যে কারণে আমরা হারিয়েছি দুর্দান্ত ট্যালেন্টেড সালমান শাহকে 

সামিরা এবং সালমান শাহ

সামিরা এবং সালমান শাহ

মিলি সুলতানা : আজিজ মোহম্মদ ভাই এরশাদ জামানায় লাইমলাইটে আসেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কন্যা মুনমুন সেনকে ঢাকায় এনে। এক সময়ের টালিগঞ্জের হার্টথ্রব মুনমুন সেন বহুবার ঢাকা আসেন। মুনমুন সেনকে বগলদাবা করে বিভিন্ন পার্টিতে উপস্থিত হতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সুচিত্রা তনয়া ছবিতে অভিনয়ের কারণ দেখিয়ে ঢাকায় আসতেন। ভাইয়ের নির্দেশে পরিচালক মুনমুন সেনকে নিয়ে ছবির শ্যুটিং করতেন। তারপর হঠাৎ করে মুনমুন গায়েব হয়ে যেতেন।

আসলে মুনমুন প্লেজার ট্রিপে ঢাকায় আসতেন। কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করতেন ভাইয়ের উদ্দেশ্যে প্লেজার ট্রিপে এসে। মুনমুনের মত দেবশ্রী রায়ও ভাইয়ের মনোরঞ্জন করতেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাই চলচ্চিত্রের সাথে নেপথ্যে জড়িত ছিলেন। তার হাত ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আসেন ভারতের মমতা কুলকার্নি, জয়াপ্রদা, আয়েশা জুলকা, ঋতুপর্না’র মতো তারকারা। সেই সময় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে ভাইয়ের দাপট ছিল দুর্দান্ত। ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেতা জনি বিশেষ সহকারী হিসেবে ভাইয়ের অধীনে চাকরি করতেন।

আশির দশকের শুরুতে ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি মর্নিং সানের সম্পাদক সাহেবের মেয়ে বড়মেয়ে নওরিনকে জোর করে বিয়ে করে আলোচিত হন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। নওরিন বিটিভিতে একটি টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপন করেছিলেন। নওরিনের ছোটবোন সিমরানও মডেলিং করতেন। নওরিন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে বিয়ে করলে তার বাবা সেই বিয়ে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এই নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হত। নওরিন এখন পাঁচ সন্তানের জননী। তার নামের শেষেও স্বামীর পদবি আছে- নওরিন মোহাম্মদ ভাই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, নাটক ও মডেলিং জগতের নায়িকাদের আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের দরবারে  যাওয়া আসা ছিল নিত্যদিনের রুটিনে। 

এরশাদ সরকারের আমলে দুর্দান্ত প্রতাপশালী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের দেয়া এক পার্টিতে তার সাথে সংসদ সদস্য নীলা চৌধুরী’র পরিচয় ঘটে। এরপর নীলা চৌধুরীর কপালে "চার চান্দ" লাগে। ভাইয়ের সাথে পরিচয় হওয়ার পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নীলা চৌধুরীর স্বামী মরহুম কমর উদ্দিন দায়রা জজ ছিলেন। সৎ ও নির্লোভ মানুষ হিসেবে পরিচিতজনদের কাছে সালমানের বাবা কমর উদ্দিন খুব সম্মানিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে আলোচিত হয়ে পত্রিকায় অনেকবার নাম আসে নীলা চৌধুরীর। 

এরশাদের আরেক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী  জিনাতের সাথে নীলা চৌধুরীর দ্বন্দ্ব দেখা দিলেও সবকিছু সহজে মিটমাট করে ফেলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সহায়তায়। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে প্রতি সপ্তাহে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের দেয়া পার্টিতে নিয়মিত অতিথি ছিলেন এরশাদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীরা। শুরু হয় নীলা চৌধুরীর উশৃঙ্খল জীবনযাপন। যা তার ছেলে সালমান শাহ ভীষণ অপছন্দ করতেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর এরশাদ জেলে গেলে সংবাদ মাধ্যম থেকে কয়েক বছরের জন্য হারিয়ে যান নীলা চৌধুরী। শোনা যায় গোপনে সেই সময় বিএনপি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সাথে সখ্যতা গড়ে নিরাপদে থাকেন নীলা চৌধুরী। যার পেছনে সার্বিক সহয়তা করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। 
 
১৯৮৫ সালে একদিনের জন্য রেখাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন ভাই। রেখাকে উড়িয়ে নিয়ে আসলে সেখানে বাগড়া দেন এরশাদ। নিরবচ্ছিন্নভাবে রেখার সান্নিধ্য পেতে ভাইয়ের সাথে টক্কর দেন এরশাদ। রেখা নিয়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে যায়। আজিজ মোহাম্মদ ভাই অর্থলগ্নি করতেন সিনেমাতে। ৫০টির বেশি সিনেমাতে তিনি বিনিয়োগ করেন। যেহেতু সিনেমায় লগ্নি করেন তাই এই সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে সালমান শাহ'র পরিবারের সখ্যতা গড়ে উঠে। একটি পার্টিতে সালমান শাহ সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। 

সূত্রের মতে, সেই পার্টির এক পর্যায়ে রুপের পূজারী আজিজ মোহাম্মদ ভাই সামিরাকে চুমু খেতে গেলে সালমান শাহ ক্ষিপ্ত হয়ে ভাইয়ের উপর চড়াও হন। খুবই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায় সেদিন। এর কিছুদিন পর রহস্যজনক মৃত্যু হয় বাংলা চলচ্চিত্রের রাজকুমার সালমান শাহ’র। সালমানের মৃত্যুর পর সামিরা ও তার পরিবারের বহু ডার্ক চ্যাপ্টার সামনে চলে আসে। সামিরার সাথে ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা তো ছিলই। 

এমনকি সামিরার মায়ের সাথেও ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ভাইয়ের নজর ঈগলের থাবার মত ধারালো। ভাইয়ের আশীর্বাদে সামিরা এবং তার মায়ের প্রচুর আর্থিক উন্নতি হয়েছে। সেই সামিরা এখন মাল্টিপল বিয়ে করে বড় স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। মাঝখান দিয়ে আমরা হারালাম দুর্দান্ত ট্যালেন্টেড সালমান শাহকে।

লেখক : মিলি সুলতানা
পরিচিতি : সুলেখক ও শব্দ চৈতন্যের কারিগর

   


পাঠকের মন্তব্য