তোফায়েল আহমেদ এর লেখা
কবিতা : এক নির্ঘুম রাত

তোফায়েল আহমেদ
এক নির্ঘুম রাত
তোফায়েল আহমেদ
আপ্রাণ ঘুমুতে চেস্টা করলাম, কিস্তু পারছি না,
কার্ডিওলজিষ্ট দেখালাম আজই
তিনি বিকলে হাঁটা আর রাতে ভাল ঘুমুতে বলেছেন।
ঘুমের বড়িও দিয়েছেন, খাব কি একটা বড়ি?
না, আজ এ রাত কাটুক নির্ঘুম ।
একদিন এ রাতে অনেক মানুষ ঘুমিয়েছিল
তাঁরা আর কোনদিন জাগেনি ।
তাদের জীবনে ’দিন’ আর কখনও আসেনি।ঘুম যদি হবেইনা, তবে বিছনায় কেন মিছে গড়াগড়ি!
তড়াক করে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ি।
সোজা হেঁটে মুখোমুখি হলাম পল্লী উন্নয়ন একডেমি চত্তরে
স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটির ধারে।
ডিজি অফিসের দেয়ালে লাগনো ডিজিটাল ঘড়িতে বাজে রাত ১.১২.৪৫।
চারদিকে লাল-নীল-সবুজ নানা রংএর বাহারি বাতির জলমল আলো।
সকালে এখানে লাল-সবুজের পতাকা উড়নো হবে।
গাওয়া হবে,‘‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি”
রাতের এ শূণ্য বেদী ফুলে ফুলে ভরে যাবে।
আলোয় আলোয় সাদা জমিনের মাঝে কালো কোটে বঙ্গবন্ধুকে
অপূর্ব দেখাচ্ছে।উঁচানো তর্জনির ডগায় বিচূরিত আলোয় যেন বিদ্যুতের ঝিলিক।
সে ৭ মার্চের গর্জন বুঝি এখনই আকাশ-বাতাশ বিদীর্ণ- লন্ডভন্ড করে দিবে।চারদিকে লক্ষ বাতির আলো, কিন্তু কেউ কোথাও নেই।
এক অলৌকিক পবিত্র নিস্তবদ্ধতার চাদরে যেন সারা একাডেমি ঢাকা।
সারি সারি মাথা নিচু করে নীরবে দাঁড়ানো, নড়ে না কোথাও একটি পাতা।
চোখে পড়ল না ডিউটির কোন দারোয়ান,শুনিনা কোন হুইসেল।
'কালো রাত'কে ফক্ফকা ফর্সা করে সবাই কীভাবে মরার গুম ঘুমায়?
মাঝখানে প্রতিকৃতি, বর্গাকৃতির বারান্দায় নিরর্থক পায়চারি করি।
আকাশে চোখ যেতেই দেখি রজবের পান্ডুর চাদঁ,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্ষীণ, অপেক্ষা হয়ত সাবানের নতুন চাঁদের।যেতে যেতে এ ক্ষীণ চাঁদ
ছড়িয়ে দিয়েছে ঘুমন্ত প্রকৃতি জুড়ে আবছা আলো-আঁধারি।
আজকের এ রাতের মাঝে ৪৮ বছর আগের সে রাতেকে খুঁজে ফিরি।
ঢাকার আকাশে জুডে ছিল প্রজ্জ্বলিত অগ্নি শলাকা,
রিকসার প্যাডেলে, বস্তি, রেল স্টেশনে ছিন্নমূল মানুষগুলো দেখলো মৃত্যুর বিভীষিকা।
রাজারবাগ, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র লাশ আর লাশ।
কবি শামসুর রাহমান লিখলেন, এ লাশ আমরা রাখব কোথায়?
প্রকৃতির অমোঘ বিধান,ভোর হলো। কিন্তু কেউ দোর খোলেনা।
সকল শহীদের রক্তে সিক্ত সবুজ জমিনে সেদিন এক নতুন সূর্য উঠল,
লাল আর সবুজ, সবুজে আর লালে মাখামাখি, এ হাত থেকে ও হাতে
এক পতাকা, মুখে শ্লোগান ‘জয় বাংলা’
বহু অশ্রু, রক্ত, জীবন দিয়ে অবশেষে হয়ে গেল বাংলার জয়।
আজ এ রাতে এখানে দাঁড়িয়ে স্মৃতির মহাসড়কে
আমি আমার সে বাংলাকে খুঁজে বেড়াই।
এ কবিতাটি ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশ পল্লী উর্রয়ন একাডেমি, কুমিল্লায় বসে লেখা।
পাঠকের মন্তব্য