একদফা আর আন্দোলন নয়, ভাঙন ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি

একদফা আর আন্দোলন নয়, ভাঙন ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি

একদফা আর আন্দোলন নয়, ভাঙন ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি

বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, মূলত পাঁচটি কারণে ভেঙে যাচ্ছে বিএনপি। সেই কারণগুলোর প্রথমটি হল, বিএনপির নেতা কর্মীর বড় একটি অংশ মনে করছে আন্দোলনই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ। সরকারের বিরুদ্ধে একদফা আন্দোলন না করলে বেগম জিয়ার মুক্তি অসম্ভব। এই মতে বড় দুই নেতার মধ্যে এরই মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছে।

তাদের একজন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি মনে করেন আইন আদালতের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অসম্ভব এবং অবাস্তব। আন্দোলন ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো পথ নেই।

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে গেলে দলের যে ক্ষতি হবে তাতে দল গভীর সংকটের মুখোমুখি হবে। তা ছাড়া আন্দোলন করার মতো বাস্তব পরিস্থিতিও দেশে এখন নেই। আর এ নিয়ে দুই নেতার বিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি এই একটি কারণে দুই নেতার মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে বড় মতবিরোধ আগে থেকে তারেক জিয়াকে নিয়ে। অনেকেই তার নেতৃত্ব মানতে নারাজ। তাদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন সব সময় তারেক বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনি মনে করেন লন্ডন থেকে বসে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা না বুঝে যে নির্দেশনাগুলো দিচ্ছেন তারেক জিয়া তাতে দলের বিশাল ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তারেক জিয়ার সকলের মতামত নিয়েও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। একাই নিচ্ছেন।

অন্যদিকে একই ইস্যুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম দাবি করছেন, তারেক জিয়াই খালেদা জিয়ার পর বিএনপিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। আর তিনি যেহেতু নেতা তাই তার দেওয়া নির্দেশনা ভুল হোক বা সঠিক হোক সেটি পালন করা উচিত এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি বিএনপিকে ঐক্যমতে রাখবে। এছাড়া তারেক জিয়াকে বিএনপির ঐক্যের প্রতিক বলেও মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তবে অনেকেই আবার উল্টোটা ভাবেন।

তৃতীয় যে ইস্যুটি নিয়ে বিএনপি বিপাকে পড়েছে সেটি হল, দলের ছয় জন নির্বাচিত এমপির পদত্যাগ ইস্যু। ড. খন্দকার মোশরফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় একাধিক নেতা এবং তৃণমূলের প্রায় ৮০ ভাগ নেতা কর্মী মনে করেন, বিএনপির যে ছয় জন সংসদ সদস্য সংসদে গিয়েছেন তাদের অবশ্যই সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। সংসদে তাদের উপস্থিতির কোন মানে হয় না। যেহেতু এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে সংসদে থাকার মাধ্যমে তারা এই সরকারকে বৈধতা দিচ্ছেন।
 
অন্যদিকে দলের ২০ ভাগ নেতা কর্মীরা মনে করছেন, সংসদের ভেতরে এবং বাইরে যে আন্দোলন, ক্ষুদ্র হলেও সংসদে গিয়ে যেহেতু তারা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। এটা বিএনপির জন্য ইতিবাচক। এটা ভবিষতের আন্দোলন ভীত তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নাকি তাই ভাবছেন।

চতুর্থ যে বিষয়টি সম্প্রতি বিএনপির মধ্যে ভাঙনের গতি বাড়িয়েছে সেটি হচ্ছে, বিএনপিতে দ্রুত কাউন্সিল অধিবেশন করা। কাউন্সিল অধিবেশন করে নতুন নেতৃত্ব দাঁড় করা। একটি দল মনে করছেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যেহেতু বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে এবং যারা এই সময়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করেছিলেন তারা যেহেতু সেই কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সফল হননি, তাই তাদের সরে যাওয়া উচিত। অবিলম্বে একটি কাউন্সিল করে বিএনপির শূন্য পদগুলো পূরণ করতে নতুন নেতৃত্ব সামনে আনা উচিত। তবে অন্য একটি গ্রুপ মনে করেন, যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া এখন জেলে এবং তারেক জিয়া দেশের বাইরে। তাই এই অবস্থায় সম্মেলন করলে বিএনপিতে আরো বিভক্তি দেখা যাবে। সম্মেলন হলেও তাদের উপস্থিতিতে হওয়া ভালো।

সর্বশেষ অর্থাৎ ৫ নম্বরের যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিচ্ছে তা হচ্ছে ২০ দলীয় জোট বনাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির একটি গ্রুপ মনে করেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির আদর্শিক জোট নয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যেগুলো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিএনপির মূল শক্তি ছিল ২০ দলীয় জোট এবং ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় এবং সচল করার মধ্য দিয়েই বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।

অন্যদিকে আরেকটি গ্রুপের ধারণা, তারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য সব মহলের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরী করা দরকার। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল মনে করেন, ২০ দলীয় জোটে থাকার ফলে আন্তর্জাতিক মহলের যে সমর্থন তা থেকে বিএনপি বঞ্চিত হয়। কারণ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে থাকাটা মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না।

পাঠকের মন্তব্য