রঙ্গলাল আম্রিকা যাওন ক্যানসেল্ কইরছে !

মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

মিয়া মনসফ : হম্বিতম্বি করে পাসপোর্ট পাঁচটি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো রঙ্গলাল। পরিবারের পাঁচ সদস্য। বড় মেয়ে, মেজো ছেলে, ছোট ছেলে, স্ত্রী ও রঙ্গলাল। কয়েকদিন আগে আম্রিকা যাওনের ভিসা নেবার লাইগ্যা এম্বেসিতে পাসপোর্ট জমা দিছিল। আম্রিকা প্রবাসী ছোটকালের বন্ধু স্পন্সরের দায়িত্ব নিছে দেইখ্যা  স্বপরিবারে এই আমেরিকা যাওনের সিদ্ধান্ত লইছে রঙ্গলাল। কিন্ত গতরাতে টিভিতে মাননীয় পরধানমন্ত্রীর ভাষণে যক্খন কইলেন, আমগো আম্রিকা যাওনের দরকার নাই। পরধানমন্ত্রীর কথা হুইন্যা রঙ্গলাল আম্রিকা যাওনের সিদ্ধান্ত ক্যানসেল কইরা ফালাইল লগে লগে !

ক্যান্ আম্রিকা যাওন লাগবো না, আম্রিকা না গিয়া কোন দেশে যাইতে অইব সবিই মন দিয়ে পরধানমন্ত্রীর ভাষন থেইক্যা জাইন্যা লইল। পরধানমন্ত্রীর সব কথা শুইন্যা জাইন্যা এইবার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত লইয়া ফেলাইল রঙ্গলাল। আমেরিকা যাওন ক্যানসেল। 

রাতটা অতি টেনশনে কাটাইয়া সক্কাল সক্কাল আম্রিকা এম্বাসিতে গিয়া নিজের পাসপোর্টসহ সব পাসপোর্ট তুইল্যা লইল। আমেরিকা আম্বাসির গেইট পার অইয়্যা প্রচন্ড রোদের তাপে যক্খন ঘাম ঝইরা পড়তাছে রঙ্গলালের শরীর থেইক্যা, তক্খন পেছনে ফিইর‌্যা আম্রিকা এম্বেসির বিশাল দালানকে সালাম জানাইল রঙ্গলাল। অর্থাৎ আর এই দালানের ত্রিসিমানায় না আসার চুড়ান্ত শপথ নিয়া বাস ধরতে এবার রঙ্গলাল দৌড় শুরু করলো । পরিবারের সদস্যদের আম্রিকা না যাওনের সিদ্ধান্তটা দ্রুত জানাইতে অইব !

আম্রিকা এম্বেসির উল্টো পাশে নতুনবাজার বাসে ইস্টিশন। সেইখান  থেইক্যা বাস যায় মালিবাগ চৌধুরী পাড়া। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় রঙ্গলালের বাসা। বাস একটা আসে একটা যায় কিন্তু একটিও থামবার নাম নাই। সব কটি বাসে যাত্রীতে ঠাসা। প্রচন্ড রোদের তাপে মাথার চান্দি এমন গরম অইছে! যেন মাথার উপরে তাওয়ায় ডিম ভাইজ্যা খাওন যাইব!  

এইবার রাগে বিড় বিড় করতে করতে হাঁটা ধরলো রঙ্গ চৌধুরীপাড়ার দিকে। পথে একবার জিরিয়ে নিলো। রাস্তার ধারে তাল বিক্রেতার কাছ থেইক্যা কয়েকটি তালের শাস কিইন্যা লইছে! কচ্ কচ্ করে শাঁস কামড়াইতে কামড়াইতে হাঁটতে থাকে রঙ্গলাল। দীর্ঘ পথ। রাগে গজগজ কইরতে কইরতে কইতে থাহে “আর আম্রিকা যামুনা’ আমেরিকা যাওন এক্কেবারে ক্যানসেল! মাথা থেকে দু’ গাল বেয়ে ঝইরা পড়ছে ঘাম। হাঁটতে হাঁটতে রঙ্গলাল পৌঁছে গেলো মালিবাগ চৌধুরীপাড়া। 

বাসায় ঢুকেই পাসপোর্টগুলো সোফার উপরে ছুইড়া দিয়া ধপাস করে বসে পড়লো সোফার উপর। জোরে জোরে পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে কইতে লাগলো, ওই তোরা কই আছিস! এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়া আয়! আম্রিকা আর যাওন লাগবোনা! আমেরিকা আর যাওনের কাম নাই। 

ছোট ছেলে তক্খন বাইরের বারান্দায় বল নিয়ে খেলতাছে। বাবার চিৎকারে ঘরে ঢুকে জানতে চাইল বাবা কি অইছে!
রঙ্গলাল তক্খন ছোট ছেলেকে কোলে টাইন্যা লইয়া কইল, বাবা আমাগো আম্রিকা যাওন ক্যান্সেল! 

বাবার কথা শুইন্যা ছোট ছেলে বাবার কোল থেইক্যা হেঁচকা মাইরা নাইম্যা মাটিতে গড়াগাড়ি কইর‌্যা কান্দন শুরু কইরা দিল। আর কাঁদতে কাঁদতে ছোট ছেলে কয় ‘ আমি আম্রিকা যামুই, আমারে কেউ আটকাবার পারবোনা! আমি আম্রিকা যামুই যামু।

“রঙ্গলাল এবার ক্ষেপে উঠলো, চুপ কর্ বান্দর। আমেরিকা যামু না ! যামু না

ব্যস্। চিল্লাচিল্লি হইহল্লা শুইন্যা পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুইট্যা আইলো। রঙ্গলালের স্ত্রী, বড় মেয়ে, মেজো ছেলে। সবাই চিল্লাচিল্লির কারণ জানতে চাইতেই রঙ্গলাল আম্রিকা না যাওনের সিদ্ধান্ত জানাইলো। 

এইবার সবাই এক বাক্যে কইয়া উঠলো, অসম্ভব!আম্রিকা আমরা যামুই! আম্রিকা না যাইবার পারলে আমগো মান সম্মান কিচ্ছুই থাকবো না !

এইবার রৌদ্রমূর্তি ধারণ করে সোফা থেকে উঠে দাড়াইলো রঙ্গ! চিৎকার কইরা কইলো খামোস, একদম চুপ! কোন কথা নাই। আমগো পরধানমন্ত্রীর উপরে কোন কথা চইল ত ন’।

আমগো পরধানমন্ত্রী কইছেন আম্রিকা যাওন লাগবোনা! আম্রিকার মতো বহুত দেশ আছে যাওনের। অনেক বড় বড় মহাদেশ আছে! মহাসাগর আছে। ঐ মহাসাগর পার হইয়া ঐ মহাদেশ গুলায় যাওন যায়! আমরা সব্বাই ঐ মহাদেশে যামু। 

পরধানমন্ত্রী কইছেন, চব্বিশ ঘন্টা পেলেইনে চইড়া আম্রিকা যাওনের কাম কি! কাছের দেশ গুলোতে যাওন যায়। নতুন নতুন দেশে যামু। নতুন সম্পর্ক করমু। আমি পরধানমন্ত্রীর কথায় আম্রিকা না যাওনের সিদ্ধান্ত লইয়া ফালাইছি! ব্যস্ আর কোন কথা নাই !

পরিবারের সব সদস্য নাছোড়বান্দা! তারা আমেরিকা যেতে এক পায়ে খাড়া! যে বড় মেয়ে কখনো রঙ্গলালের সামনে মাথা তুইল্যা কক্খনো কথা কইবার সাহস করে নাই, সেই মেয়ে গরম মেজাজে কয়, এমন সুযোগ আমরা হাতছাড়া করবার চাইনা!  আমি আমেরিকা যামু! স্ত্রী সেজো ছেলে সবার একই কথা। রঙ্গলালের পরিবারে সদস্যরা আত্মীয় সজন বন্ধু বান্ধব সব্বাইকে কইয়া ফালাইছে ওরা আম্রিকা যাইতেছে। অহন যাওন ক্যানসেল করলে ওগো মুখ দেখাইব ক্যামনে !

এবার রঙ্গলাল পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে শান্তভাবে আম্রিকা না যাওনের কারণ ব্যাখা করবার চেষ্টা করলো। একটু আগে যে মানুষটি রৌদ্রমূর্তি ধারণ করে কথা কইছে,  সেই রঙ্গলাল পরিবারের সদস্যদের এইবার বুঝাবার চায় আম্রিকা না যাইবার কারণ ! 

পরিবারের সদস্যরা জড়েসড়ো হয়ে রঙ্গলালের কথা শুনতে লাগলো। রঙ্গলাল আবেগঘন স্বরে কইল, আমি নিজেও বুঝতাছি আম্রিকা না যাইবার পারলে মাইনসেরে মুখ দেহন যাইবনা!  সবাই আমগো নিয়া হাসি ঠাট্টা কইরব।

কিন্তু দেশের কথা ভাবতে অইব আগে। আমগো প্রধানমন্ত্রী নিজেকে নিয়ে ভাবেনা। ভাবে দেশ নিয়া। দেশের মানুষকে নিয়া।

আম্রিকা কিমুন দেশ এবার শোনো। ওরা নিজের স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা। ওরা সব দুর্বল দেশের উপর মোড়লিপনা করে। ওরা শক্তের ভক্ত, নরমের যম!  ওরা আমাগো স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় আমাগো বিরোধিতা কইরছে। চুয়াত্তরে আমাগো দুর্ভিক্ষের সময় বিদেশি খাইদ্যের জাহাজ আইবার দেয় নাই! দেশে খাইদ্যের অভাবে মানুষ মরতাছে তক্খন। আমগো দেশের মইধ্যে রাজনৈতিকদলগুলারে আমগো জাতির পিতার দলের বিরুদ্ধে লাগাইয়া দিছে।

ইলিকশন আইলে ওরা নানা রহম ফন্দি ফিকির করে! নানান রহম ষড়যন্ত্র করে! ক্ষেমতা দেহায়। নানান রহম ভয় দেহায়। আম্রিকায় আমগো গার্মেন্টেসের উৎপাদিত মাল যায়। ওইগুলা আর না নেওনের ভয় দেহায়! আমগো নেত্রী, আমগো শেখের বেটি আমগো জাতির পিতার মাইয়্যা, ওগো কইয়া দিছে, যারা ভয় দেহাইবে, যারা স্যাশন দিবে, ওই সব দেশ থেইক্যা কিচ্ছু আমাদানি করুমনা। ওগোর লগে কুনু রিলেশন রাখুম না। ওগো লগে কুনো ব্যবসাই করুম। কি অইব তাতে! আমগো সমস্যা আমরা সমাধান করুম! আমাদের খাবার আমরা উৎপাদন করুম। নতুন নতুন দেশের লগে বন্ধুত্ব করুম। ব্যবসা করুম।

আমাদের পরধানমন্ত্রী যাতে আর ক্ষমতায় আইবার না পারে সেই ষড়যন্ত্র করতাছে আম্রিকা। তাদের হুমকি ধমকিতে আমগো প্রধানমন্ত্রী ডরায়না। প্রধানমন্ত্রী কইছে, রক্ত দিয়া বাঙ্গলি দেশ স্বাধীন কইরছে। আমরা কেউরে পরোয়া করিনা। কারো কথায় এই মাথা নত অইবনা। বাঙ্গালিরে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা। বাঙ্গালি বীরের জাতি।

এই দেশ আমার তোমার এই দেশ স্বাধীন কইরছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা আমগো পরধানমন্ত্রী জাতির পিতার মাইয়্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির পিতা কারো কথা শোনেনাই। কাউকে ডরাইয়া কথা কয় নাই। দেশটাকে স্বাধীন কইরা ছাড়ছে। কারো কথা শোনেনাই বইল্যা ঐ আম্রিকার ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে মাইরা ফেলাইছে এদেশের কুলাঙ্গাররা। আমগো প্রধানমন্ত্রীও বঙ্গবন্ধুর মত সাহসী। কারো কাছে তল্লীবাহক হয়না। তাই আমাগো প্রধানমন্ত্রীরে বিশ বার মাইর‌্যা ফেলার চেষ্টা অইছে। পারেনাই। রাখে আল্লাহ মারে কে! আল্লাহ্ রহমতের ঢাল দিয়া বঙ্গবন্ধুরকন্যারে বাঁচাইয়া রাখছে!  নেত্রী কইছে, আমি মৃত্যুর ভয় করিনা। আল্লাহকে ভয় পাই। আমার শক্তি এদেশের জনগন। এদেশের জনগনের লাইগ্যা আমি মরবার পারি! 

আমগো প্রধানমন্ত্রী আমগো লাইগাইতো সব কিছু করে। প্রধানমন্ত্রী কইছে আম্রিকা যাওনের দরকার নাই! আম্রিকা না গিয়া অনেক মহাদেশ আছে। ওইসব দেশগুলাতে যাইবার কইছে পরধানমন্ত্রী। অহন তোমরা কও আমরা কি পরধনমন্ত্রীর কথা না শুইন্যা পারি !

রঙ্গলালের কথা শুইন্যা পরিবারের সব সদস্য এবার শান্ত অইল। রঙ্গলালের কথা মনে ধরল। সবাই রঙ্গলালের কাছে ক্ষমা চাইল। রঙ্গলালের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত সেই কথা জানিয়ে দিল পরিবারের সবাই।

এবার রঙ্গলালের চোখে পানি। মাথাটি একটু উঁচু করে এবার রঙ্গলাল আবেগঘন কন্ঠে বলল, এই দেশ, এই মাটি স্বাধীন অইছে এক সাগর রক্ত দিয়া। আমগো দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত দিয়া। জাতির পিতাকক্খনো মাথা নত করে নাই, শেখ হাসিনা আমগো জাতির পিতার মাইয়্যা। তার রক্তে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। শেখ হাসিনা কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করবেনা। 

যুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের সাপোর্ট কইরছে এই আম্রিকা। অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে আমগো শত্রুদের সাহায্য কইরছে। কিন্তু বাঙ্গালিদের দমাতে পারে নাই। শেখ হাসিনাও মাথা নত করবার পারেনা! 

এই দেশের  স্বার্থে, আমগো নিজের স্বার্থে, দেশের সব মানুষকে এক থাকতে অইব। শেখ হাসিনার পাশে থাকতে অইব! দেশের মানুষের ভাল চায় বইল্যাই আম্রিকার ধমকিতে আমগো পরধানমন্ত্রী নত অয় নাই। আমগো শেখের মাইয়্যা আম্রিকাকে ডরায় না! বুকে মনোবল আছে বইল্যা মুখের উপরে কইয়া দিছে আমগো আম্রিকা যাওনের দরকার নাই। 

অহন তোমরাই কও ! আমগো আম্রিকা যাওন কি ঠিক অইব ! পরধানমন্ত্রী পাশে থাওন কি আমগো উচিত নয়!

রঙ্গলালের আবেগঘন কথায় পরিবারের  সদস্যের চোখে পানি গড়াইয়া পড়লো।

ছোট ছেলেটি রঙ্গলালকে জড়াইয়া ধইরা কইলো, বাবা আমি আম্রিকায় যামুনা। বড় মেয়ে, মেজো ছেলে, স্ত্রী সবাই রঙ্গলালের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানাইয়া সবাই হাতে হাত রাখলো পরস্পরে। তারপর হাতগুলো উপরে তুইল্যা ধইরা সমস্বরে বইলা উঠলো, জয়তু শেখ হাসিনা। 

লেখক: কলামিস্ট ও সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা। 

   


পাঠকের মন্তব্য