শিক্ষা আইন-২০২১; মোকাবিলা করতে হবে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

শিক্ষা আইন-২০২১; মোকাবিলা করতে হবে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

শিক্ষা আইন-২০২১; মোকাবিলা করতে হবে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে নানা ধরনের অনিয়ম ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। অনিয়ম ও নৈরাজ্যের মধ্যে রয়েছে নোটবই-গাইডবইয়ের প্রবল উপস্থিতি, অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনিতে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগ ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব নৈরাজ্য ও অনিয়মের প্রেক্ষাপটেই মঙ্গলবার বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘শিক্ষা আইন-২০২১’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপ হিসাবে খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিসভায়।

আইনটির চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বৈধ থাকবে। তবে তা পরিচালনার জন্য সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। শিক্ষকরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না, একই কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুল-কলেজ চলাকালে কোচিংয়ে যেতে পারবেন না। খসড়া আইনে সব ধরনের নোট ও গাইডবই নিষিদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। 

আইনের ১৬ ধারার ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোটবই বা গাইডবই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সহায়ক বই প্রকাশ করা যাবে। এতে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু ও এর আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর থাকা চলবে না এবং শিক্ষার্থীদের এই সহায়ক বই কিনতে বা পড়তে কোনোভাবেই বাধ্য করা যাবে না। তেমন কিছু করা হলে তা অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হবে। গণমাধ্যমও পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু ও এর আলোকে পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর প্রকাশ করতে পারবে না। যদি তা করতে চায়, তাহলে গণমাধ্যমকে সরকারের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনের এ বিধান লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আসবেন।

শিক্ষাক্ষেত্রের নৈরাজ্য ও অনিয়ম বন্ধে একটি যথোপযুক্ত আইনের প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন থেকেই অনুভূত হচ্ছিল। বর্তমানে আইনের যে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে, এর শুরুটা অনেকদিন আগের। একবার মন্ত্রিসভায় আরেকটি খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছিল; কিন্তু নানা অসঙ্গতির কারণে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার আশা করা যায়, খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাবে এবং তা চূড়ান্ত আইনে পরিণত হবে। আমরা মনে করি, খসড়া আইনে যেসব বিধান রাখা হয়েছে, সেগুলো যথার্থ এবং এতে জনদাবির প্রতিফলন ঘটেছে। 

বিশেষত কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমসহ সমাজের বিভিন্ন স্তর প্রতিবাদমুখর ছিল অনেক দিন আগে থেকেই। নোটবই ও গাইডবইয়ের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল গণমাধ্যম ও সমাজের সচেতন মহল। সেদিক থেকে ‘শিক্ষা আইন-২০২১’-এর চূড়ান্ত খসড়াটি সন্তোষজনক বলতে হবে। তবে আমরা মনে করি, যে কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়নই বড় কথা নয়, আইনের যথার্থ প্রয়োগই আসল কথা। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও এর অনেক কিছুই এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষা আইনটিও যদি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে, বাস্তবে এর প্রয়োগ না ঘটে, তাহলে পরিস্থিতির ইতরবিশেষ যে কিছু হবে না, তা বলাই বাহুল্য। আমরা ‘শিক্ষা আইন-২০২১’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি। 

পাঠকের মন্তব্য