একাত্তরে ধর্ষণ শিবির থেকে বেঁচে ফেরা নারীদের কথা

একাত্তরে ধর্ষণ শিবির থেকে বেঁচে ফেরা নারীদের কথা

একাত্তরে ধর্ষণ শিবির থেকে বেঁচে ফেরা নারীদের কথা

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের বিরুদ্ধে নৃশংস দমন-পীড়ন শুরু করে, যাতে কয়েক লাখ নারীকে আটক করে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়। তবে খুব বেশিদন হয়নি যখন থেকে কেবলমাত্রই তাদের গল্পগুলো বলা শুরু হয়েছে।

সময়টা ছিল একাত্তর সালের গ্রীষ্মকাল। কয়েক মাস আগে শুরু হওয়া যুদ্ধের ঝনঝনানি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজশাহীতে, পদ্মা নদীর উত্তর তীরে, নূর জাহানের দরজায় পৌঁছালো। ১৪ বছরের কিশোরী নূর জাহান তার ছোট বোনের সাথে খেলছিলো, যখন একটি সামরিক ট্রাক প্রকট শব্দে তাদের পরিবারের খামারবাড়ির বাইরে এসে থামে।

সশস্ত্র সৈন্যরা দুই বালিকাকে ট্রাকের পেছনে তুলে নেয়, যেখানে তারা দেখতে পায় বেশ কয়েকজন নারী হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। ‘তারা আমাদের নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে এবং চুপ থাকতে বলেছিল’, বর্তমানে ৬৫ বছর বয়সী নূর জাহান স্মৃতিচারণ করেন। ট্রাকটি ছোট শহরের মধ্য দিয়ে কয়েক জায়গায় থেমে থেমে চলতে থাকে; এবং প্রতিবার আরো নারী ও মেয়েদের বোঝাই করে, যেন তারা গবাদি পশু। সবাই নীরবে কান্নাকাটি করছিলো, নূর জাহান বর্ণনা করেন, যেন তারা শব্দ করতেও ভয় পাচ্ছিলো।

নূর জাহান বলেন, ‘আমাদের কোন ধারণা ছিল না তারা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার চোখের কোণ দিয়ে আমাদের বাড়ির চারপাশের গাঁদা ক্ষেতগুলোকে দৃষ্টির বাইরে চলে যেতে দেখছিলাম। আমার মনে আছে আমি আমার বোনের হাত শক্ত করে ধরে ছিলাম এবং পুরোটা সময় ভয় পাচ্ছিলাম। আমরা সবাই বাংলার কসাই ও তার লোকদের কথা শুনেছিলাম’। 

বাংলার কসাই ছিল পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার জেনারেল টিক্কা খানকে দেয়া ডাকনাম। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর অপারেশন সার্চলাইট নামের ক্র্যাকডাউন পরিচালনা করেন, যা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যায় রূপ নেয়। 

তবে নূরজাহান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আরেকটি নৃশংস কৌশলের শিকার হতে চলেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি, সৈন্যরা বাঙালি নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক গণধর্ষণ চালায়। অনেক ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন, খানের নীতি অনুযায়ী তার নির্দেশে ‘পশ্চিমা রক্ত’ দিয়ে যত বেশি সম্ভব নারীকে গর্ভবতী করার প্রক্রিয়া ছিলো সেটি।

অবশেষে ট্রাক থামার পর মেয়েরা নিজেদেরকে সামরিক ব্যারাকের ভেতরে আবিষ্কার করলো। পরের কয়েক মাস সময় নূরজাহানের কাছে অস্পষ্ট, যিনি বন্দি থাকা অবস্থায় প্রায়ই অচেতন হয়ে যেতেন। ‘আমরা সেখানে মরার মতো পাশাপাশি পড়ে থাকতাম। একটি রুমে সম্ভবত আমরা ২০ থেকে ৩০ জন ছিলাম’, অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি স্মরণ করেন। ‘কেবল একটা সময়ই আমরা দিনের আলো দেখতাম, যখন দরজা একটু ফাঁক হয়ে যেত আর সৈন্যরা ভেতরে ঢুকত। আর তারপর শুরু হতো ধর্ষণ।’

যেই সংঘাতের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, সেসময় সারাদেশে সামরিক ধাঁচের ধর্ষণ শিবির স্থাপন করা হয়েছিলো, যার একটিতে বন্দি ছিলেন নূরজাহান। ওই সময় ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা দুই লাখ থেকে চার লাখের মধ্যে ছিলো বলে সরকারি হিসাবে অনুমান করা হয়। তবে এই সংখ্যাকেও কম বলে মনে করেন কেউ কেউ। 

জাতিগত ধর্ষণ মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর আগে হওয়া দেশভাগের বৈশিষ্ট্য ছিলো। তবে বাঙালি নারীরা যার ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন তা ছিল বিশ শতকে ধর্ষণকে ‘সচেতনভাবে প্রয়োগ করা যুদ্ধাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের প্রথম নথিভুক্ত উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এর মর্মান্তিক ব্যাপ্তি সত্ত্বেও, এই অঞ্চলের বাইরে এ সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।

সমাজচ্যুতি

কলঙ্কের কারণে বাংলাদেশি নারীদেরকে তাদের সমাজ থেকে একঘরে করা হয়েছিলো, এবং তাদের ভয়ঙ্কর কাহিনীগুলো প্রায়ই লজ্জার নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল। ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দেয়ালে একটি ফলকে লেখা আছেঃ ‘এই লুকানো কষ্টের খুব বেশি রেকর্ড নেই।’ তবুও বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে, এর ভয়ঙ্কর সাক্ষ্য নিয়ে বেঁচে আছেন নারীরা।

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে রাজিয়া বেগম তার স্বামী আবু সরকারকে খুঁজতে বের হন, যিনি কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। ঠিক যেখানটায় আবু সরকার ফল বিক্রি করতেন ঢাকার সেই তেজতুরি বাজার এলাকার রাস্তায় উঠকণ্ঠা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রাজিয়া। কিন্তু আবু সরকারকে  কোথাও পাওয়া যায়নি। এক জায়গায় রাস্তার মোড় ঘুরতেই রাজিয়া একদল সৈন্যের মুখোমুখি হলেন। ঘুরে দৌড়ানোর চেষ্টা করতেই তাকে রাইফেল দিয়ে আঘাত করা হয়, যার দাগ এখনও তার মাথায় আছে। 

রাজিয়া বেগমকে কাছের একটি জঙ্গলে টেনে নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে বারবার ধর্ষণ করা হয়। সৈন্যরা কাছাকাছি অবস্থান করত এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে ফিরে আসত। ‘তারা আমাকে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখত এবং তাদের বিরতির সময় আমাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করতো’, রাজিয়া বলেন, যার বয়স এখন ৭৮ বছর। শেষে সৈন্যরা তাকে একটি অগভীর খাদে ফেলে দেয়।রাজিয়া বেগম

একজন পথচারী অবশেষে তাকে খুঁজে পেয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান, যেখানে যুদ্ধের সময় অপহৃত নারীদের খুঁজে পাওয়ার পর নিয়ে যাওয়া হতো। অনেক জেলায় এই ধরনের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিলো সেই সব নারীর জন্য, যাদেরকে অপহরণের পর বাড়ি থেকে বহুদূরে ফেলে যাওয়া হতো। 

রাজিয়া বলেন, ‘সেই সময়ে মহিলারা প্রায়ই বাড়ি থেকে বের হতেন না, তাই আমরা অনেকেই আমাদের সঠিক ঠিকানাও জানতাম না’। তার স্বামী তাকে খুঁজে বের করার আগে চারটি ভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘যা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে না। কিন্তু এত বছর পরেও আমার পক্ষে ভুলে যাওয়া কঠিন। আমি এখনও দুঃস্বপ্ন দেখি’।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধের আকস্মিক পরিসমাপ্তি ঘটে। স্বাধীনতা অর্জিত হলেও, নূরজাহান ও রাজিয়া বেগমের মতো হাজার হাজার বাঙালি নারীকে সারাদেশের আশ্রয়কেন্দ্র ও ধর্ষণ শিবির থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো। 

উদ্ধার অভিযান

যুদ্ধের পর পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্য মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের একত্রিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সেক্রেটারি মালেকা খানকে। তবে ঢাকার জাহাঙ্গীর গেটের কাছে আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে ধর্ষিত ও বন্দী নারীদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানার পর, খান উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সেখানে গিয়ে খান যা দেখেছিলেন তাতে তিনি হতবাক হয়ে যান। ৮০ বছর বয়সী খান বলেন, সেখানে নারীরা সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল। যুদ্ধের সময় বাঙ্কারে রেখে তাদেরকে নির্যাতন করা হয় ও সেখানেই ফেলে যাওয়া হয়। তিনি তাদেরকে জামাকাপড় কিনে দেন এবং তাদের সাহায্য করার পর সযত্নে শাড়ি ও কম্বলে মুড়িয়ে দেন। ‘তারা হতবাক হয়ে গিয়েছিল এবং কথা বলতে পারছিলো না’, খান বলেছেন। ‘কারও কারও চুল কাটা ছিল, অন্যরা গর্ভবতী ছিল। পুরো বিষয়টি নিয়ে অবিশ্বাসের হাওয়া বইছিল। সম্পূর্ণ ব্যাপারটি ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর’। 

ওই নারীদের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার প্রদত্ত নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের সমাজে ফিরিয়ে আনার প্রয়াসে জাতির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বীরাঙ্গনা উপাধি প্রদান করেন এবং নারীদের জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করেন, যার নির্বাহী পরিচালক হন মালেকা খান।

মালেকা খান বলেন, ‘পুনর্বাসন কর্মসূচি বেঁচে যাওয়াদের জন্য আশ্রয়, কাউন্সেলিং এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে। আর অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ মোকাবেলা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনারদের’। তারপরে দুটি জিনিস ঘটেছিল: পরবর্তীতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়ার জন্য অস্থায়ী আইন এবং পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক দত্তক অভিযান।

উচ্চ-ঝুঁকির চিকিৎসা কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে দেরীতে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক জফ্রি ডেভিসকে নিয়ে আসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কীভাবে শহর ও গ্রামে তাদের আক্রমণ পরিচালনা করেছিল তিনি তার বর্ণনা দিয়েছেন। ২০০৮ সালে মারা যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বিনা ডি’কস্তাকে দেয়া তার শেষ সাক্ষাত্কারে ডেভিস বলেন, ‘তারা পদাতিক বাহিনীকে পিছনে এবং আর্টিলারিকে সামনে রেখে হাসপাতাল ও স্কুলে গুলিবর্ষণ চালাতো। তারপর পদাতিক বাহিনী মহিলাদের আলাদা করা শুরু করতো’। 

‘ছোট বাচ্চা ছাড়া, প্রজননসক্ষম মেয়ের আলাদা করা হতো। তারপর তাদেরকে সেনা ছাউনিতে প্রহরায় রাখা হতো এবং সৈন্যদের জন্য প্রস্তুত করা হতো’, বলেন তিনি। ‘তারা যে গল্পগুলো বলেছিল তার মধ্যে কিছু ছিল ভয়াবহ- ওই নারীদের অবস্থা সত্যই খারাপ ছিল। তারা পর্যাপ্ত খাবার পেত না। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কোনো দেয়া চিকিৎসা হয়নি। তাদের অনেকেই ওই ক্যাম্পে মারা যায়’। 

‘তারা সবাই দুঃস্বপ্ন দেখতো। এই অভিজ্ঞতা কখনই কাটিয়ে ওঠা যায় না। আমরা বিদেশী বলে তাদের অনেকেই প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন থাকত। তারা বিদেশী কাউকে বিশ্বাস করতো না’, তিনি বলেন। ‘তারা জানত না আমরা তাদের সাথে কী করতে যাচ্ছি…এটা খুব কঠিন ছিল’। 

এই চিকিৎসক সেই সৈন্যদের সাথে তার কথোপকথনের ব্যাপারেও আলোকপাত করেন, যারা ধর্ষণে অংশ নিয়েছিল কিন্তু বুঝতে পারছিলো না এ নিয়ে এতো হট্টগোলের কী আছে। কুমিল্লার একটি কারাগারে বেশ দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে বসে তারা বলছিল: ‘তারা কী করছে? আমাদের কী করা উচিত ছিল? এটা একটা যুদ্ধ ছিল!’ ‘সত্যিই লজ্জাজনক বিষয় হলো যে, এই সমস্ত অফিসারদের ইংল্যান্ডের স্যান্ডহার্স্ট (রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল- এবং এটি একদমই গ্রহণযোগ্য ছিল না’।

আজ, বাংলাদেশের নারীরা বীরাঙ্গনা নারীদের কথা ইতিহাসে আবার লেখার উপায় খুঁজে বের করছেন, যেখান থেকে তাদেরকে অনেকাংশে মুছে ফেলা হয়েছে। রাইজিং সাইলেন্স, ব্রিটিশ-বাংলাদেশী নাট্যকার লীসা গাজীর একটি পুরস্কার বিজয়ী ডকুমেন্টারি, সেইসব নারীদের সাক্ষ্য সংরক্ষণ করে যারা এখনও জীবিত রয়েছেন। 

প্রত্যয়

নারীর গল্প উন্মোচন করতে গিয়ে গাজী নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকেন: ‘কীভাবে একজন নারীর শরীর এত ঘৃণা ও সহিংসতা জাগাতে পারে? যদি আমাদের একটি পরিবারকে লজ্জা দিতে হয়, আমরা তাদের মেয়েদের পিছনে যাই। কোনো দেশকে লজ্জিত করার প্রয়োজন হলে আমরা তাদের মেয়েদের পেছনে ছুটে যাই। এটাও একই মানসিকতা’। 

বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ভয় দেখাতে ও তাদের সম্মান নষ্ট করতে সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে এখনও ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে যুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘাতে যৌন সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধির একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ১৮টি দেশকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যেখানে যুদ্ধে নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রতিবেদনে ১২টি সেনা ও পুলিশ বাহিনী এবং ৩৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বারবার অপরাধীদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ব্যর্থতার অর্থ হলো- এই জঘন্য কাজগুলো দায়মুক্তির সাথে অব্যাহত রয়েছে’, বলেছেন বাংলাদেশে নারী অধিকারের লড়াইয়ের নেতৃত্বদানকারী একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ নারীপক্ষ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক।

২০১৭ সালে নারীপক্ষ রোহিঙ্গা ধর্ষণের শিকারদের সমর্থনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল, যখন বাংলাদেশ আবার নিজেকে ধর্ষণ মহামারীর প্রথম সারিতে খুঁজে পায়। ওই সময় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম প্রতিবেশী মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে বাঁচতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে আসে।

তাদের মধ্যে হাজার হাজার নারী ও শিশু রয়েছে যারা বার্মিজ সৈন্যদের হাতে ভয়াবহ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। নারীদের গাছের সাথে বেঁধে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা, বাঁশের লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা এবং আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবারও, অতীতের ঘটনার প্রতিধ্বনিতে, অনেক মহিলা অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের কলঙ্কের সাথে লড়াই করছে।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেছেন, ‘৫২ বছর হয়ে গেছে এবং এখনও পাকিস্তান বাঙালিদের বিরুদ্ধে করা জঘন্য যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি’। 

বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন অ্যান্ড জেনোসাইড ওয়াচ থেকে গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে সফল হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস ১৯৭১ সালে একটি গণহত্যা হয়েছে বলে স্বীকৃতি দিয়ে একটি ঐতিহাসিক রেজুলেশন পেশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তার স্বীকৃতি পেতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে লবিং করছে সরকার।

‘সরাসরি নৃশংসতার শিকার হওয়া অনেকেই আজও বেঁচে আছে, যাদের জন্য স্বীকৃতির অভাব একটি উন্মুক্ত ক্ষত হিসেবে রয়ে গেছে’, বলেছেন তাসনিম। ‘ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায়টি অনেক দীর্ঘ সময় ধরে ছায়ায় রাখা হয়েছে’।

বি:দ্র: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন নিয়ে এই প্রতিবেদনটি গত ৩ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে প্রকাশ করে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। প্রতিবেদনটি অনুবাদ করে কিছুটা ভিন্ন শিরোনামে এখানে প্রকাশিত হলো। 

   


পাঠকের মন্তব্য