কৃষকের আস্থার ঠিকানা এবি ব্যাংক | প্রজন্মকণ্ঠ

মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

মিয়া মনসফ : একচল্লিশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বেসরকারী ব্যাংক এবি ব্যাংক। সেই চার দশক আগে যাত্রা শুরু করে আজ অবধি বিশ্বাস ও আস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণ কর্মসূচি এবি ব্যাংকের সেবার সর্বশেষ সংযোজন। ইতিমধ্যে কৃষকদের মাঝে এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। বিশেষ করে এদেশের কৃষকদের মাঝে। 

এবি ব্যাংক স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শুরু করেছে এবছরের শুরুর দিকে। ইতিমধ্যে প্রায় ১৩টি জেলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রায় দশ সহস্রাধিক কৃষক ঋণের সুফল ভোগ করছে। আমাদের দেশে যেখানে ব্যাংক বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহীতাদের ঝক্কি ঝামেলার অন্ত থাকেনা সেখানে এবি ব্যাংক কোন জামানত ছাড়াই এই ঋণ দিচ্ছে কৃষকদের মাঝে। শুধু কৃষকের যোগ্যতা হচ্ছে ঋণপ্রাপ্ত কৃষক কৃষি কাজ করে কিনা! মাঠ পর্যায়ের এবি ব্যাংকের সুদক্ষ কর্মীরা প্রকৃত কৃষককে সংগ্রহ করে ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করে তালিকাভুক্ত করছেন। তারপর ঐ কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছেন কৃষি ঋণ। কৃষক সেই ঋণ কাজে লাগিয়ে তার ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কৃষকের নিজের সুফলের পাশাপাশি দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করছে।  

বিশ্বের বিরাজমান যুদ্ধাবস্থার কারণে খাদ্য ঘাটতি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষির উপর জোর দেন। তিনি দেশের মানুষকে খাদ্য ঘাটতি পূরণে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার আহবান জানান। দেশের পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিতে খাদ্য উৎপাদনে সবাইকে এগিয়ে আসার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে এবি ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল তাঁর কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ থেকে প্রান্তিক কৃষকদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি অনুধাবন করেন, কৃষকরা সামান্য অর্থ পেলে তারা কৃষি উৎপাদনে প্রকৃত ভূমিকা রাখবে। সেই পরিকল্পনা থেকে এবি ব্যাংকের সকল শাখার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শুরু করেন এ বছরের শুরুতে। 

সর্বশেষ এবি ব্যাংকের এই ঋণ বিতরণ করা হয় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার কৃষকদের মাঝে। কোটালিপাড়া সদরে এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচি নির্ধারিত থাকলেও প্রচন্ড গরমের কারণে সেই কর্মসূচি আয়োজন করা হয় গোপালগঞ্জ সদরে শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি মিলনায়তনে। কৃষকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই মিলনায়তনে ঋণ বিতরণের আয়োজন করা হয়। প্রায় ৫ শতাধিক কৃষকের উপস্থিতিতে এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ব্যাংকের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল।

কোটালিপাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া নিয়ে এই নির্বাচনী এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবছর তাঁর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতি ইউনিয়নের পূর্বের বিলে তাঁর পৈত্রিক অনাবাদি জমি পরিদর্শনে এসেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন জলাভূমির জমিগুলোতে ভাসমান বেডে সবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশনা পেয়ে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা পতিত জমি, জলাভূমিতে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অত্র এলাকার কৃষকরাও প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনায় উৎসাহিত হন। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় টুঙ্গিপাড়ার পতিত জমি ভাসমান জমিতে সবজিসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদনের কাজ শুরু করে। তিন মাসের মধ্যে এসব জমিতে নতুন ফসলে ভরে উঠে। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোটালীপাড়ার কৃষকরা উজ্জীবিত হয়। শুরু করে পতিত জমিসহ অব্যবহিত কৃষি জমিতে ধান, সবজিসহ বিভিন্ন কৃষি উৎপাদন। এ বছর ২৬ হাজার হেক্টরের চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। ফলে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এই সব সাফল্যেও সবচেয়ে বড় অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শুধু কি তাই, দেশের মানুষ ও কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান গণভবনের আঙ্গিনায় নিজের মতো কৃষি আবাদ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির আঙ্গিনায় কৃষি আবাদে বেশ আলোচিত হচ্ছে সারাদেশে। অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় আবাদ করতে। কৃষক উৎসাহিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কৃষি আবাদের প্রতি ভালোবাসার কারণে। 

প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত দেশের কৃষি উৎপাদনের খবরা খবরা রাখেন। এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে কৃষি উৎপাদনে উৎসাহ যোগান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কৃষি ও কৃষকদের সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন। জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু কৃষির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন । দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে না পারলে, মানুষের মুখে দু’মুঠো অন্নের ব্যবস্থা না গেলে, আমাদের সব অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এমন কথাই বলেছেন বঙ্গবন্ধু! তাই তিনি কৃষিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। গতানুগততিক ধারায় কৃষি আবাদেরও তিনি বিপক্ষে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আধুনিক যত্রাংশ ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন করতে হবে। যাতে আমাদের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। ১৯৭৩ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে কৃষিবিদদের বলেছিলেন, কোন জমিতে কি ফসল হয়! কোন ফসলে কি সার দিতে হয়! ফসলে কখন নিড়ানি দিতে হয়! এসব বই পড়ে নির্দেশনা দিলে হবেনা। গ্রামে গিয়ে কৃষকের সাথে জমিতে নেমে কৃষকদের বুঝিয়ে দিতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজেই মাঠে গিয়ে কৃষকের খবরা খবর নেন। বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদনে বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন কৃষকবান্ধব বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বৈশি^ক সমস্যার মধ্যে কৃষি উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও অনুধাবন করেছেন। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবেন এমন চিন্তা করাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ দেশের নাগরিক হিসেবে এই চিন্তা সবার থাকা উচিত। যে যার জায়গা থেকে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। প্রত্যেকের এগিয়ে আসা উচিত কৃষিসহ খাদ্যোৎপাদনে। দেশটা তো আমাদের সবার। সব পেশার মানুষকে আমাদের খাদ্য সংকট নিয়ে ভাবতে হবে। 

খাদ্য উৎপাদন করেন কৃষক। সেই কৃষককেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যেমনটি এসেছে এবি ব্যাংক। এবি ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে আমলে নিয়েছেন। তাই কৃষিকে উপলক্ষ করে কৃষককে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এই ঐতিহ্যবাহী বেসরকারী ব্যাংকটি মনে করেছে, ব্যাংকের কোষাগারের টাকা কৃষিতে যথার্থ ব্যবহার করা হলে আমাদের খাদ্যোৎপাদান বাড়ানো সম্ভব। তাই তারা সহজ শর্তে কৃষকদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বাদ কৃষককেও দিতে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছেন। বিশে^ যেভাবে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে, যুদ্ধের বিস্তার বাড়বে বৈ কমবেনা। বৈরি পরিবেশের কারণে খাদ্যঘাটতি চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাবার সম্ভাবনা আছে! তখন টাকা দিয়েও খাদ্য পাওয়া যাবেনা। তখন ব্যাংক ভর্তি ডলার টাকা কোন কাজে আসবেনা।

আমাদের কৃষক সামান্য টাকার জন্য নিজের বা অন্যের জমি বর্গা নিয়েও চাষ করতে পারেনা। জীবন বাঁচার তাগিদে মহাজন থেকে ঋণ নিয়ে অনেক সময় নিজের উৎপাদিত ফসল তুলে দিতে হয় মহাজনের হাতে। সরকারী ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে দিতে হয় ঘুষ। তাহলে কৃষক কোথায় যাবে? কে দাঁড়াবে কৃষকের পাশে! প্রধানমন্ত্রীর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবি ব্যাংক দাড়িয়েছে এদেশের কৃষকের পাশে। এবি ব্যাংকের মতো অন্যান্য ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকের পাশে এসে দাড়াক। দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখুক! দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সকলে এগিয়ে আসুক, সে প্রত্যাশা দেশের জনগনের।

লেখক : কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা। 

   


পাঠকের মন্তব্য