বিমানে হজযাত্রীদের ভাড়া বাড়লো ৩০ শতাংশ 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

চলতি বছর (২০২৩) হজযাত্রীদের ভাড়া এক লাফে ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এখন একজন হজযাত্রীর ঢাকা-সৌদি-ঢাকা রুটে বিমান ভাড়া লাগবে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। অথচ ১ বছর আগে এই রুটে জনপ্রতি ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। 

এভাবে ৭ বছরে হজ ফ্লাইটে টিকিটের দাম বাড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি। ফলে অনেকের হজযাত্রা ‘দুঃস্বপ্ন’ থেকে যাচ্ছে। আর যারা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারা পড়ছেন আর্থিক চাপে। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। তারা জেট ফুয়েলের দাম বাড়ার কথা বলছে। আর এ বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) ও হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) অভিযোগ হলো, বিমান দেনায় জর্জরিত একটি সংস্থা। এখন সংস্থাটি অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় তারা হজযাত্রীদেরও ছাড় দিচ্ছেন না। ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে মুনাফা করছেন। এমনটা চলতে থাকলে অনেক মানুষের দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে হজযাত্রা। এদিকে বিমানভাড়াসহ হজ প্যাকেজের দাম কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছে আটাব। 

সংস্থাটির দাবি, এক লাফে ৩০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিমানভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারিত করা হলে হজযাত্রীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ অনেকটাই কমবে। তাই বিমানভাড়া কমানোসহ প্যাকেজ মূল্য পুনর্বিবেচনা করতে হবে। একই দাবি জানিয়েছেন হাব সংশ্লিষ্টরা।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করবেন। এরমধ্যে নিজস্ব বিমানের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বাকি ৫০ শতাংশ যাত্রী সৌদি ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স বহন করবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৮ জুন হবে পবিত্র হজ।

বিমান ভাড়ার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর এককভাবে ৫০ শতাংশ হজযাত্রী পরিবহন করে বিমান। তারাই নিজের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়। তখন তাদের সঙ্গে অনেকটা মিল রেখে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদি এয়ারলাইন্স। এবার যে হারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তাতে দেখা যায়, সব খরচ বাদ দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ লাভ হবে। বিমান যদি লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু খরচের টাকা নেয়, তাহলে স্বস্তি পেতেন হজযাত্রীরা।

আটাব সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে সৌদিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমানের জনপ্রতি ভাড়া ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৭ টাকা। এর ১ বছর পর, ২০১৮ সালে ভাড়া বাড়ে ৯ হাজার ৯১৩ টাকা। ২০১৯ সালে ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২০ সালে একই রুটে ১০ হাজার টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়। তবে করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সৌদিতে হজযাত্রী পরিবহন বন্ধ ছিল। পরে ২০২২ সালে হজ ফ্লাইটের খরচ ধরা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সবশেষ চলতি বছর ১ লাফে ৫৮ হাজার টাকা ভাড়া বাড়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এই হিসাবে চলতি বছর ঢাকা-সৌদি-ঢাকা রুটে বিমানভাড়া বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, বিমান তেলে চলে, পানিতে নয়। এখন বিশ্বে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নেই। তাই বিমানভাড়া বাড়ানো যৌক্তিক। অন্য দেশে বিমানভাড়া গড়ে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। সেই তুলনায় আমরা মাত্র ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছি। আটাব সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, বিশ্বে আর্থিক মন্দার কারণে ডলার সংকট রয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে হজযাত্রীদের ওপর। তারা আর্থিকভাবে চাপে রয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকে হজ করতে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবেন অনেকে। বিমানভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারিত করা হলে হজযাত্রীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ অনেকটাই কমবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালে হজের সর্বনিম্ন খরচ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। ২০১৬ সালে তা হয় ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। এরপর ২০১৭ সালে ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা হয় সর্বনিম্ন প্যাকেজ। ২০১৮ সালে এসে তা হয় ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল। পরে ২০২২ সালে এসে হজ প্যাকেজের মূল্য হয় ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। এবার তা বাড়িয়ে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা করা হয়। এ অবস্থায় বিমানভাড়াসহ হজ প্যাকেজের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে হাব।

সংগঠনটির এক নেতা বলেন, প্রতি বছর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি, ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইটসহ নানা অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিমান। ওই প্রস্তাবিত ভাড়ার আলোকেই নির্ধারণ হয় ভাড়া। তারপর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সারা বছরের লোকসানের ধকল কাটিয়ে ওঠে হজ ফ্লাইটের মুনাফা থেকে। হজ ফ্লাইট থেকে বিমান ৮০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা করে। বিমান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা মুনাফা রেখে ভাড়া প্রস্তাব করলে হজযাত্রীদের ওপর আর্থিক চাপ কমবে। তথ্যঃ প্রতিদিনের সংবাদ 

   


পাঠকের মন্তব্য