দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিলুপ্তির পথে দক্ষিণের খেঁসারি চাষ

কলাই (খেঁসারি) চাষ

কলাই (খেঁসারি) চাষ

দিন দিন বিলুপ্তির পথে ধাবিত হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কলাই (খেঁসারি) চাষ। প্রতিবছরই কলাই চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। স্বল্প পরিসরে যা ও চাষ হচ্ছে তা নেহাতই কলাইয়ের শাঁকের আশায়,ডালের আশায় নয়।

সরেজমিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম জেলা পটুয়াখালী'র বিভিন্ন স্থানে ঘুরলে দেখা যায়, পূর্বের পাঁচ বছরের তুলনায় এবারে কলাইয়ের তেমন চাষ ই হয়নি। প্রায় ৯০% মাঠে কলাইয়ের কোনো অস্তিত্ব ই খুঁজে পাওয়া যায় না। যেসকল মাঠে আগে দেখা যেত সবুজ ও বেগুনি রং এর সমারোহ সেখানে এখন আবাদ হচ্ছে হলুদ বর্ণের সরিষার কিংবা মরিচ ঢেড়শসহ অন্যান্য সবজির।

কিন্তু কলাই চাষে কেন আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা কথা বলি কয়েকজন কৃষকের সাথে। 

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কৃষক আলমগীর হাওলাদার জানান, কলাই চাষে আগের মতো তেমন ফলন পাওয়া যায়না তাই এতে আমাদের লাভ নাই, এজন্যই কলাই চাষ করিনা। উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কৃষক আবদুস সোবাহান জানান, জমিতে কলাই চাষ করার তুলনায় মুগ ও সরিষাসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল চাষ করলে আমরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হই। এজন্যই আমরা কলাই চাষ করিনা

এদিকে সদ্য বিদেশ ফেরত জনাব জব্বার সিকদার জানান, দেশে ফিরে কলাই শাঁক খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করি। কিন্তু আমাদের আশেপাশে কোথাও কলাই শাঁকের অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে অন্য গ্রাম থেকে কিনে এনেছি।

একসময়ে শীতকালে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পুরোদমে দেখা যেত কলাই শাঁকের নরম ডগায় শিশিরের বিন্দু। এরই মাঝে বেগুনী আভার কলাইফুলের মাঝে এর শীম (ছোয়া) দৃষ্টি আকর্ষণ করতো সকল মানুষের। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে শীতের চাদর জড়িয়ে কলাই শাঁক তুলতে বিস্তীর্ণ মাঠের শিশিরস্নাত পরিবেশে ভিড় জমাতেন আবহমান গ্রামবাংলার গৃহবধূ, কিশোরী, মা-চাচি দাদিরা। কিন্তু বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অধিক মুনাফা লাভের আশায় অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে কলাই চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্যকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন এমনটাই আহবান সচেতন মহলের।

 

   


পাঠকের মন্তব্য