মূল্যস্ফীতিতে টালমাটাল বিশ্ব; কোন দেশের পন্য কতটা মূল্যবৃদ্ধি 

বৈশ্বিক সংকট নিয়েও রাজনীতি কেন

বৈশ্বিক সংকট নিয়েও রাজনীতি কেন

রাজনীতির লক্ষ্য জনসেবা, আরও বৃহত্তর অর্থে দেশসেবা। আর রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এ লক্ষ্যটিকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাবেন, এটিই তো প্রত্যাশিত। বরেণ্য রাজনীতিকদের জীবন আলেখ্য পর্যালোচনা করলে ত্যাগ ছাড়া ভোগের ইতিহাস বিরল।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু, মজলুমের কণ্ঠ মাওলানা ভাসানীসহ গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব রাজনীতিককে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে এদের জীবনে তো ভোগ-বিলাসিতার ইতিহাস নেই, তাহলে তাদের অনুসারী হিসেবে দাবীদার তথাকথিত রাজনীতিকরা এত ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত কেন ? ত্যাগেই যখন রাজনীতিবিদদের জীবন মহিমান্বিত হয়, তাহলে আজকের যুগে বিত্ত বৈভব আর ক্ষমতা নিয়ে এত কাড়াকাড়ি কেন ? এমন প্রশ্ন অন্যকাউকে না করলেও নিজেকে নিজে এই সকল জিজ্ঞেসা করেছি কি কখনো ?

বিজ্ঞানের কল্যাণে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রিত হলেও এর অর্থনৈতিক খেসারত কাটিয়ে উঠার আগেই ইউক্রেন সংকটে সারা বিশ্ব আজ নতুন এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি; সেটা অজানা রয়েছে কার ? যে কারনেই জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহে মানবিক মৌলিক চাহিদা পূরণ যেন আজ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কানাডার মতো দেশে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় উৎপাতে নাগরিক জীবন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি আজ মহা সংকটে। সময়ের পরিক্রমায় এ সংকটের আশু সমাধানের কোনো লক্ষণও নেই। মূল্য স্ফীতির চাপে নিত্যদিনের মৌলিক ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে বিলাসী জীবনেও এর চরম নেতিবাচক প্রভাব আজ স্পষ্ট। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর অর্থনীতির দেশে, এ সংকট পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা বলা মুশকিল। বহু উন্নত দেশ বৈশ্বিক এই সংকটের চাপে যখন দিশেহারা, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই সংকট নিয়ে যেন রাজনীতির লম্ফঝম্প শুরু হয়েছে। বিরোধী দলের অনেক দায়িত্বশীল নেতাদেরও জেনেও না জানার ভান; তাঁর কারণ, ভোটের রাজনীতির হাতিয়ার করা ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যু !! 

কোন দেশে কোন জিনিসের দাম কতো ? খবর রাখি কয়জনে ?? লিঙ্ক এখানে- globalproductprices

আমাদের হাতের কাছেই-  'গ্লোবাল প্রোডাক্ট প্রাইজ ডট কম-এ তালিকায় রয়েছে বিশ্বের সকল দেশের সকল পন্যের খুচরা দাম। এখানে কোন দ্রব্যের মূল্য কতো, সারা দুনিয়ার ৯১টি দেশের ডাটা আছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একদম শেষের দিকে বা শেষেই। অনেকে বলেন ইউরোপ আমেরিকা নয় এশিয়ায় বা দক্ষিণ এশিয়ায় কতো সেটাতো বললেন না। তাদের জন্যই এই সাইটটি ঘুরে আসা জরুরি। 

আসুন দেখে নেওয়া যাক, চালের দাম কত ?  উদাহরণ স্বরূপ লিঙ্ক এখানে - Riceprices

এখানে ডলারে দাম দেওয়া আছে, বাংলাদেশে চালের দাম সর্বোচ্চ দেখাচ্ছে ০.৭০ ডলার মানে ৭৪.৯৩ ডলার, সর্বনিম্নটা আরও কম ৬৫ বা তার কম। সুতরাং ডাটা মোটামুটি সঠিক বলা যায়। অথচ বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতি নিয়েও চলছে কি দারুন সার্কাস !! 

বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে বর্তমান বাস্তবতা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই না, বরং সারা পৃথিবীতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই স্রোতে গাঁ না ভাসিয়ে নয় বরং বাস্তবতা উপলব্ধি করবো আমরা সবাই। মনে রাখা ভালো- নাকানিচুবানি খাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান। আর বাংলাদেশ ! এই দেশটা আমাদের, এই দেশের সব উন্নয়নের সমান অংশীদার আমরা সবাই। যখন আমাদের দেশের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, টানেল আর বড় বড় স্থাপনাকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করা হয়, তখন বুঝতে হবে আমাদের, উপলব্ধি করতে হবে সেই চক্রটি কারা ?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যয় সংকোচনের আহ্বান জানিয়েছেন। অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া সব ধরনের প্রকল্পে কাটছাঁটের পরামর্শ দিয়েছেন। অনিবার্য কারণ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের সকল নিয়মিত বৈদেশিক সফর সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। সরকার গ্যাস, বিদ্যুতের ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী দিনের সংকট মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে এসব নির্দেশনা একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। আন্তর্জাতিক দাতাদের সাথেও আগাম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের গৃহীত এসব পদক্ষেপ আর প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী আহবানকে স্বাগত বা সংকট মোকাবেলার বিকল্প উপায় উপস্থাপন না করে কিছু মানুষ একে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে যেন উঠে পড়েই লেগেছে।

   


পাঠকের মন্তব্য