আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন

আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন

আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন

নতুন কচিপাতার দোলায় দুলছে প্রকৃতি, দুলছে আবেগী মন। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। নতুন প্রাণে লেগেছে সতেজ হাওয়া। আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ফাল্গুনের হাত ধরে যৌবনের উদ্দামতা বয়ে নিয়ে এলো আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উদ্বেলতা। তরুণ হৃদয়ে বিভেদ ভুলে, ‘চির নূতনের’ প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দোলা। লাল আর হলুদের বাসন্তী রঙে তাই আজ বসন্তের উন্মাদনায় ভাসবে সে। বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রঙকেই এদিনে তাদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। 

খোঁপায় শোভা পায় গাঁদা ফুলের মালা। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যায় না গ্রাম্যজীবনও। আমের মুকুলের সৌরভে আর পিঠাপুলির মৌতাতে গ্রামে বসন্তের আমেজ একটু বেশিই ধরা পড়ে। বসন্তকে তারা আরও নিবিড়ভাবে বরণ করে। বসন্ত শুধু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্ত রঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপরও রং ছড়ায়।

১৯৫২ সালের আট ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।

বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। বাংলায় বসন্ত উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হলেও এর শুরুটা ঐতিহ্যে মণ্ডিত; যা অনেকের অজানা।

মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।

বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। এছাড়া তরুণ-তরুণীরা বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ধানমন্ডি লেক, বলধা গার্ডেন মাতিয়ে রাখবে সারাদিন। আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়।

একটা সময় ছিল যখন বাসন্তী রঙের শাড়ি, রঙিন পাঞ্জাবিতেই বসন্তের ছবিটা ফুটিয়ে তোলার আবহটা চোখে পড়ত। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে বসন্তের পোশাক ঘিরে নতুন এক উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। যে উচ্ছ্বাসটা বসন্তের উৎসব আমেজকে দিয়েছে গহন ছন্দময়তা। সেটা হলো বাঙালির আবহমান, চিরন্তন সংস্কৃতিকে নান্দনিকতার শোভায় উৎকীর্ণ করে পোশাকের আদলটা আধুনিক ডিজাইনের শৈল্পিক পঙক্তিতে বুনন করে তাকে ফ্যাশনেবল করে তোলার নিবিড় প্রয়াস। নগর জীবনের নানা ব্যস্ততায় কখন যে ঋতুর বদল ঘটে তা যেন নগরবাসী জানতেই পারে না। তবে এর পরিবর্তন বেশ অনেকদিন ধরে লক্ষণীয় বাংলার ফ্যাশনধারার শিল্পীত উদ্যোগ একেবারেই পাল্টে দিয়েছে এ অবস্থার। ধুলোময়, শব্দজটের নগর জীবনের প্রাণেও এনে দিয়েছে নতুন স্পন্দন। নিসর্গের পল অনুপলে যখন ভালোবাসা দিবসের হৃৎস্পন্দনে বাজে এস্রাজের মায়াবি রিদম। 

তখন ঢাকার বাংলা একাডেমিতে শুরু হয়ে গেছে বাঙালির প্রাণের একুশে গ্রন্থমেলা। এই মেলাকে ঘিরে বাঙালির আবেগের সীমাটা ছাড়িয়ে যায় নীল দিগন্তকেও। আর এই দিগন্তের রঙটা দেশীয় ফ্যাশন ভুবনের প্রতিটি স্তবকে নতুন যাত্রায় হয় উদ্ভাসিত। ঋতুরাজ বসন্ত, ভ্যালেন্টাই ডে এবং একুশে গ্রন্থমেলার মতো ‘ত্রৈয়ী’ স্পন্দনে যেন প্রকৃতির উড়ুউড়ু মনটাই আজ উঠেছে ভিজে বাসন্তী রঙের জাফরানি ছোঁয়ায়! তাই কবির ভাষায়-‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

   


পাঠকের মন্তব্য