তীব্র গরমে সুন্দরগঞ্জে কদর বেড়েছে হাতপাখার

হাতপাখা অতি প্রাচীন কারুশিল্প

হাতপাখা অতি প্রাচীন কারুশিল্প

হাতপাখা অতি প্রাচীন কারুশিল্প। আবহমানকাল থেকে যখন বিদ্যুতের বালাইও ছিল না, তখন থেকেই মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল হাতপাখা। কিন্তু বৈদ্যুতিক পাখা এসির দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে তাল পাতা, বাঁশের কঞ্চি, কাপড়ের হাতপাখা।

তীব্র দাবদাহে হাঁস-ফাঁস অবস্থা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষদের। হাট বাজার ও বিপণি বিতানে আসা মানুষদের কাছে কদর বেড়েছে হাতপাখার। অসহনীয় লোডশেডিংয়ে সাধারণ মানুষের আবারও ভরসা হাতপাখায়।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতপাখা কেনার দৃশ্য দেখা যায়। কিছুদিন আগে যে হাতপাখা ৩৫-৫০ টাকায় বিক্রি হতো বর্তমানে তা ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে গৃহবধূসহ কারিগরদের। গ্রামাঞ্চলে এ পাখার কদর বেশি থাকলেও শহরের অনেকে এখনও এ পাখা কেনেন। হাতপাখা তৈরির মানুষগুলো ৪-৫ প্রকারের পাখা তৈরি করে থাকেন। অনেকে সুঁই-সুতা দিয়ে ফুল, ফলের দৃশ্যসহ বিভিন্ন প্রকৃতির অবয়ব ফুটিয়ে তোলেন।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় গরম থেকে স্বস্তি পেতে হাতপাখা ছিল সবার ভরসা। বর্তমানে সেটি বৈদ্যুতিক পাখা দখলে নিয়েছে। কেউ কেউ ব্যবহার করছেন এসিও। প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিং বেড়েছে। দিন-রাত মিলিয়ে তেরো-চৌদ্দ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। নিয়ম করে সন্ধ্যা হলে বিদ্যুৎ থাকছে না বেশির ভাগ এলাকায়। তাই পাখার কোনো বিকল্প নাই। পাখার বাতাসও অনেক প্রশান্তি দেয়। কিন্তু আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ইলেকট্রিক পাখার দাপটে এখন বাঁশ-বেতের তৈরি হরেক রকমের হাতপাখা বিলুপ্ত প্রায়।

সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরে আসা দুলাল মিয়া বলেন, কয়েকদিনের তীব্র গরমে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ে বিদ্যুৎ থাকে না। তাই একটি হাতপাখা কিনেছি। কিছুটা হলেও গরম থেকে স্বস্তি পাব।

উপজেলার বামনডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম লিয়ন বলেন, দৈনিক ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এতে শিশুদের নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখন বৈদ্যুতিক পাখার পরিবর্তে হাতপাখা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। হাতপাখা নাড়াতে নাড়াতে একপর্যায়ে হাত ব্যথা হয়ে ওঠে। অপেক্ষায় থাকি কখন বিদ্যুৎ আসবে।

তিনি আরো বলেন, গরমে স্বস্তি পেতে ১১০ টাকায় একটি সুতার পাখা কিনেছি। পাখাটি হালকা ও সুন্দর। বিদ্যুৎ না থাকলে বাতাসও করা যাবে।

মীরগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে গত কয়েক দিনে হাতপাখা বিক্রি বেড়েছে। দৈনিক পাইকারি ৭০-১০০ পিস হাতপাখা বিক্রি করছি। দোকানে সুতার, বেতের, কাপড়ের, বাঁশের, তাল পাতার ও প্লাস্টিকের হাতপাখা রয়েছে। প্রতিটি হাতপাখা খুচরা ৮০-১২০ টাকা বিক্রি করছি।

সুন্দরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র মুঠোফোনে বলেন, হাতপাখা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের অংশ। হাতপাখা তৈরিতে জেলার অধিকাংশ নারী জড়িত। বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা সবসময় পাশে আছি। উদ্যোক্তাদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার দরকার হলে আমরা অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করবো।

   


পাঠকের মন্তব্য