অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’; নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির

অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’; নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির

অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’; নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির

কোভিড মহামারির পর বিশ্ব বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহনে জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গত কয়েক মাস ধরে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। এরই মধ্যে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিরতায় এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘শক্তিশালী সিন্ডিকেট’। 

দেশের ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বাজার মূলত জিম্মি হয়ে পড়েছে ৩৬ কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। রমজানে বেশি ব্যবহার হবে এমন পাঁচ পণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলা আমদানি করেছে দেশের শীর্ষ ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা। এই পণ্যগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি। চাল, সয়াবিন তেল, চিনি, প্রসাধনীসামগ্রী, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম ৪০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযানকালে বেশ কিছু অনিয়ম চিহ্নিত করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে বৈঠক করে সংস্থাটি। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ডলার সংকটের কথা বলা হচ্ছে। নিত্যপণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়াতে ভোক্তা অধিকারের চিহ্নিত অনিয়ম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা দাম নিয়ে কারসাজির তথ্য যাচাই-বাছাই করে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার তথ্য পেয়ে প্রতিযোগিতা কমিশন মামলা করে।

কমিশনের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বেশি মামলা করা হয়েছে চাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে। এ খাতের ১১টি বড় প্রতিষ্ঠান ও ৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া আটা, ময়দা উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ৮টি, ডিম উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ৬টি, ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত ৬টি, সাবান ও ডিটারজেন্ট উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত ৬টি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, এরই মধ্যে চীন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অন্য দেশ থেকে ভোগ্যপণ্য নিয়ে জাহাজগুলো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য প্রবেশ করছে দেশে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জাহাজ ব্রাজিল থেকে চিনি নিয়ে পৌঁছেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ ছাড়া এ সব গ্রুপের অন্যপণ্যের আমদানিও বেশ ভালো। রমজানের আগেই বেশিরভাগ আমদানি ভোগ্যপণ্য দেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

ভোগ্যপণ্যের অন্যতম জায়ান্ট সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সম্প্রতি বলেছেন, রমজানের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডালের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানির জন্য ৩৯০ মিলিয়ন ডলারের এলসি ও খোলার জন্য তারা বিভিন্ন ব্যাংকের দ্বারস্থ হলেও ডলার সংকটের কারণে এখনো তা খুলতে পারেননি। একই অবস্থা আরেক শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী টিকে গ্রুপেরও।

গ্রুপটির পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম জানান, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির এলসি খুলতে আমরাও চেষ্টা করছি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশা করছি, ভালো কিছু হবে।

এদিকে রমজানে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।

অন্যদিকে, এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজান মাসে আদা-রসুনের বাজার আরো অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করেছেন শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরাও এলসি সহজ করার দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে। ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের মজুত, অতিমুনাফা এবং বাজার অস্থিরতার জন্য দেশের শীর্ষ ৩৬টি কোম্পানি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) সরাসরি জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। রোজা সামনে রেখে মামলাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

   


পাঠকের মন্তব্য