মুরগি ছানাকে বাঁচাতে ১০টাকা নিয়েই হাসপাতালে, খুদের কীর্তি

খুদের কীর্তি
শিশুরাই নাকি ঈশ্বরের নিকটতম প্রতিনিধি। তার আত্মা সম্পূর্ণ পবিত্র। সমস্ত শুভকাজের যথোপযুক্ত আধার নাকি শিশুমন। এমন গল্পকাহিনি তো সকলেই কমবেশি শুনেছেন। কিন্তু, মিজোরামের বছর ছয়ের শিশু যা করল, তাতে এসব প্রবাদ নেমে এল বাস্তবের মাটিতে।
মিজোরামের সাইরাংয়ের বাসিন্দা ডেরেক লালছানহিমা। বয়স মাত্র ৬ বছর। সাইকেল চালাতে সবে শিখেছে। একদিন সাইকেল চালাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত প্রতিবেশীর এক মুরগি ছানা পড়ে গিয়েছিল তার সাইকেলের চাকার তলায়। অতটুকু ছানা সাইকেলের নিচে পড়লে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাঁচেনি প্রতিবেশীর মুরগি ছানা।
কিন্তু খুদে ডেরেক তা বুঝতে পারেনি। সে সঙ্গে সঙ্গে সাইকেল থেকে নেমে ছোট্ট হাতে পরম মমতায় তুলে নেয় মুরগির ছানাটিকে। ছুটে যায় বাড়ির মধ্যে। কেঁদেকেটে বাবাকে জানাতে থাকে তার কৃতকর্মের কথা। মুরগি ছানাকে দেখে ডেরেকের বাবা বুঝতে পারেন, ছানাটি বেঁচে নেই। কিন্তু ছেলের কান্নাকাটি দেখে তিনিও কিছুটা বিহ্বল হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন, পাখির ছানার এমন দশা ভীষণ আহত করেছে ৬ বছরের ছোট্ট ছেলেটাকে। তিনি ছেলেকে বলেন, মুরগি ছানার চিকিত্সা প্রয়োজন।
এটা শুনেই ডেরেক হাতের কাছে থাকা একটি ১০ টাকার নোট তুলে নিয়ে ছুট্টে বেরিয়ে যায়। এক হাতে ১০টাকা, আরেক হাতে মুরগি ছোট্ট ছানা। এই অবস্থায় যখন হাসপাতালে পৌঁছায় ডেরেক, স্তম্ভিত হন চিকিত্সক, নার্সরাও। কী হয়েছে জানতে চান তাঁরা। ডেরেক হাঁপাতে হাঁপাতে সবটা বলে। এও জানাতে ভোলে না যে, তার সাইকেলের চাকায় আঘাত লেগেছে ছোট্ট মুরগি ছানার। একে বাঁচাতেই হবে। ৬ বছরের ছেলের এমন সারল্য মন ছুঁয়ে যায় হাসপাতালের সকলের। সঙ্গে সঙ্গে ডেরেকের ছবিটি তুলে নেন এক নার্স। সেই ছবি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কাহিনি। ব্যস, দ্রুতগতিতে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে নেটদুনিয়ায়। খুব দ্রুত নেটিজেনদের সঙ্গে পরিচয় হয় ডেরেকের।
এখানেই কাহিনির শেষ নয়। চিকিত্সকরা যখন ডেরেককে জানান, মুরগিছানাটি মৃত। তাঁকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব নয়, তা মোটেই বিশ্বাস করে না ডেরেক। উলটে জানায়, চিকিত্সার জন্য সে আরও টাকা আনবে বাড়ি থেকে। যেন মুরগি ছানাকে বাঁচিয়ে দেন ডাক্তার কাকুরা। ছেলেকে কিছুতেই প্রকৃত সত্যিটা বিশ্বাস করানো যায় না। বেগতিক বুঝে হাসপাতাল থেকে খবর পাঠানো হয় ডেরেকের বাড়িতে।
ততক্ষণে অবশ্য ছ বছরের সরল, নিষ্পাপ ছেলের কীর্তি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। সকলেই বলছেন, পশুপাখির জন্য এমন দরদ দেখাই যায় না। শেষে ডেরেকের বাবা হাসপাতালে পৌঁছে ছেলেকে সত্যিটা বলেন, বিশ্বাস করান। বাবার কাছে একথা শুনে ছেলে তো কেঁদেই আকুল। সকলেই বলছেন, ডেরেক স্বয়ং ঈশ্বরের দূত। তার মধ্যে দিয়েই ঈশ্বর পৃথিবীর সকলের মঙ্গল সাধিত করবেন।
পাঠকের মন্তব্য