রাসেল, আজমত উল্লা খান, মেহের আফরোজ চুমকি

নানা হিসেব-নিকেশ ও জল্পনা-কল্পনার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জিতে বিজয়ের হাসি হেসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। বিপরীতে আলোচনা চলছে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে। নানা বিচার-বিশ্লেষণ আর আলাপ-আলোচনার মধ্যে মোটাদাগে উঠে আসছে আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দল, দলীয় বিভাজন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থক ভোটারদের বড় ভূমিকার কথা। 

শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লার পরাজয়ের নেপথ্যের নানা কারণ।

গাজীপুর-২ আসনের সংসদ-সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ-সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির সংসদীয় এলাকায় হেরেছে নৌকা। তবে টঙ্গী এলাকায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৮০ কেন্দ্রের ভোটের ফল বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে।

গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলমের উন্নয়ন ও তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমাই মূলত তার মা জায়েদা খাতুনের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে একক সিদ্ধান্তে এ নির্বাচন করেছেন। গৃহিণী মাকে এ সিটির মেয়র নির্বাচিত করেছেন।

প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের এলাকায় নৌকার এমন হার সেখানে বড় প্রশ্নের তৈরি হয়েছে। সেখানকার দলীয় কোন্দলের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।
 
টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা (৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড) এবং গাছা থানা (৩২-৩৮ নম্বর ওয়ার্ড) ও গাজীপুর সদর মেট্রো (২৩-৩১ নম্বর ওয়ার্ড) নিয়ে গাজীপুর-২ আসন। এ আসনের সংসদ-সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজীপুর সিটির মধ্যে এককভাবে টঙ্গী এলাকায় আজমত উল্লা খান বেশি ভোট পেয়েছেন। জায়েদা খাতুনের সঙ্গে বড় ব্যবধানও তৈরি করেছেন। এ এলাকার ১৬৩টি কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৭৮৪ ভোট।

সিটি করপোরেশনের ৩৯ থেকে ৪২ নম্বর পর্যন্ত চারটি ওয়ার্ড পড়েছে গাজীপুর-৩ আসনের সীমানার মধ্যে। এ আসনের সংসদ-সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি। সেখানে ৩২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে জায়েদা খাতুন বেশি ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে আজমত উল্লা খান কম ভোট পেয়েছেন। জায়েদা খাতুনের ভোটের পরিমাণ ঘড়ি ২০১৪৩টি ও আজমত উল্লার ১৫৫০৪টি।

অপরদিকে সিটি করপোরেশনের ১-১৮ নম্বর ওয়ার্ড পড়েছে গাজীপুর-১ আসনে। এসব ওয়ার্ডে ১৩২টি কেন্দ্র রয়েছে। এ আসনের সংসদ-সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ এলাকায় প্রধান দুই প্রার্থীর ভোট প্রায় সমানে সমান। এসব এলাকায় নৌকা পেয়েছে ৬৪৬৮৬টি ভোট। অপরদিকে টেবিল ঘড়ি পেয়েছে ৫৮৬১৩ ভোট।

প্রভাবশালীদের এলাকায় কম ভোট পাওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গাজীপুর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও নেই। টঙ্গীতেও আওয়ামী লীগের কমিটি নেই। সাবেক কমিটির সভাপতি ফজলুল হক বলেন, নির্বাচনে আমাদের কিছু ভুল থাকতে পারে। তাই ফলাফল এমন হয়েছে। টঙ্গীতে আমরা ভালো করলেও অন্য এলাকায় ভালো করতে পারিনি।

বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগবিরোধীদের ভোটের সিংহভাগই জায়েদা খাতুন পেয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সদর উপজেলায় ৮ লাখ ১০ হাজার ভোটার রয়েছে। এসব এলাকায় আজমত উল্লার পদচারণা নেই বললেই চলে। অপরদিকে এসব এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। মেয়র থাকাবস্থায় বেশিরভাগ সময় তিনি সদর এলাকায় ব্যয় করতেন।  

অপরদিকে গাজীপুর সিটিতে পরাজয়ের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, ‘দলের অনেকেই প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, গোপনে অবস্থান নিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। এছাড়া বিরোধী দলের ভোটও গিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাক্সে। নানা কারণে এখানে আমাদের পরাজয় হয়েছে। তবে পরাজয়ের পেছনে মূল কারণ কী, তা আমরা তদন্ত করে বের করবো।’

শুক্রবার সকালে টঙ্গীর নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, ‘আমি যেহেতু দলীয় প্রার্থী ছিলাম, দলের সবাই বসে পর্যালোচনা করে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে। দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে গাদ্দারি করেছেন। নিশ্চয়ই দল এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’

   


পাঠকের মন্তব্য