বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বেতন কত, অন্যান্য সুবিধা কী

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বেতন কত, অন্যান্য সুবিধা কী

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বেতন কত, অন্যান্য সুবিধা কী

অন্য রাজনীতিবিদদের ভাবনা যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকে শুরু হয় শেখ হাসিনার ভাবনা। অন্য রাজনীতিবিদরা চিন্তা করেন আজকের। আওয়ামী লীগ সভাপতি চিন্তা করেন আগামীকালের। অন্যরা সবকিছু দেখেন সামনে থেকে। শেখ হাসিনা সবকিছু দেখেন চারপাশ থেকে। এ ভিন্নতা তাঁকে করেছে অসাধারণ। অনন্য। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায়। 

ক্ষমতায় থাকার ম্যাজিক কী ? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকে অনেক কথাই বলবেন। কিন্তু টানা ক্ষমতায় থাকার আসল রহস্য হলো শেখ হাসিনার ম্যাজিক। তাঁর অনন্য ও দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং প্রজ্ঞার জন্যই আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায়। শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা দূরদর্শী এবং ব্যতিক্রমী তার প্রমাণ এবার রাষ্ট্রপতি মনোনয়নে নতুন করে পাওয়া গেল। নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবেন ? এ নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা ছিল। 

আওয়ামী লীগের নেতারাও নতুন রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে ছিলেন অন্ধকারে। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও জানতেন না নতুন রাষ্ট্রপতির নাম।

নানা জল্পনা কল্পনার অবসান; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। আগামী ২৪ এপ্রিল তাঁর নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। তার মানে আর দুই মাসের কিছু বেশি সময় পর বঙ্গভবনের নতুন বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন।

অনেকের মনেই প্রশ্ন- কত বেতন পান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ? কী কী সুবিধা পান তিনি ? অবসর পরিকল্পনাও কেমন ? সেই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে প্রজন্মকণ্ঠের ডেস্ক রিপোর্ট- একজন রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক।  

রাষ্ট্রপতি কী কী ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, তা বলা আছে দেশের সংবিধান ও দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্টে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনও এসব ক্ষমতা ও সুযোগ–সুবিধা ভোগ করবেন।
 
দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯৭৫ সালে প্রণীত আইনে রাষ্ট্রপতির বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫০০ টাকা। এরপর ১০ বার আইনটি সংশোধন করা হয়।  
১৯৮৭ সালে আড়াই হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার, ১৯৯২ সালে ১৫ হাজার, 
১৯৯৮ সালে ২৩ হাজার, ২০০৫ সালে ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা, 
২০০৯ সালে ৬১ হাজার ২০০ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়। 
এই বেতন সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত। রাষ্ট্রপতির মাসে আড়াই হাজার টাকা ছুটি ভাতা থাকে, এটিও আয়করমুক্ত।

রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের (এন্টারটেইনমেন্ট) জন্য বছরে ভাতা পান। এই টাকার নিরীক্ষা হবে না। রাষ্ট্রপতির জন্য সরকারি বাসভবন (বঙ্গভবন) থাকবে, যার সাজসজ্জা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেবে সরকার। স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রপতি পরিবহন (গাড়ি) সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রপতি অফিশিয়াল কাজে দেশের বাইরে গেলে সরকার নির্ধারিত ভাতা পাবেন। রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন তহবিল বছরে দুই কোটি টাকা।

রাষ্ট্রপতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেশের যেকোনো হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেশের বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেই খরচও সরকার দেবে। রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে বিমাসুবিধার ব্যবস্থা আছে। এই বিমা-সুবিধা এখন বছরে ২৭ লাখ টাকা। 
২০১৬ সালের আগে ছিল ১৫ লাখ টাকা। এ রকম আরও বেশ কিছু সুবিধা পান রাষ্ট্রের ১ নম্বর ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে। তিনি কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া অন্য সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী পালন করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না এবং দিলে কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখবেন এবং রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যেকোনো বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করবেন।

কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমা করার অধিকার আছে রাষ্ট্রপতির। কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া দণ্ড মার্জনা, বিলম্ব ও বিরতি করতে পারেন রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা কমানোর ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির।

রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। তবে রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি নিজ পদে বহাল থাকবেন। একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।

   


পাঠকের মন্তব্য