বোরখা পড়ায় ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজের অভিযোগ 

লালমনিরহাটের পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়

লালমনিরহাটের পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়

লালমনিরহাটের পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বোরখা পড়ায় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের আইসিটি শিক্ষক ফেরদৌস আলীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ঘড়োয়া ভাবে সালিশ করার চেষ্টা করা হলেও ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী।

সোমবার (৫ মে) এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে প্রতিবাদ জানালে পরস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় জরুরি মিটিং ডেকে স্কুল ছুটি দেয় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতি।  

জানা যায়, গত বুধবার স্কুলের মধ্যাহ্ন বিরতির পরে আইসিটি শিক্ষক ফেরদৌস আলী দশম শ্রেণীতে ক্লাস নিতে যান। এসময় রহিমা খাতুন (ছদ্মনাম)  নামে ছাত্রীকে বোরখা পড়ে আসায় গালিগালাজ করে। অই শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করলে 'বোরখা পড়ায় তোকে বেশ্যার মতো লাগে' মন্তব্য করেন।

পরে অই শিক্ষার্থী স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলামকে মৌখিকভাবে জানায়। কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসহায় মেয়েটি বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে গিয়ে তার পরিবারকে জানায়।

মেয়েটির বাবা রফিকুল পরিবারের অন্যান্য লোকজন নিয়ে সভাপতির কাছে আবারও বিচার চাইত্র গেলে তিনি উলটো তার মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বলে অভিযোগ মেয়ের পরিবারের। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপনে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সালিশ বৈঠক করে এবং মেয়ের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়া হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার স্কুলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়। মানববন্ধন এলাকাবাসী উপস্থিত হতে শুরু করলে সভাপতির লোকজন  এলাকাবাসীর দিকে চড়াও হয় এবং কর্মসূচি ভেস্তে যায়। পরে বাধ্য হয়ে মেয়েটির পরিবার মেয়েকে নিয়ে বাসা চলে যায়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক কৌশলে জরুরি মিটিংয়ের কথা বলে স্কুল ছুটি ঘোষণা করেন।

এর আগেও আইসিটির ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্য ছাত্রীর সাথে অশালীন আচরণ করলে সেবার তিনি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পান। প্রভাবশালী হওয়ায় বারবার এমন কান্ড করে পার পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসী ফারুক মিয়া বলেন, এর আগেও আইসিটি শিক্ষক ফেরদৌস আলী ছাত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করেন। প্রভাব খাটিয়ে সেবারও মাফ চেয়ে পার পান। তাই আবারও এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।

দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা জানান, স্কুলের টিফিনের পরে আমাদের বান্ধবী ক্লাসে ছিলো। সে বোরখা পড়ে আসায় আইসিটি স্যার তাকে গালি দিয়ে খারাপ ভাষা উচ্ছারণ করে। আমরা এর বিচার চাই।

মেয়েটির চাচা বলেন, আমি সভাপতিকে বিচার দিয়েছিলাম। তিনি এ বিষয়ে কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন।  এছাড়াও বলেছেন না পোষালে আপনার মেয়েকে নিয়ে যান।

পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার বলেন, আইসিটি শিক্ষক একজন ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে। মেয়েটি অভিযোগ করায় ওই শিক্ষক তার বাড়িতে গিয়ে মাফ চেয়ে আসে। আজ এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে আমরা জরুরি মিটিং ডেকেছি। মিটিংয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ সহ প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই স্যার তো ক্ষমা চেয়েছে। এখানে আর কি করা লাগবে। সাংবাদিকরা আসে ধান্দা করার জন্য। আমরা প্রতিষ্ঠানিকভাবে এর ব্যবস্থা নেবো। 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা ফেরদৌস  বলেন, বিষয়টি জানা ছিলোনা। এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, এ বিষয়ে ওই শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

   


পাঠকের মন্তব্য