অসত্য বলার অনুমতি শরীয়তে

যে কৌশলে মিথ্যা বলা জায়েয

এমন কিছু বাস্তবতা আছে, যেখানে অসত্য বলার অনুমতি শরীয়তে রয়েছে। যেমন কোন ব্যক্তি আত্মরক্ষার ব্যাপারে অপারগ হয়ে পড়লো। মিথ্যা বলা ছাড়া তার আর কোনো বিকল্প নেই। মিথ্যা না বললে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হবে যা সহ্য করা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় শরীয়ত অসত্যের আশ্রয় গ্রহণকে অনুমতি দিয়েছে।

এখানে কথা হচ্ছে প্রথমত, সরাসরি অসত্য বলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে, বরং এমন ঘোর-প্যাঁচমূলক শব্দ বলতে হবে যাতে এ মুসিবত দূর হয়ে যায় তবে কথাটি পরিপূর্ণ মিথ্যা হয় না। যাকে শরিয়তের পরিভাষায় তা’রীজ এবং তাওরিয়া বলা হয়। যার উদ্দেশ্য হলো এমন শব্দ প্রয়োগ যাতে বাহ্যত শব্দটি অন্য অর্থ প্রকাশ করে। অর্থাৎ প্রশ্নকারীর দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরে যায়। আর বাস্তবে মনে মনে শব্দের মূল অর্থকেই চিত্রিত করে রাখতে হবে। ঠিক এভাবেই বহুমূখী অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দ বলে নিজেকে সরাসরি অসত্য বলা থেকে রক্ষা করবে।

মদীনায় হিজরতের সময় আবু বকর (রা.) এর আত্মরক্ষার ঘটনা থেকে আমরা এর দৃষ্টান্ত নিতে পারি।

হিজরতের সময় আবু বকর (রা.) নবী করীম (সা.) এর সাথে মদীনার পানে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ধরে নিয়ে আসার জন্য সর্বত্র গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিল এবং এ ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল যে, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.) কে ধরে এনে দিতে পারবে তাকে একশত উট পুরস্কার দেয়া হবে। ফলে মক্কার প্রায় সকল মানুষই এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

পথিমধ্যে আবু বকর (রা.) কে চিনে এমন এক লোকের সাথে দেখা হয়ে যায়। কিন্তু ঐ ব্যক্তিটি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে চিনত না। আগত ব্যক্তিটি আবু বকর (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলো, আপনার সাথী লোকটি কে? আবু বকর (রা.) চাচ্ছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরিচয় কেউ না পাক, শত্রুরা তার অবস্থান সম্পর্কে অবগত না হোক। এমতাবস্থায় তিনি যদি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরিচয় দিয়ে দেন তবে মারাত্মক হুমকির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আর যদি পরিচয় না দেয়া হয় তাহলে অসত্য বলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। তাই আবু বকর (রা.) অত্যন্ত কৌশলে বললেন, “তিনি আমার পথ প্রদর্শক, যিনি আমাকে পথ দেখান।” -বুখারী : ৩৯১১

এখানে প্রশ্নকারী উত্তর শুনে ভাবলো, সাধারণত ভ্রমনের সময় যেমন পথপ্রদর্শক থাকে ঐ লোকটিও তাই। কিন্তু আবু বকর (রা.) মনে মনে অর্থ করলেন যে তিনি আমায় দ্বীনের পথ দেখান, জান্নাতের এবং মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অর্জনের পথ দেখান।

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, সরাসরি মিথ্যা বলা থেকে কীভাবে নিজেকে হিফাজত করা হয়েছে। এখানে এমন শব্দ বলা হয়েছে যাতে উপস্থিত সমস্যাও দূর হয়ে গেলো এবং অসত্যও বলা হলো না। কেউ যদি ইচ্ছা করে যে সে অসত্য বলবে না তাহলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।

পাঠকের মন্তব্য