ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল ঘিরে কালো টাকার ছড়াছড়ি

ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল ঘিরে কালো টাকার ছড়াছড়ি

ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল ঘিরে কালো টাকার ছড়াছড়ি

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল সামনে রেখে কালো টাকার ব্যাপক ছড়াছড়ি চলছে বলে অভিযোগ মিলেছে। ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও কয়েকজন প্রার্থীই এ অভিযোগ তুলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতাকর্মীরা বলছেন, যেহেতু এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতরা তাদেরই বড় ভাই, তাই তাদের নিয়ে মিডিয়ায় এই মুহূর্তে কথা বলতে পারবেন না তারা। তবে কয়েকজন প্রার্থীকে বিজয়ী করানোর জন্য টাকা ছড়ানোর পাশাপাশি অন্যদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রার্থী।

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ছাত্রদলের এ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। ২৭ বছর পর সংগঠনটির কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। দুই শীর্ষ পদ অর্থাৎ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮ জন ছাত্রনেতা ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। সারাদেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলর এবার সরাসরি ভোটে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।

তবে কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের ইচ্ছে থাকলেও অনেক ভোটার বা কাউন্সিলরই বলছেন, তাদের প্রভাবিত করতে নানা রকম চেষ্টা চালাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এক্ষেত্রে অর্থ ঢালার পাশাপাশি হুমকি-ধামকিও চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বলেন, ‘আমি সারাদেশে কাউন্সিলরদের কাছে গিয়েছি। অনেক কাউন্সিলর বলেছেন, তাদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। তবে তারা কারও হুমকি অথবা কালো টাকার কাছে বিক্রি হবেন না।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্যে, সারাদেশে হামলা-মামলায় জর্জরিত দলটির নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেন না। ঠিকমত দু’মুঠো খাবারও জোটে না কারও কারও। অনেকে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে বাসায় দারোয়ান বা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সেই বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে এমন টাকা ওড়ানোর বিষয়টিতে চক্রান্তের গন্ধও খুঁজছেন অনেকে। 

সংগঠনটির বিভিন্ন সূত্র বলছে, কাউন্সিলকে সামনে রেখে প্লেনে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে-ফিরে কাউন্সিলরদের কাছে ভোট চাইছে একটি সিন্ডিকেট। অন্যথায় ১৪ তারিখের পর দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

সূত্রের তথ্য, ঢাকার বিভিন্ন নামিদামি হোটেলে রুম বুক করে কাউন্সিলরদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করছে ওই সিন্ডিকেট। অঞ্চলভেদে নামিদামি স্মার্টফোন গিফট করা হচ্ছে কাউন্সিলরদের। মোটা অংকের টাকাও বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেওয়ার লোভও দেখানো হচ্ছে। 

অবাধ এবং নিরপেক্ষ, কালোটাকা মুক্ত নির্বাচনের জন্য বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে এলেও তাদের সংগঠনেই এমন কালো টাকার ছড়াছড়ি, পেশী শক্তি প্রদর্শন অনেককে হতাশ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সিন্ডিকেট বিগত সময়ে কমিটি বিক্রি করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখনো তারাই কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে টাকা লগ্নি করছে। 

কয়েকজন প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান পাঁচ মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন ভোটের মাধ্যমে নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের। তার সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে এই সিন্ডিকেট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, এক প্রার্থী আছেন দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে। আবার ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতার আপন ভাই। তাকে ছাত্রদল সভাপতি বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে এই সিন্ডিকেট। চলছে টাকার ছড়াছড়ি।

একজন প্রার্থী অভিযোগের সুরে বলেন, আমরা যারা কোনো সিন্ডিকেট সদস্য নই, কোনো বড় ভাই নেই, দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছি, তাদের জন্য এই কাউন্সিল হতাশার। কাউন্সিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় ওই সিন্ডিকেট। যেন চিরতরে এই ছাত্রসংগঠনটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

জানতে চাইলে নড়াইল জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আসন্ন কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার মঞ্জুরুল সাঈদ বাবু বলেন, কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি একটি সিন্ডিকেট সভাপতি পদের একজন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে। তারা টাকা পয়সাও ছড়াচ্ছে। তবে মনে হয় না, কাউন্সিলররা টাকায় বিক্রি হবে। ছাত্রদলকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই তারেক রহমানের নির্দেশিত পথে আমাদের হাঁটতে হবে। তিনি যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেভাবেই সরাসরি ভোটে আমাদের নেতা নির্বাচিত করবো।

পাঠকের মন্তব্য