আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল অংশ থাকছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা  

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহারের খসড়া তৈরি করেছে। সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া বিষয়গুলো হলো- ডেল্টা প্ল্যান, ব্লু ইকোনমি, তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এবারের ইশতেহার হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের রোডম্যাপ।

এবারের ইশতেহারের মূল অংশ থাকছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিয়ে। জোর দেওয়া হচ্ছে গ্রামকে শহর বানানোর পরিকল্পনার ওপর। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন সংক্রান্ত আইনগত ও বাস্তবিক বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। আর চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ। এ দুটো বিষয় আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যুক্ত হতে পারে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৬৪ পৃষ্ঠার ইশতেহার প্রস্তুত। শেষ বেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোখ বুলাচ্ছেন প্রস্তাবিত ইশতেহারে। পুরো ৬৪ পৃষ্ঠা প্রধানমন্ত্রী পাঠ করবেন না। আগামী ১৩ অথবা ১৪ ডিসেম্বর ইশতেহারের সারমর্ম তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইশতেহারে তরুণদের আকৃষ্ট করাই আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে তরুণ-যুবক বিশেষ করে নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা থাকছে। গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ইশতেহারের বিষয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার প্রবর্তক আওয়ামী লীগ সরকার টানা দুবার ক্ষমতায় থেকে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে কী চমক রাখছে- তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন। 

গণভবনে গত শনিবার অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় উঠে এসেছে ইশতেহারে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের বিষয়টি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতসহ বহু জাতি-গোষ্ঠীর দেশগুলোতে এ ধরনের মন্ত্রণালয় আছে কিনা- এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেন দলের নেতাদের। এছাড়া চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ালে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে বয়সের ভারসাম্য থাকবে না বলেও মত দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন বলে উপস্থিত নেতারা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৪ বছর বয়সে একজন শিক্ষার্থী তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির পরীক্ষায় বসে। চাকরিতে প্রবেশের বর্তমান বয়সসীমা ৩০ বছর। 

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে এ সীমা ৩২ বছর। এ বয়স বাড়ালে সিনিয়র-জুনিয়র ভারসাম্য থাকবে কিনা- তা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে তিনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। বয়স বাড়ানো হলে নির্দিষ্ট চাকরিতে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ কতবার আবেদন করতে পারবে তার একটি সীমানা টেনে দেওয়া হতে পারে ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। ইশতেহার প্রণয়নে যুক্তরা বলছেন, এবারের ইশতেহার প্রণয়নে তারা তরুণ ভোটারদের টার্গেট করেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশ থেকে নির্বাচিত কিছু তরুণের সঙ্গে বিশেষ এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বসেছিলেন।

তাদের পরামর্শ ও পরিকল্পনার কথা শুনেছেন তিনি। দেশে কাছাকাছি সময়ে বড় যে আন্দোলনগুলো হয়েছে  সেগুলো প্রায় সবই তরুণদের আন্দোলন। সবচাইতে আলোচিত কোটা আন্দোলন বা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যেভাবে সামাল দেওয়া হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে প্রথমবার ভোটারের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি।

৫ জানয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যে পাঁচটি বিষয় সবচাইতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল তার অন্যতম হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ইস্যুও তরুণদের আকর্ষণ করতে প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয় সেবার তরুণ প্রজন্ম আওয়ামী লীগের জয়ে ভ‚মিকা রেখেছিল।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন ছিল, তারা তরুণদের এবার কীভাবে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন? তিনি বলছেন, ‘আমরা তো পৃথিবীটা তাদের হাতের মুঠোর ভেতরে এনে দিয়েছি দিনবদলের সনদ ডিজিটাল বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। তারা পৃথিবীর যে প্রান্তে বিচরণ করতে চায়, সেখানেই তারা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, এই যে সুবিধাগুলো তাদের দিয়েছে বর্তমান সরকার। তথ্য প্রযুক্তিতে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। এগুলো সবকিছু হচ্ছে তরুণদের জন্য।

বাংলাদেশের তরুণ ভোটাররা বুঝতে শেখার পর গত ১০ বছর আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলকে ক্ষমতায় দেখেনি। অন্য কোনো দলকে যাচাই করার কোনো সুযোগ তারা পায়নি। কাছাকাছি সময়ে তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল কোটা সংস্কার ও সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলন। এ দুটি আন্দোলনেই বিরোধী জোট বিএনপির ইন্ধন পায়, এর একটি পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদের জন্য এসব আন্দোলন বিব্রতকর হয়ে উঠেছিল।

এজন্য সরকার এই মুহূর্তে তরুণদের জন্য কোন ইস্যুটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, তারা কী চায়, তাদের কোন বিষয়টি সবচাইতে দরকার, তাদের উদ্দেশ্য করে ইশতেহারে এমন কিছু রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, যা তাদের আকর্ষণ করতে পারে। সেটি বোঝার জন্য অনেকের সঙ্গে কথা বলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করছে, চাকরি বিষয়টা এই বেশিরভাগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চাকরি বলেন, নিরাপদ সড়ক বলেন, বা কোটা বলেন, আমরা তো তরুণদের বিরুদ্ধে যাইনি। আমরা তরুণদের সঙ্গেই ছিলাম। আমরা যে তরুণদের চিন্তাগুলোকে আমাদের আমলে নিচ্ছি এটা তাদের উপলব্ধির মধ্যে আছে।

তরুণদের চাকরির চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকছে নানান চমক। নতুন কর্মসংস্থান, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন, নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন, চরাঞ্চলের মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, প্রান্তিক জনগণের আধুনিক টেকনোলজির সব সুযোগ-সুবিধা ও ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতির বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাধান্য পাচ্ছে।

পাঠকের মন্তব্য