নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর ফরজ

নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর ফরজ
নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর ফরজ করা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে
আন-নিসা রুকু;-১৫ আয়াত;-১০১-১০৪ কোরানের কথা-৮৩
আলোচ্য আয়াতে ইসলামী শরিয়তের ইবাদতের একটি বিধান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাহল; আপদ কালীন সময়ে নামাজের বিধান।
১০১/وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُواْ مِنَ الصَّلاَةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُواْ لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا
অর্থাৎ; যখন তোমরা পৃথিবীতে অভিযানে যাও, তখন নামাজে কিছুটা হ্রাস করলে তোমাদের গোনাহ নাই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে। নিশ্চয় কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
অভিযান বলতে এখান শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযান বোঝানো হয়েছে। নামাজ হ্রাস মুসাফির দের জন্যও করা হয়েছে। আয়াতের বর্ণায় বোঝা যায় এটি সেটি নয়। এখানে শত্রুদের আক্রমনের আশংকার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থা নামাজ কি ভাবে আদায় করতে হবে তা পরের আয়াতে বিস্তারিত বলা হয়েছে। নামাজের এই হ্রাস অবস্থাকে ‘কসর’ নামাজ বলে।
১০২/وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاَةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلْيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّواْ فَلْيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُم مَّيْلَةً وَاحِدَةً وَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن كَانَ بِكُمْ أَذًى مِّن مَّطَرٍ أَوْ كُنتُم مَّرْضَى أَن تَضَعُواْ أَسْلِحَتَكُمْ وَخُذُواْ حِذْرَكُمْ إِنَّ اللّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
অর্থাৎ; আর যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন এবং তাদের ইমামতী করতে চান, তখন যেন একদল আপনার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা নিজেদের অস্ত্র সংগে রাখে। তার পর তারা যখন সেজদা সম্পন্ন করবে, তখন যেন তারা তোমাদের পিছনে অবস্থান নেয়, আর অন্য দল যারা নামাজ পড়েনি তারা যেন আপনার সাথে নামাজ পড়ে নেয় এবং তারা যেন আত্মরক্ষার হাতিয়ার সঙ্গে রাখে। কাফেররা চায়, তোমরা যেন তোমাদের অস্ত্র শস্ত্র ও আসবাব পত্র সম্পর্কে অসতর্ক হও যাতে তারা একযোগে তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কষ্ট হয় বা তোমরা অসুস্থ হও তবে স্বীয় অস্ত্র পরিত্যাগ করায় তোমাদের কোন গোনাহ নেই।সাথে তোমাদের ঢাল নিয়ে নাও। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের জন্য অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।
আপদ কালীন সময়ে যুদ্ধের ময়দানে বা অভিযানে যখন নবী সঃ স্বয়ং মুজাহীদদের সাথে থাকতেন, নামাজের সময় সকলেই রসুলের ইমামতীতে নামাজ আদায় করতে চাইতেন। কিন্তু অরক্ষীত অবস্থায় নামাজ কালীন সময়ে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। তাই নবী সঃ এর ইমামতীতে যাতে সুরক্ষীত অবস্থায় সকলেই নামাজ আদায় করতে পারেন তার একটি উত্তম পন্থা এ আয়াতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে অর্ধেক লোক অস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় রসুলের পিছনে নামাজ শুরু করবে, অন্য দল তাদের সুরক্ষায় থাকবে। যখন প্রথম রাকাতের সেজদা শেষ হবে রসুল বসে থাকবেন, মোক্তাদীগন উঠে তাদের বাকী এক রাকাত নিজেরা আদায় করে, সালাম ফিরিয়ে সুরক্ষার কাজে নিয়জিত হবে। দ্বিতীয় দল মোক্তাদী হয়ে হুজুরের ইমামতীতে হুজুরের বাকী রাকাতে শরিক হবে। হুজুর সঃ তাঁর দ্বিতীয় রাকাত শেষ করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন, আর মোক্তাদীগন নিজেরা ছুটে যাওয়া রাকাতের মত করে আর এক রাকাত নিজেরা পড়ে যথারীতি নামাজ শেষ করবেন। নামাজ সংক্ষেপ বা কসর করার কথা আগের আয়াতেই বলা হয়েছে।
১০৩/فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاَةَ فَاذْكُرُواْ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
অর্থাৎ; অতঃপর তোমরা যখন নামাজ সম্পন্ন কর, তখন দাঁড়িয়ে বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদ মুক্ত হয়ে যাও তখন নামাজ যথাযত ভাবে আদায় করবে। নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের উপর ফরজ করা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে।
বিপদের আশংকা দূর হলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজকে মুমিনদের জন্য ফরজ করা হয়েছে এবং তা সময়ের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এজন্যই পবিত্র কোরআনে নামাজ কায়েম করতে বা এর ধারা বজায় রাখতে বলাহয়েছে। হজরত জিবরাঈল আঃ রসুল সঃ কে একদিন পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ সময়ের শুরুতে ও দ্বিতীয় দিন পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ সময়ের শেষ মুহূর্তে পড়িয়ে, এরই মাঝে নামাজের ওয়াক্ত বুঝিয়ে দিয়ে ছিলেন।
১০৪/وَلاَ تَهِنُواْ فِي ابْتِغَاء الْقَوْمِ إِن تَكُونُواْ تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمونَ وَتَرْجُونَ مِنَ اللّهِ مَا لاَ يَرْجُونَ وَكَانَ اللّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থাৎ; আর শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করোনা। যদি তোমরা ব্যাথিত হয়ে থাক, তবে তারাওতো ব্যাথিত হয়েছে তোমাদেরই মত। আর তোমরা আল্লাহর কাছে আশাকর যা তারা আশা করেনা। আল্লাহ মহা জ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।
অন্যত্র বলা হয়েছে যুদ্ধ চালিয়ে যাও, যতক্ষন না ফেতনা শেষ হয় ও আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা পায়। এ আয়াতে বলা হচ্ছে শত্রুদের পিছু ধাওয়া করতে যেন ঢিলেমি করা না হয়। তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে, মনে রেখো তারাও আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। আর বিনিময়ে তোমরা আল্লাহর কাছে কিছু প্রাপ্তির আশাকর, যা তারা করেনা।
পাঠকের মন্তব্য