চলন্ত ট্রেনে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, অবশেষে মামলা নিল পুলিশ

চলন্ত ট্রেনে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, অবশেষে মামলা নিল পুলিশ
রাজধানীতে চলন্ত ট্রেনে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সম্রাট নামের এক যুবককে আটকের পর পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন ট্রেনযাত্রীরা। উদ্ধার করা হয়েছে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে। তারপরও মামলা নিতে গড়িমসি করেছে ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশ। মামলা নেয়ার নামে মেয়েটিকে প্রায় ১০ ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে উদ্ধারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে অভিযুক্ত সম্রাট।
জানা গেছে, মেয়েটির বাসা রাজধানীর মানিকনগরে। স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সে। বুধবার বিকেলে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক স্বজনকে দেখার উদ্দেশ্যে সে বাসা থেকে বের হয়। হাসপাতালের সামনে পৌঁছলে সম্রাট নামের এক যুবক তাকে ভুল বুঝিয়ে রিকশায় উঠিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। পরে যমুনা এক্সপ্রেস নামের ট্রেনে ওঠানো হয় তাকে। চলন্ত ট্রেনের টয়লেটে নিয়ে ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে সম্রাট। বিষয়টি কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
ধর্ষিত হওয়ার পর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ট্রেনের বগিতে আসার পর তার চলাফেরা অস্বাভাবিক দেখে যাত্রীরা কারণ জানতে চান এবং তার সঙ্গে কেউ আছেন কি-না জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় সম্রাট মেয়েটির স্বজন পরিচয় দেয়। কিন্তু তার পরিচয়ে সন্দেহ হওয়ায় ট্রেনের মধ্যে তাকে আটকে রাখেন যাত্রীরা। ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছালে সম্রাটকে পুলিশে দেয়া হয়। স্টেশনে থাকা কয়েকজন যাত্রী চিকিৎসার জন্য মেয়েটিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলা হয়।
খবর পেয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল শিকদার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান মেয়েটির কাছে। বিমানবন্দর স্টেশনের রেলওয়ে পুলিশও উপস্থিত হয় হাসপাতালে। মেয়েটিকে সেখান থেকে পুলিশ বিমানবন্দর স্টেশনে নিয়ে যায়। পরে রাত ১২টার নেয়া হয় কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে থানায়। রাতুল সাংবাদিকদের জানান, থানায় নেয়ার পর পুলিশ মামলা নিতে ঢিলেমি করে। অসুস্থ মেয়েটিকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয় থানায়। কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে মেয়েটিকে ঢামেক হাসপাতালে নিতে বলা হয়েছিল। তারপরও পুলিশ তাকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে মামলা নেয়ার নামে থানায় বসিয়ে রাখে।
তবে পুলিশ বলছে, মেয়েটি তার বাড়ির ঠিকানা ঠিকমতো দিতে পারছিল না। এ কারণে তার বাবা-মায়ের সন্ধান পেতে দেরি হয়। সকালে তার মা থানায় উপস্থিত হয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় সম্রাটকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। মেয়েটির মা সাংবাদিকদের জানান, বুধবার বিকেলে তার মেয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যায়। এরপর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ইনচার্জ এসআই রুশো বণিক বলেন, মেয়েটির পরিবারের লোকজন থানায় আসতে দেরি করায় তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তার মা থানায় এলে আসামি সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। পরে পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুপুরে আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে সে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। সম্রাটের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সে ভবঘুরে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। কখনও কখনও সে স্টেশন এলাকায় যাত্রীর মালপত্রও টানে।
পাঠকের মন্তব্য