২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস

২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস

২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস

২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস। আর এই দিনটি মনে করিয়ে দেয় আমাদের প্রত্যকের হার্টকে সুস্থ রাখার কথা। সাধারণত শরীরের অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের মধ্যে মস্তিষ্ক এবং হৃৎপিন্ড বা হার্টকে নিয়েই ভাবনা থাকে বেশি। এর যেকোনো একটি বিকল হলে মহাবিপর্যয় নেমে আসে। রোগ বিবেচনায় অবশ্য হার্টকে নিয়েই সকলের ভয় থাকে বেশি। তাই হার্টকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই সচেতন হয়ে চলতে হবে এবং কিছু সঠিক উপায় অবলম্বন করতে হবে।

হৃদরোগ বলতে সাধারনভাবে হৃৎপিন্ড, রক্তবাহী ধমনী ও শিরা, মস্তিষ্ক ও বৃক্ক সম্পর্কিত রোগ বোঝায়। হৃদরোগের অনেক কারণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রধান। সাথে সাথে বয়সের সাথে হৃৎপিন্ড ও ধমনীর গঠনগত পরিবর্তনও হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, তামাক জাতীয় দ্রব্য বর্জনের মাধ্যমে অনেকাংশে হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।

যে সকল কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় : 

★ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
★ মহিলাদের চেয়ে পুরুষেরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয়। 
★ অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
★ বাবা-মায়ের হৃদরোগ থাকলে তাদের সন্তানদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অধিক থাকে। এর মূল কারণ পরিবারের একই খাদ্যাভ্যাস ও   ধূমপানের অভ্যাস।
★ উচ্চ রক্তচাপ করোনারি হৃদরোগের একটি মারাত্মক রিস্ক ফ্যাক্টর। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিন্ডের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
★ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার আধিক্য হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর।
★ হৃদরোগ হওয়ার পেছনে ডায়াবেটিসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
★ অধিক ওজন হলে শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে হৃদপিণ্ডের অধিক কাজ করতে হয়। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
★ শারীরিকভবে নিস্ক্রিয় লোকদের হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অলস জীবন-যাপন করোনারি হৃদরোগের জন্য আরেকটি রিস্ক ফ্যাক্টর।
★ হৃদরোগ হওয়ার পেছনে ধূমপানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি নিয়মিত ধূমপান করে থাকেন তার হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঝুঁকি থাকে।

যে সকল খাবার গ্রহণের ফলে হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন : 

হার্টকে সুস্থ রাখতে বা শক্তিশালী করতে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা অত্যন্ত কার্যকরী। নিচে তা উল্লেখ করা হলো- 

বাদাম : বাদামের মধ্যে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা হার্টের জন্যে উপকার। নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়ে। সেই সঙ্গে বাদাম একটি লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। সব ধরনের বাদামই ভালো, তবে চীনাবাদাম সহজলভ্য বলে আপনি এটি প্রতিদিন খেতে পারেন।

কমলা : কমলায় আছে পেকটিন নামে একপ্রকার আঁশ যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। আরও  আছে পটাসিয়াম, যা ব্লাড প্রেশার কমায়।

সামুদ্রিক মাছ : সামুদ্রিক মাছ হার্টের জন্যে উপকারী। এতে রয়েছে ওমেগা-৩। রূপঁচাদা, কোরাল, রূপসা জাতীয় সামুদ্রিক মাছ বাংলাদেশে পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়া যেতে পারে। বিদেশি সামুদ্রিক মাছের মধ্যে টুনা, স্যামন, সারডিন, ম্যাকারেল, হেরিং ইত্যাদি যদি সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে খেতে পারেন। যা আপনার হার্টকে সুস্থ করে তুলতে পারে।

শিম : শিমে আছে সয়া প্রোটিন, যা রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রাকে কমায়। আধাকাপ শিমে আছে নয় গ্রাম কোলেস্টেরল কমাবার উপযোগী আঁশ।

গাজর : গাজর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে যে ধরনের দ্রবণীয় আঁশ পাওয়া যায়, তা কোলেস্টেরল কমিয়ে থাকে।

ওট : ওটের মধ্যে থাকা সলিউবল আঁশ কোলেস্টরল তৈরি করতে বাঁধা দেয়। এই আঁশ হৃদপিন্ডের শিরার রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে।

টমেটো : টমেটো হৃদপিন্ডের শিরাকে শক্ত হতে দেয় না। টমেটোর মধ্যে থাকা লাইকোপেন টমেটোকে লাল করে। যাদের শরীরে লাইকোপেন ভালো মাত্রায় থাকে, তাদের হৃদপিন্ডের শিরার সমস্যা কমে যায়।

জলপাইয়ের তেল : অলিভওয়েল বা জলপাইয়ের তেল কোলেস্টরল প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে থাকা ম্যানুস্যাচুরেটেড চর্বি বাজে কোলেস্টরল প্রতিরোধ করে। এটি শিরার রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। 

রসুন : রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল হলো এলডিএল, রসুন এই এলডিএলের মাত্রা কমাতে দারুন উপকারী।  তাই রসুন উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে গ্লুকোজের মান নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

টক দই : চিনি ছাড়া দই অর্থাৎ টক দই হৃৎপিণ্ডের পাশাপাশি পুরো শরীরের জন্যেই অত্যন্ত উপকারী। করোনারি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন যারা, তাদের জন্যে টক দই বিশেষভাবে উপকারী। টক দই আপনার পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে এটি ত্বকের জন্যেও উপকারী। তাই প্রতিদিন এক কাপ টক দই খাবারের তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন

মিষ্টি আলু : আলু বেশি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, সাধারণভাবে এমনটাই মনে করা হয়। কিন্তু  মিষ্টি আলু এর ব্যতিক্রম। কারণ মিষ্টি আলু লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবার। আর মিষ্টি আলুতে আছে দ্রবণীয় আঁশ, ভিটামিন এ এবং লাইসোপেন, যা হার্টের জন্যে উপকারী।

সয়াদুধ : সয়াদুধ বা সয়াপ্রোটিন প্রথম শ্রেণির উদ্ভিদজাত প্রোটিন। এটি গরুর দুধের বিকল্প এবং শতভাগ কোলেস্টেরল মুক্ত। হৃদরোগীরা গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে সয়াদুধ/সয়াপ্রোটিন ড্রিংকস প্রতিদিন ২৫০ মিলি খেতে পারেন।

সুতরাং আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে হলে এসকল খাবারগুলো নিয়মিত গ্রহণ করুন। এছাড়াও,


দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

দূষিত বায়ু এড়িয়ে চলুন। 

ধুমপান থেকে বিরত থাকুন। 

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

লেখিকা : উম্মে হাফসা ইভা, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী।

পাঠকের মন্তব্য