স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ, উজ্জীবিত প্রান্তিক কৃষক 

লেখক: মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা

লেখক: মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা

মিয়া মনসফ : গত রবিবার সুপার সাইক্লোন মোখার দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের হুঁশিয়ারি চলছে। দিনের মধ্যভাগ থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আঘাত হানবে মোখা, এমন সংবাদে আতংকিত মানুষ। দেশের র্পূবাঞ্চলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে কৃষকদের মাঝে ভর করেছে তখন আতঙ্ক। ক্ষেতের আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে ঘরে তুলতে বাধ্য হয়েছে কৃষক। জীবন বাঁচার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছে সাইক্লোন সেল্টারে। ঠিক  তখন দেশের উত্তরাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুরে শহীদ মনসুর আলী মিলনায়তনে অত্র এলাকার কৃষকদের মাঝে উত্সবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থলে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে প্রান্তিক কৃষকরা এসেছেন কেউ পায়ে হেটে, কেউবা বিভিন্ন বাহনে। উদ্দেশ্য এবি ব্যাংকের ঘোষিত স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া। 

এবি ব্যাংক এই এলাকার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মাঝে ঋণ দেবেন সহজ শর্তে। তাও আবার স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে। এই ঋণ পাবে কৃষক। কৃষক এই সংবাদ শুনেছেন অন্য কোন কৃষকের কাছে, কেউ এবি ব্যাংকের স্থানীয় কর্মকর্তা বা অন্য কোন মাধ্যমে। ঋণ প্রত্যাশী এসব কৃষক এসেছেন আজকের ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে কাঙ্খিত ঋণের প্রত্যাশায়। 

যে ঋণ অন্য বা নিজের জমিতে ফসল ফলাতে কাজে লাগাবে। এতে নিজের ভাগ্য উন্নয়ন হবে। পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মিটাবে কৃষক পরিবারের এই অগ্রজ। সেই আশা নিয়ে এই কৃষক হাজির হয়েছেন চার জাতীয় নেতার একজন এম মনসুর আলী মিলনায়তনে। প্রচন্ড তাপদাহ এখানে। অনুষ্ঠান শুরু হবার নির্ধারিত সময়ের আধা ঘন্টা আগে অনুষ্ঠান শুরু হলো মিলনায়তনে জায়গা না পাওয়া বাইরে খোলা জায়গায় শামিয়ানার নিচে বসে থাকা কৃষকদের কথা ভেবে। কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান। নীরব শ্রোতা দর্শক। বক্তাদের বক্তব্য শুনছেন। সবাই অপেক্ষায় আছেন প্রধান অতিথির বক্তব্য শুনতে। তিনি ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন ঢাকা থেকে। ব্যক্তিগত কারণে তিনি আসতে পারেন। 

মিলনায়তনের সবার মতো আমিও প্রধান অতিথির বক্তব্য শোনার অপেক্ষায়। এই মাটিতে জন্ম নেয়া জাতীয় নেতা এম. মনসুর আলীকে আমি দেখিনি। শুনিনি তাঁর ভাষণ। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবদান অমর হয়ে থাকবে। ইতিহাসের পাতায় বঙ্গবন্ধুর পাশে তাঁর নাম লিপিবদ্ধ আছে। তাঁকে জেলখানায় হত্যার মধ্য দিয়ে খুনিরা বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূণ্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এম. মনসুর আলীর সুযোগ্য সন্তান মো: নাসিম জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সেবা দিয়ে গেছেন। কাজীপুরের মানুষের পাশে থেকে তাদের সুখে দু:খের সাথী  হিসেবে ছিলেন। আর প্রকৌশলী তানভির শাকিল এমপির রক্তে দাদা এম মনসুর আলী ও বাবা মো: নাসিমের রক্ত বিদ্যমান। অগ্রজের পথ ধরে অনুজ হাঁটবেন এইটাই রীতি। তানভীর শাকিল পেশায় একজন প্রকৌশলী। তিনি রাজনীতিতে আসার কথা নয়। পিতা ও পিতামহের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য শোনার আগ্রহে অপেক্ষমান মিলনায়তন ভর্তি অত্র এলাকার মানুষ। যার মধ্যে বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষ। যারা পেশায় কৃষক। তাদের প্রিয় নেতা তানভির শাকিল। আমার  বুঝতে সময় লাগেনি তানভির শাকিল ইতিমধ্যে কাজীপুরের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বড় টিভি স্ক্রিণের পর্দায় তানভির শাকিলের ছবি ভেসে উঠতেই করতালিতে মুখর হয়ে উঠলো পুরো মিলনায়তন। তিনি অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বক্তব্য রাখলেন। অত্রএলাকার মানুষরা তাকে আপনজন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে সে প্রমাণ পেলাম তার বক্তব্যের পরতে পরতে যখন করতালি দিচ্ছিল উপস্থিত হলভর্তি শ্রোতারা। তিনিও ইতিমধ্যে কাজীপুরের জনগনকে আপনকে নিয়েছেন। সে কথা প্রমাণ মেলে তাঁর বক্তব্য থেকে। 

তিনি এবি ব্যাংকের এই ঋণ প্রকল্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবি ব্যাংক ও ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে। তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানালেন কাজীপুরের কৃষকদের জন্য ঋণের সুবিধা কিছু বাড়াতে। সেই সাথে  ঋণপ্রাপ্ত কৃষকদের কাছে এই অনুরোধও  জানালেন ঋণের টাকা সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে যথাযথভাবে ঋণের টাকা ব্যাংকের কাছে ফেরত দিতে। যাতে আমাদের এলাকার কৃষকের বদনাম না হয়। নিজের এলাকার মানুষের প্রতি কতটুকু  ভালোবাসা থাকলে এমন কথা বলতে পারে তা সহজে অনুমেয়।

সেদিনের কাজীপুরের সাংসদ সদস্য জনাব তানভীর শাকিলের বক্তব্য শুনে আমি আগামী বাংলাদেশের প্রত্যাশার লোকছটা দেখতে পাচ্ছি।  আগামীদিনের বাংলাদেশ আস্তে আস্তে উন্নত ও  আধুনিক বাংলাদেশের দিকে হাটছে। তানভির শাকিলদের মতো সুশিক্ষিত তরুনরা যখন এদেশের জনপ্রতিনিধি হবে, তখন এদেশ উন্নত না হয়ে পারেনা। তাদের হাতেই  এদেশের দুর্নীতির মূলোত্পাটন হবে। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। মাথার ঘাম পায়ে পেলে যে কৃষক খাদ্য উত্পাদন করে, সেই কৃষকের কষ্টের ভাষা যিনি বোঝেন তিনিই আসল জনপ্রতিনিধি। তিনিই জনগনের নেতা হবার যোগ্যতা রাখেন। কাজীপুরের জনপ্রতিনিধি তানভির শাকিল সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন। হয়তো তিনি এই দীক্ষা তাঁর পিতা মো: নাসিম থেকে পেয়েছেন। পেয়েছেন পূর্বসূরী দাদার কাছ থেকে। পিতার উত্তরসূরি হিসেবে সেভাবেই বেড়ে উঠেছেন।  কাজী পুরের জনপ্রতিনিধি শাকিল তাঁরা বক্তব্য শেষে তিনি অনলাইন ছেড়ে যাননি। তিনি বড় পর্দায় সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখেছেন অনুষ্ঠানের শেষ অবধি। 

প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালের বক্তব্য ছিল আকর্ষনীয় ও প্রাঞ্জল। স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণের প্রণেতা তিনি। তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণের প্রেরণা পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। মাতাপিতাহারা এই নেত্রী যেভাবে মানুষের কষ্টের ভাষা বোঝেন, এদেশের মানুষকে সুখে রাখতে দিনরাত কাজ করছেন, আমিও তাঁর পাশে থেকে জনগনের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারিনা ! সেই প্রেরণা থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ালেন। প্রণয়ন করলেন কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণ কর্মসূচি। এবি ব্যাংক এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। তিনি আধুনিক ব্যাংকিং ধারার সাথে এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচি যুক্ত করলেন। কৃষক যে ঋণ পাবে তারমধ্যে আধুনিকতার ছোয়া থাকবে। সেই আধুনিকতায় যুক্ত হবে আমাদের প্রান্তিক কৃষকরা। স্বল্পসুদে ঋণ পাবে কৃষক। সেই ঋণ কৃষক তুলে নেবে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে। যখন যেখান থেকে ইচ্ছে কৃষক ঋণের টাকা তুলে নিতে পারবে। এই কথাগুলো তিনি যখন তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করলেন তখন ‍উপস্থিত সহস্র কৃষক ও অতিথি শ্রোতারা করতালি দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন এবি ব্যাংকের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা যে আকাশ ছোঁয়া তার প্রমাণ পাওয়া গেল একটি ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করার পর। 

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্য প্রদানের মাঝখানে এই ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হয়। তুলে ধরা হলো শেখ হাসিনার সরকারের কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র। তথ্য প্রদর্শন শেষে পুরো মিলনায়তন করতালিতে মুখর হয়ে উঠল। অনুষ্ঠানের সভাপতি তারিক আফজাল যখন তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একশত বার  ক্ষমতায় নেবার জন্য এক পদ্মাসেতুই যথেষ্ঠ। এই বক্তব্যের সাথে সাথে মিলনায়তনে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়। করতালি ও হর্ষধ্বনিতে মুখরিত হলো অনষ্ঠানস্থল। এতে বোঝা গেলো শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। 

বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়নের সংবাদ এখন শুধু দেশে নয়, বিদেশে ও প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। বিশ্ব নেতাদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার ভক্ত এই সংবাদও জেনেছি মিডিয়ার বদৌলতে।

এবি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কর্মসূচিটি সম্পূর্ণ কৃষকবান্ধব। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক তাঁর উপস্থাপনায় যখন উল্লেখ করেছেন, ব্যাংকের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচি আয়োজন হচ্ছে। তখনই ধরে নিয়েছি কৃষকদের এই অংশগ্রহণ ও অংশগ্রহন শেষে বাড়ি ফেরার মুহূর্ত পর্যন্ত সবোর্চ্চ সেবায় ব্রত হয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। যাতে আগত কৃষকদের কোন রকম কষ্ট না হয়। এই জাতীয় কোন অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন আমার চোখে কখনো  চোখে পড়েনি। অনুষ্ঠানটির স্থায়িত্ব মাত্র দেড় ঘন্টা। অনুষ্ঠান শেষে ঘোষণা দেয়া হলো অনুষ্ঠানে আগত সকল কৃষকদের এবি ব্যাংকের আতিথেয়তা গ্রহণ করার জন্য। প্রত্যেক কৃষকের হাতে মুহূর্তেই তুলে দেয়া হলো দুপুরের খাবারের প্যাকেট ও পানি। এবি ব্যাংকের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক  তারিক আফজাল মানবিক মানুষ বলে হয়তো দুপুরে কৃষকদের খাবারের ব্যবস্থার বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। তিনি জানেন কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে এই কৃষকরা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার গ্রহণ করতে তাদের বিলম্ব হবে। তাই তাদের জন্য দুপুরের খাবারের  আয়োজন জরুরি। 

অনুষ্ঠান চলাকালিন সময়ে এবি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা এস এম আজাদ ও মো: তারিকুল ইসলাম কৃষকদের তদারকিতে ব্যস্ত ছিলেন সার্বক্ষণ। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই দুই কর্মকর্তা কৃষকদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন । কৃষকদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি তীর্যক নজর রেখে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। এবি ব্যাংক আয়োজিত এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচি থেকে যে কেউ দায়িত্ববোধের দীক্ষাটা গ্রহণ করতে পারে।

লেখক: কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

   


পাঠকের মন্তব্য