ভাস্কর্য অপসারনের অধিকার একজন ওয়াজের বক্তার আছে কি

ভাস্কর্য অপসারনের অধিকার একজন ওয়াজের বক্তার আছে কি
ধরে নেওয়া যাক ভাস্কর্য হারাম- তারপরও সেটা অপসারণ করার অধিকার একজন ওয়াজের বক্তার আছে কি? ভাস্কর্য কোথায় থাকবে বা কোথায় থেকে অপসারিত হবে- তার সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে, সরকার আছে। কর্তৃপক্ষ চেয়েছে তাই ভাস্কর্য হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে আরও অনেক কিছুই নির্মাণ করতে পারে। আবার চাইলে অপসারণও করতে পারে।
আপনি যে আইনের কথা বলছেন, যে ফতোয়ার কথা বলছেন, সেই আইন দিয়ে তো কর্তৃপক্ষ দেশ চালাচ্ছে না। ওই আইন মানতে তারা বাধ্যও নয়। আপনি যদি কোনোদিন কর্তৃপক্ষ হতে পারেন সেদিন আপনি আপনার আইন বলবৎ করতে পারবেন। সেদিন আপনার বিরুদ্ধে কেউ বেআইনী হুমকি দিলে তাকে ধরে জেলে ভরতেও পারবেন। তাই আগে গলাবাজি নয়, আগে কাজ করুন। আগে কর্তৃপক্ষ হোন। বিশ্বনবীর জীবনীতে আমরা সেই শিক্ষাই পাই।
বিশ্বনবী মক্কায় কাটিয়েছেন ১৩ বছর। এই ১৩টি বছর তিনি কাবায় গিয়েছেন হাজার হাজার বার, পবিত্র কাবায় গিয়ে আল্লাহর দরবারে সাহায্য চেয়েছেন অসংখ্য বার, কিন্তু কাবার মধ্যে অবস্থিত ৩৬০টি মূর্তিকে একটা টোকাও দেননি। সাহাবীদের নিয়ে মুর্তিবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টাও করেননি। নতুন মূর্তি কাবায় ঢোকালে মক্কা অচল করে দেওয়ার হুমকিও দেননি। কারণ তিনি জানতেন তিনি মক্কার কর্তৃপক্ষ নন। তার হুকুম মক্কায় চলে না। মক্কাবাসী এখনও তাকে রসুল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং আল্লাহর হুকুম মানার অঙ্গীকার করেনি। তারা হুকুমদাতা হিসেবে উতবা-শায়বাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কাজেই সেখানে উতবা শায়বারা যে আইন করবে সেটাই চলবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। বিশ্বনবী তাই মুর্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, জনগণকে তওহীদের দিকে ডেকে গেছেন একাধারে ১৩টি বছর। বিশ্বাসের উপর জোর চলে না- একথা বোঝার জন্য কি মহাপণ্ডিত হওয়া লাগে?
আমাদের দেশের জনগণ চলে একদিকে, সরকার চলে আরেকদিকে, আর তথাকথিত আলেমরা চলে সম্পূর্ণ ভিন্নদিকে। জনগণের কোনো পাত্তা সরকারও দেয়না, আলেমরাও দেয়না। গায়ের জোরে আর কূটনীতিক মারপ্যাচ খাঁটিয়েই তারা উদ্দেশ্য অর্জন করতে চায়। এর কোনোটাই বিশ্বনবীর কর্মসূচি নয়। যারা সেকুলার রাজনীতি করেন, তারা বিশ্বনবীর কর্মসূচির অনুসরণ করবেন না সেটাই স্বাভাবিক। তারা তাদের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে কোনো পদ্ধতি (সৎ বা অসৎ) অবলম্বন করতে পারেন। কিন্তু যারা ইসলামের কথা বলেন, তাদের তো বিশ্বনবীর পদক্ষেপ অনুসরণ করা ঈমানী বাধ্যবাধকতার বিষয় বলেই জানতাম। তারপরও তারা কেন জনগণকে পাশ কাটিয়ে গলাবাজি আর টুপি দাড়ির সংখ্যা দেখিয়েই উদ্দেশ্য অর্জন করতে চায় ? আদতে ঘটনাটা কী ? তারা জনগণকে পাত্তা দেন না, নাকি জনগণ তাদেরকে পাত্তা দেয় না বিধায় তারা জনগণকে নিয়ে পথচলার সাহস পান না ?
ফেসবুক স্ট্যাটাস লিঙ্ক : মোহাম্মদ আসাদ আলী
পাঠকের মন্তব্য