তীব্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ার কারণ | মোস্তাক আহমেদ সাগর

তীব্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ার কারণ | মোস্তাক আহমেদ সাগর

তীব্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ার কারণ | মোস্তাক আহমেদ সাগর

মোস্তাক আহমেদ সাগর : বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের শীর্ষ দেশ গুলোর ভেতর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং ঘন ঘন ও তীব্র ঝড় সহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি অনুভব করছে।

বর্তমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির অনেক কারণ রয়েছে, উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হলো 

গ্লোবাল ওয়ার্মিং : পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা গত শতাব্দী ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই প্রবণতা ২০৫০ সাল নাগাদ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এটি একটি বৃহৎ জনসংখ্যা সহ একটি নিম্নাঞ্চলীয় দেশ।

বন উজাড় : জলবায়ু পরিবর্তনে বন উজাড় একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। যখন গাছ কেটে ফেলা হয়, তারা বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে দেয়, যা তাপকে আটকে রাখে এবং গ্রহকে উষ্ণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শহর গুলিতে গাছ কেটেছে এবং বনভূমি হারিয়েছে, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির একমাত্র কারণ।

নগরায়ন: বাংলাদেশ একটি দ্রুত নগরায়ণ দেশ। যত বেশি মানুষ শহরে চলে যায়, তারা আরও বেশি শক্তি ব্যবহার করে, যা আরও গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করে। এটিও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশে বর্তমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যার মধ্যে রয়েছে 

ক্রমবর্ধমান তাপের চাপ : ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা মানুষের জন্য কাজ করা এবং বসবাস করা কঠিন করে তুলছে। হিট স্ট্রেস হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সহ বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

ফসলের ফলন হ্রাস : ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ফসলের ফলনও কমিয়ে দিচ্ছে। এটি দেশের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগ, কারণ কৃষি অনেক মানুষের আয়ের একটি প্রধান উৎস এবং বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ পাশাপাশি জিডিপির অর্ধেক এই কৃষি থেকেই আসে।

পানির চাপ বৃদ্ধি : ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা পানির চাপ বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে পানির ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে। আরও ঘন ঘন এবং তীব্র ঝড়: ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ঝড়কে আরও ঘন ঘন এবং তীব্র করে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় উদ্বেগ, কারণ দেশটি ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা প্রবণ।

বাংলাদেশে বর্তমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি গুরুতর সমস্যা যা দেশের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যা মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবেলা করার জন্য এখানে কিছু কাজ করা যেতে পারে 

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করুন : সৌর এবং বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উত্সগুলিতে স্যুইচ করে বাংলাদেশ তার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে পারে। শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে শক্তির দক্ষতা উন্নত করতে হবে।

গাছ লাগান : গাছ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে সাহায্য করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করতে বাংলাদেশ আরও বেশি বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া: বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সিওয়াল নির্মাণ, খরা মোকাবেলায় সেচ ব্যবস্থার উন্নতি এবং ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার জন্য আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি গুরুতর সমস্যা, তবে তা অনতিক্রম্য নয়। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে, বৃক্ষ রোপণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে রক্ষা করতে পারি।

লেখকঃ পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী

   


পাঠকের মন্তব্য