বালুদস্যুদের জরিমানা নয় জেল দিতে হবে : মনজুর আহমেদ চৌধুরী

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা কুমার নদকে হারিয়ে ফেলেছি। ঐতিহ্যবাহী এই নদ খালে পরিনত হয়েছে। প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করে কুমার নদ খনন করা হলো, কিন্তু আমরা কোন সুফল পেলাম না। পাশাপাশি এ নদটি প্রতিনিয়ত যেভাবে দুষিত করা হচ্ছে তাতে আগামীতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে। 

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘নদী রক্ষা কমিটির সভা’য় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলি বলেন তিনি। 

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার এর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিচালক কে এম কাবিরুল ইসলাম।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, নদীর বালু কাটা, জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় দেওয়া সারা দেশের বাস্তবতা। এগুলো চলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, কারা নদী থেকে বালু কাটে তা আমরা জানি, এই সভাতেই তাদের দুই-একজন থাকতেও পারেন। তিনি বলেন, জরিমানা আদায় করে বালু কাটা বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য দায়ীদের ধরে ধরে জেল দিতে হবে।

ওই সভায় জেলা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বালু কাটার জন্য গত ছয় মাসে দুইশ অভিযান চালিয়ে মাত্র ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অথচ ওই সময়ে তারা একশ কোটি টাকার উপরে আয় করেছেন। তাদের কাছে জরিমানার এ টাকা কিছুই না। তাই জরিমানা নয় এখন থেকে জেল দিতে হবে। তবে শ্রমিকদের জেল দেওয়া যাবে না, জেল দিতে হবে মালিককে কিংবা যারা এর পিছনে রয়েছেন তাদেরকে। 

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নদী রক্ষা না হয়ে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই কুমার নদ দিয়ে যদি আমরা নৌপথে চলাচল করতে না পারি, জেলেরা যদি মাছ ধরার সুযোগ না পায়, কৃষক যদি সারা বছর সেচ সুবিধা না পায় তাহলে এত টাকা ব্যয় করে এ প্রকল্প আমরা কেন গ্রহণ করলাম। যে টাকা এর পিছনে খরচ হয়েছে তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশের শ্রমিকদের রক্ত ঘাম করা টাকা, রাষ্ট্রের টাকা। সেই টাকা এভাবে কেন অপচয় করা হল। 

ওই সভায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কুমার নদ খনন প্রকল্প গ্রহনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যাবতীয় যা কাজ হয়েছে, কত ঘনফুট মাটি কাটা হয়েছে, সে মাটি কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় বিক্রি করা হয়েছে, যারা কাজ পেয়েছেন তারা কিভাবে কাজ পেলেন, এ সব তথ্য নদী রক্ষা কমিশনে জমা দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কুমার নদের উপর কতগুলি সেতু কোন কোন বিভাগ নির্মান করেছে তার দৈর্ঘ্য প্রস্তসহ আনুসংগিক তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এ নদের পাড়ের বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এ নদীতে বর্জ্য ফেলে অপরাধ করছেন। পাশাপাশি ফরিদপুর পৌরসভার নর্দমার পানি এ নদে ফেলে পানি দূষিত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ নদী ও খালের কিংবা জলাধারের ইজারা দেন। এতে হয়তো সামান্য রাজস্ব আসে, কিন্তু এর জন্য নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে এবং আমরা অনেক বেশি ক্ষতি করে যাচ্ছি আগামী প্রজন্মের। 

সভায় অন্যদের মধ্যে ফরিদপুর নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার আশীক সাঈদ, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা, চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউসার, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, বিআইডব্লিউটিসির পরিবহন পরিদর্শক মো. সুজন মৃধা, শরীয়তুল্লা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য দেন। 

   


পাঠকের মন্তব্য